প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারের ওপারে বিস্ফোরিত মর্টারশেল ও গোলাগুলির বিকট শব্দে কাঁপছে বাংলাদেশের এপারের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ ও উখিয়া এবং পার্বত্য বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্ত এলাকা।
মিয়ানমারে চলমান সংঘাতে ছোঁড়া গুলি এসে পড়ছে এপারের সীমান্তবর্তী বসতঘরের টিনের চালায়। সেই গুলি চাল ভেদ করে ঘরের ভেতরে এসেও পড়ছে। টেকনাফের নাফ নদীতে মর্টারশেল পড়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলীও উঠতে দেখা গেছে। এতে আবারও পুরো সীমান্তজুড়ে চরম আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
শনিবার ভোররাত থেকে সকাল পর্যন্ত টানা প্রায় চার ঘণ্টা ধরে টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকা বরাবর মিয়ানমারের ওপারে থেমে থেমে এই গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। সীমান্তবর্তী বাংলাদেশি গ্রামগুলোর একাধিক প্রত্যক্ষদর্শী এমন তথ্যই জানিয়েছেন।
টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়নের দুই নাম্বার ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য সিরাজুল মোস্তফা লালু সাংবাদিকদের জানান, ভোর থেকে সকাল পর্যন্ত হোয়াইক্যং সীমান্তবর্তী এলাকায় একের পর এক মর্টারশেল বিস্ফোরণ ও গোলাগুলির শব্দে স্থানীয় অধিবাসীদের বাড়িঘর কেঁপে উঠেছে। এতে সীমান্তবাসী সাধারণ মানুষের মাঝে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এই জনপ্রতিনিধি দাবি করেন, হোয়াইক্যং সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতর থেকে মর্টারশেল নিক্ষেপ এবং গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে।
তার মতে, গোলাগুলির সময় হোয়াইক্যং বাজার সংলগ্ন মোহাম্মদ হোসেন ও আব্দুল কুদ্দুসের বাড়ি এবং বালুখালী গ্রামের সরওয়ার আলমের বসতঘরে কয়েকটি গুলি এসে পড়েছে। এছাড়াও উত্তর পাড়া সংলগ্ন নাফ নদীতে একটি মর্টারশেল বিস্ফোরিত হয়ে ধোঁয়ার কুণ্ডলী উঠতেও দেখা গেছে।
মিয়ানমার থেকে গুলি এসে পড়া বাড়ির মালিক মোহাম্মদ হোসেনের ছেলে নুরুল আবছার জানান, ভোর থেকে মিয়ানমার সীমান্তের ওপারে প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ হচ্ছিল। এই শব্দের মধ্যেই আমাদের ঘরের টিনে পরপর দুটি গুলি এসে লাগে। তখন আমরা সবাই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।
তার মতে, সকাল ৮টা পর্যন্ত গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। ফায়ারের সময় পুরো বাড়ি কেঁপে কেঁপে উঠছিল বলে দাবি তার।
আরেক ভুক্তভোগী বালুখালীর সরওয়ার আলম সাংবাদিকদের বলেন, গোলাগুলি শুরু হলে সন্তানদের নিয়ে আমরা ঘরের ভেতরে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিই। গুলির বিকট শব্দে আমরা ভয়ে কাঁপছিলাম। গোলাগুলির একপর্যায়ে একটি গুলি টিনের ছাউনি ভেদ করে ঘরের ভেতরে এসে পড়ে বলেও দাবি তার।
উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১১ ডিসেম্বর রাত থেকে সীমান্তের রহমতের বিল ও ধামনখালী পয়েন্টের মিয়ানমার অংশে গোলাগুলি হচ্ছে। সেদেশের বিদ্রোহী সশস্ত্র সংগঠন আরাকান আর্মি ও রোহিঙ্গা সশস্ত্র গোষ্ঠীর সাথে সংঘর্ষ চলছে।
টেকনাফের হোয়াইক্যং পুলিশ ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ইনচার্জ) উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোকন কান্তি রুদ্র বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, শনিবার ভোর থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত মিয়ানমার সীমান্তের ওপার থেকে প্রচুর গোলাগুলির শব্দ এপারে ভেসে এসেছে। কয়েকটি বাড়িতে গুলি পড়ার খবরও পাওয়া গেছে।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন বলেও জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।
প্রসঙ্গত, ইতোপূর্বে গত ৯ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে টেকনাফের হোয়াইক্যং ইউনিয়নের লম্বাবিল এলাকায় শাহ আলমের বসতবাড়ির শয়নকক্ষে মিয়ানমার থেকে ছোঁড়া একটি গুলি এসে পড়েছিল। ওই ঘটনায় পরিবারটির সদস্যরা অল্পের জন্য দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেয়েছিলেন।

