দুই বছর আগে গণপূর্ত অধিদপ্তর জরাজীর্ণ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করলেও মৃত্যুর ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত সেখানে অফিসিয়াল কাজ করছে ফরিদগঞ্জ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা। এই ভবনের বিভিন্ন স্থান থেকে খসে পড়ছে পলেস্তারা। দোতলা এই ভবনের প্রতিটি কক্ষই মনে হয় একটি মৃত্যুকূপ। সর্বশেষ শুক্রবার (২১ নভেম্বর) হওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পে ভবনের কয়েকটি স্থানের পলেস্তারা ব্যাপকভাবে খসে পড়েছে। পিলার ও ভিমে দেখা দিয়েছে ভয়ংকর ফাটল। ভবনটি ধসে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
১৯৬৯ সালে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি অফিসের দ্বিতল এ ভবনটি নির্মাণের পর বড় ধরনের কোনো মেরামতকাজ হয়নি। অতি গুরুত্বপূর্ণ রেকর্ডরুমে অল্প বৃষ্টিতেই ছাদ চুইয়ে পানি পড়ে। ফলে গুরুত্বপূর্ণ দলিল, নথিপত্রগুলো ভিজে বিনষ্ট হয়ে বেকায়দায় পড়তে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ও লোকজনকে। ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী বসার কক্ষগুলোও কাজ করার অযোগ্য। সাবরেজিস্ট্রারের কক্ষটির ছাদের পলেস্তারাও উঠে রড বের হয়ে গেছে। প্রতিনিয়ত খসে পড়ছে পলেস্তারা, কখনো দলিলের ওপর, কখনো কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মাথায়। যেকোনো মুহূর্তে ছাদ ধসে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দোতলায় সাবরেজিস্ট্রারের বিশ্রাম কক্ষ, রান্নাঘরসহ সকল কক্ষের অবস্থা আরো ভয়াবহ।
নকলনবিশ ফারহানা আক্তার, সাইফুল ইসলাম বলেন, শুক্রবারের ভূমিকম্পে কয়েকটি কক্ষের পলেস্তারা ব্যাপকভাবে খসে পড়েছে। রোববার (২৩ নভেম্বর ২০২৫) অফিস শুরু হওয়ার পর তারা এটা দেখতে পান। এতে তারা চরম আতঙ্কে রয়েছেন। সামনে আরো ভয়াবহ ভূমিকম্প হওয়ার কথা আশঙ্কা আছে বলে জানতে পেরেছি। কখন কী হয় বলতে পারছি না। মৃত্যুঝুঁকি নিয়েই কাজ করে চলছি।
নকলনবিশ নাসরিন আক্তার বলেন, বছরখানেক আগে আমি অফিসে বসে কাজ করছিলাম, হঠাৎ মাথায় পলেস্তারা পড়ে আহত হয়েছি। সেই থেকে অফিসে কাজ করার সময় মৃত্যুভয় কাজ করছে।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সালাহউদ্দিন জানান, সাবরেজিস্ট্রি অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ছাড়াও শতাধিক দলিল লেখকসহ শত শত মানুষের ভিড় হয় এই এই অফিস ঘিরে। ভবনের যেই অবস্থা, দুর্ঘটনা ঘটলে প্রাণহানির সম্ভাবনা থেকেই যাচ্ছে। আমরা চাই কর্তৃপক্ষ দ্রুত অফিস স্থানান্তর করুক। নতুন ভবন নির্মাণ শুরু করুক।
উপজেলা সাবরেজিস্ট্রার মো.তানভীর আলম বলেন, গণপূর্ত বিভাগ ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছে। অফিসে স্থানান্তর আদেশ ও নতুন ভবনের কার্যক্রম শুরু না হওয়ায় পরিত্যক্ত ভবনেই চলছে কার্যক্রম। আগের কর্মকর্তারাও এভাবেই কাজ করে গেছেন। বর্তমানে অফিসের সবাই ভূমিকম্প আতঙ্কে রয়েছে।

