ফেনীর মহিপালে জুলাইয়ের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে আওয়ামী ফ্যাসিস্টদের গুলিতে নিহত শহীদ ওয়াকিল আহমেদ শিহাব ও টমটম চালক মো. সবুজ হত্যা মামলায় আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে পুলিশ। এতে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম, ফেনীর পতিত গডফাদার নিজাম উদ্দিন হাজারী ও ১/১১ খলনায়ক লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরীসহ মোট ৩৭৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে।
বুধবার (১০ ডিসেম্বর) জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) নিশাত তাবাসসুম এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
আদালত সূত্রে জানা গেছে, ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলায় ২৫০ জন এবং সবুজ হত্যা মামলায় ১২৪ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তারা। আদালত আগামী ১৮ জানুয়ারি শিহাব হত্যা মামলা এবং আগামীকাল ১১ ডিসেম্বর সবুজ হত্যা মামলার চার্জশিট পর্যালোচনার জন্য দিন ধার্য করেছেন।
সবুজ হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মো. ফারুক মিয়া বলেন, ‘সবুজ হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ৬৫ জন ও তদন্তে নাম পাওয়া ৫৯ জনসহ মোট ১২৪ জনকে অভিযুক্ত করে মঙ্গলবার (৯ ডিসেম্বর) আদালতে চার্জশিট প্রদান করা হয়েছে। এ মামলায় এজাহারনামীয় ৫ জন ও সন্দেহভাজন ৩৯ জনসহ মোট ৪৪ জনকে ‘গ্রেপ্তার’ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৭ জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও কেউ আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেননি।’
অন্যদিকে ওয়াকিল আহমেদ শিহাব হত্যা মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফেনী মডেল থানার উপ-পরিদর্শক মোতাহের হোসেন বলেন, শিহাব হত্যা মামলায় এজাহারনামীয় ১৪৮ জন ও তদন্তে প্রাপ্ত ৯২ জনসহ মোট ২৫০ জনের নাম উল্লেখ করে গত ৮ ডিসেম্বর আদালতে চার্জশিট দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় এজাহারনামীয় ১৩ জন ও সন্দেহভাজন ৪৯ জনসহ মোট ৬১ জনকে ‘গ্রেফতার’ করা হয়েছে। মামলায় মেজবাহ উদ্দিন মেজু, এনামুল হকসহ ছয়জনকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে নবী মেম্বার ও ওসমান গণি লিটন হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন।
তিনি আরো জানান, ঘটনায় সম্পৃক্ততা না থাকায় এ মামলায় তিনজনকে চার্জশিট থেকে বাদ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে একজনের নাম-ঠিকানা মিল পাওয়া যায়নি।
মামলার নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, ২০২৪ সালের ৪ আগস্ট মহিপালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের নির্বিচারে ছোঁড়া গুলিতে প্রাণ হারান ওয়াকিল আহমেদ শিহাব ও টমটম চালক মো. সবুজ।
এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২০ আগস্ট নিহত শিহাবের মা মাহফুজা আক্তার বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় ১/১১ খলনায়ক লে. জেনারেল (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার সাবেক প্রটোকল অফিসার আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী নাসিম ও ফেনীর পতিত গডফাদার নিজাম উদ্দিন হাজারীসহ ১৫১ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। এছাড়া আরও ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়। নিহত শিহাব ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের কাশিমপুর এলাকার বাসিন্দা ছিলেন।
অপরদিকে, একই বছরের ১৩ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা দাবিতে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ফেনীর মহিপালে নিহত সবুজের ভাই মো. ইউছুপ বাদী হয়ে ফেনী মডেল থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে জেলার পতিত গডফাদার নিজাম উদ্দিন হাজারী, তার সেকেন্ড ইন কমান্ড শুসেন চন্দ্র শীল, স্বপন মিয়াজীসহ ৬৫ জনের নাম উল্লেখ ও ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
প্রসঙ্গত, ২৪'র ৪ আগস্ট ফেনীর মহিপালে ছাত্র-জনতার অবস্থা কর্মসূচীতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ২৪টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৭টি হত্যা এবং ১৭টি হত্যাচেষ্টা ও সহিংসতার মামলা ।

