হাসিনার ২ দিন আগে ৫০ লাখ টাকা নিয়ে পালান আবছার

উপজেলা প্রতিনিধি, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম)
প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৪: ৪৯
আপডেট : ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৫৪

হাসিনা ভারতে পালানোর দুদিন আগে ৩ আগস্ট ঠিকাদারদের সড়কের কাজের বিলের ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন সাংবাদিক পরিচয়দানকারী দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি নুরুল আবছার তালুকদার।

বিজ্ঞাপন

দক্ষিণ জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি আবছার তালুকদার উপজেলা পিআইও অফিসের সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের কোটায় আসা বরাদ্দ ঠিকাদারদের মাঝে বণ্টন ও বিল পরিশোধের বিষয়টি দেখাশোনা করতেন। আবছার জাবেদের এপিএস সায়েমের খুব কাছের লোক ছিলেন। তিনি নিজেকে দৈনিক ইনকিলাবের আনোয়ারা প্রতিনিধি পরিচয় দিতেন। সে সময় তার কথার বাইরে প্রেসক্লাবের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া যেত না। যারা কথা শুনত না তাদের বিএনপি-জামায়াত ট্যাগ দিতো।

তার হাত দিয়ে উপজেলা পিআইও অফিসের কোটি কোটি টাকা লেনদেন হতো। আগেভাগে টিকাদারদের কাছ থেকে বিলে স্বাক্ষর নিয়ে টাকাগুলো ব্যাংক থেকে তুলে তার কাছে রেখে দিতেন। পরে তার নিজস্ব কমিশন, পিআইও অফিসের কমিশন, ভূমিমন্ত্রীর কমিশন, এপিএস সায়েমের কমিশন কেটে রেখে বাকি টাকা ঠিকাদারর বিল বাবদ পরিশোধ করতেন। এখানে তার ওপর কেউ কথা বলার সাহস পেতো না। পিআইও অফিসের সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বরাদ্দের কমিশন বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন তিনি। চট্টগ্রাম শহরে তার রয়েছে ২০টি সিএনজি অটোরিকশা। নামে বেনামে রয়েছে বিভিন্ন স্থানে প্লট, ফ্ল্যাট।

উপজেলা পিআইও অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের সাবেক ভূমিমন্ত্রী জাবেদের কোটায় কাজের বিনিময়ে খাদ্য (কাবিখা) ৫৮ টন চাল ও ৩৮ টন গম বরাদ্দ ছিল। যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ লক্ষ টাকা। পিআইও অফিস এসব কাজ নয়জনকে ভাগ করে দেয়। তারা মাটি ভরাট ও সড়ক পাকাকরণের কাজ করেন।

সর্বশেষ বরাদ্দের ৩৫ লাখ টাকা ও আরো বেশ কয়েকজনের আগের বরাদ্দের ১৫ লক্ষ টাকাসহ ৫০ লক্ষ টাকা নিয়ে পালিয়েছে এই আবছার তালুকদার।

২৪ জুলাইয়ে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন যখন তুঙ্গে তখন এই আবছার বুঝতে পারে এই সরকার আর টিকবে না। তখন সে ফন্দি করতে থাকে ঠিকাদারদের টাকাগুলো মেরে দেয়ার। আগে থেকে ঠিকাদারদের কাছ থেকে বিলে সই নিয়ে নেয় আবছার। পরে হাসিনা ভারতে পালানোর দুই দিন আগে অর্থাৎ ৩ আগস্ট টাকাগুলো নিয়ে তিনি আত্মগোপনে চলে যান। পরে তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি।

এদিকে যেসব ঠিকাদারের নামে বিল উঠানো হয়েছে তাদের বারবার কাজ সম্পাদন করার জন্য চিঠি দিতে থাকে পিআইও অফিস। পরে কোনো উপায় না দেখে নিজেদের টাকা দিয়ে তারা কাজ সম্পাদন করে দেন। অনেকে স্ত্রীর গয়না বিক্রি করে সড়কের কাজ করে দেন।

তিনি যাদের টাকা মেরে দিয়েছেন তারা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা। এর মধ্যে রয়েছেন আনোয়ারা সদর ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহেদ, বটতলী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শাহাবুদ্দিন, বারশত ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিজ, জুঁইদন্ডী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জসীমসহ ১১ ইউনিয়নের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন ইউনিয়নের ইউপি সদস্যরা। তারা এখন নুরুল আবছারকে ধরিয়ে দিতে ৫ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করেছেন। গুঞ্জন রয়েছে, আনোয়ারায় কর্মরত কয়েকজন সাংবাদিকের সাথে তার এখনো ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। তাদের জন্য প্রতি মাসে নাকি খরচও পাঠানো হয়।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিনা আকতার বলেন, এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত