চাঁদপুরে কাগজে-কলমে মুক্তিযোদ্ধা স্বামীকে মৃত দেখিয়ে স্ত্রী দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ভাতা আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। সুজন তালুকদার নামের ওই জীবিত মুক্তিযোদ্ধাকে গৃহবন্দি করে খাটের সঙ্গে বেঁধে রাখেন তার স্ত্রী অসীমা। ঘটনাটি চাঁদপুর শহরের মিশন রোড এলাকার।

জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বৃহস্পতিবার বিকালে হতভাগা ওই মুক্তিযোদ্ধাকে মুক্ত করেন সদর ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত। এ সময় কৌশলে পালিয়ে গেছে প্রতারক স্ত্রী অসীমা।

অভিযানকালে ইউএনও'র সঙ্গে ছিলেন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা, মডেল থানার পুলিশ ও উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা।

চাঁদপুর সদরের ইউএনও সাখাওয়াত জামিল সৈকত বলেন, যেকোনো জাল কাগজপত্র দাখিল করা ফৌজদারি অপরাধ। ২০২০ সালে অসীমা তার স্বামীকে মৃত দেখিয়ে টাকা আত্মসাৎ করছেন। এ ধরনের জঘন্য কাজ প্রথমবার দেখলাম। তার বিরুদ্ধে আমরা আইনি প্রক্রিয়ায় যাবো।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার এসআই মজিবুর রহমান বলেন, ওই মুক্তিযোদ্ধাকে নিয়ে তার স্ত্রী যেন অন্যত্র চলে যেতে না পারে সেজন্য জিডি করা হয়েছে। অসীমাকে খুঁজছি আমরা।

এ বিষয়ে চাঁদপুর সোনালী ব্যাংক শাখার সিনিয়র কর্মকর্তা মাহবুব আলম বলেন, আমাদের এখানে সুজন তালুকদারসহ মোট ৩৯৫ জন মৃত মুক্তিযোদ্ধার ওয়ারিশরা নিয়মিত ভাতা তুলছেন। মাসে ২০ হাজার টাকা, দুই ঈদে ১০ হাজার করে ২০ হাজার টাকা ঈদ ভাতা এবং বৈশাখী ভাতা হিসেবে দুই হাজার টাকা প্রদান করা হচ্ছে।

তিনি আরও জানান, আমাদের এই শাখায় মোট মুক্তিযোদ্ধা ৭২৬ জন। এর মধ্যে জীবিত মুক্তিযোদ্ধা ৩৩১ জন। জীবিতদের বিজয় দিবসে ৫ হাজার টাকা করে দেয়া হয়। মৃত মুক্তিযোদ্ধাদের ওয়ারিশ বেশি হওয়ায় উপকারভোগী এখানে ৯৫৭ জন। তবে সুজন তালুকদারের অর্থ একমাত্র ওয়ারিশ হিসেবে তার স্ত্রী অসীমা তালুকদারই তুলছেন।

এদিকে সরকারি ওয়েব সাইটে বীর মুক্তিযোদ্ধা তথ্য ব্যবস্থাপনা সিস্টেমেও দেখা যায় সুজন তালুকদার মৃত। সেখানে তার মুক্তিযোদ্ধার নম্বর হচ্ছে ০১১৩০০০১৬০২ এবং বেসামরিক গেজেট ৫৫ এবং লাল মুক্তিবার্তা ০২০৫০১০২৭০। তার পিতা হচ্ছেন মৃত হরে কৃষ্ণ তালুকদার এবং ঠিকানা হচ্ছে গ্রাম ৬৬, মেথা রোড, চাঁদপুর সদর, চাঁদপুর।

সুজন তালুকদারের ভাতিজি বিপাশা তালুকদার বলেন, এখন ওনার সম্পত্তি আত্মসাৎ করতে কাকুকে নিয়ে চাঁদপুর ছেড়ে অন্যত্র যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন তিনি। পরকীয়াসহ নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়ায় তিনি এমন অমানবিক আচরণ করছেন কাকুর সঙ্গে।

সুজন তালুকদারের বৌদি কল্পনা তালুকদার বলেন, সুজনকে ঘরে গৃহবন্দি করে রাখে অসীমা। এসব অপকর্ম দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে সে। আমরা সুজনের নিরাপত্তা চাই। তার শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।

এ বিষয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন বলেন, প্রতারণার তথ্য যাচাই-বাছাই করে ভাতা বন্ধ করা হবে। আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।