ট্যারিফ বাড়ানো নিয়ে অফডক আর বন্দর ব্যবহারকারীরা মুখোমুখি

বন্দর কতৃপক্ষের হস্তক্ষেপ চান ব্যবসায়ী নেতারা

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ০৯

হঠাৎ ট্যারিফ বাড়ানো নিয়ে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছে বেসরকারি কন্টেইনার মালিকদের সংগঠন বিকডা আর তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ও শিপিং এজেন্ট নেতারা। আগামী ১ সেপ্টেম্বর থেকে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ৩০ থেকে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত চার্জ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে বিকডা। সংগঠনটির দাবে বিভিন্ন খাতে খরচ বৃদ্ধি পাওয়াসহ ডলারের বিপরীতে টাকার দাম কমে যাওয়ায় ট্যারিফ বাড়ানোর বিকল্প তাদের হাতে নেই। আর বন্দর ব্যবহারকারীরা বলছেন, আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের মন্দাভাব চলছে। এই মুহূর্তে একসঙ্গে ৬৩ শতাংশ বাড়তি চার্জ পরিশোধ করার সক্ষমতা তাদের নেই। ব্যবসায়ী নেতারা বলছেন, এমনিতেই গত এক বছর ধরেই নানান ইস্যুতে কয়েক দফায় হোঁচট খেয়েছে দেশের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য। এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে আরেক দফায় অস্থিরতা তৈরি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জাতীয় অর্থনীতি। তাই সময় থাকতেই বন্দরের উচিত উভয়পক্ষকে নিয়ে আলোচনায় বসে সমস্যার সমাধান করা।

বিজ্ঞাপন

চট্টগ্রাম বন্দরের আশে পাশে গড়ে ওঠা ২১ টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো বন্দরের অপারেশনাল কাজ স্বাভাবিক রাখতে কাজ করছে দীর্ঘদিন ধরে। শতভাগ রপ্তানিপণ্যবাহী কন্টেইনারের পাশাপাশি ৬৪ ক্যাটাগরির আমদানি পণ্যবাহী কন্টেইনারও হ্যান্ডলিং করে তারা। কন্টেইনার স্টাফিং, গ্রাউন্ট রেন্ট, লিফট অফ-লিফট অন, ডকুমেন্টশন এবং বন্দর থেকে অফডক আর অফডক থেকে বন্দর ও জাহাজীকরণের কাজ করে অফডক কর্তৃপক্ষ। ২০ ফিটের একটি পণ্য ভর্তি কন্টেইনার স্টাফিং করতে বর্তমানে খরচ হচ্ছে ৬ হাজার ১৮৭ টাকা। আগামী ১ লা সেপ্টেম্বর থেকে এই খরচ বেড়ে দাঁড়াবে ৯ হাজার ৯ শো টাকা। ৪০ ফিট কন্টেইনারের ক্ষেত্রে ৮ হাজার ২৫০ টাকা খরচ হলেও এখন থেকে গুনতে হবে ১৩ হাজার ২ শো টাকা পর্যন্ত। এভাবে নতুন নির্ধারিত ট্যারিফ অনুযায়ী বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে সেবার চার্জ ৩০০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়ছে। শতাংশের হিসেবে যা ৩০ থেকে ৬৩ শতাংশ পর্যন্ত দাঁড়িয়েছে।

অফডক সূত্র জানায়, সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ৭ লাখ ৭৭ হাজার রপ্তানি এবং ২ লাখ ৬৫ হাজার আমদানি কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে বেসরকারি অফ ডকগুলোতে। নতুন ট্যারিফ কার্যকর হলে বছরে খরচ বাড়বে অন্তত এক হাজার কোটি টাকা।

অফডক কর্তৃপক্ষের সবচেয়ে বড় গ্রাহক বিজিএমইএ বলছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকেই নানান কারণে মন্দাভাব রয়েছে রপ্তানি বাণিজ্যে। তবে ট্রাম্পের পাল্টা শুল্কনীতিতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থানে থাকায় আগামী দিনগুলোতে ভালো সময় আসার সম্ভাবনা উকি দিচ্ছে। লোকসান কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর সময়ে অফডক চার্জের এই বাড়তি চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়বে। সংগঠনটির সাবেক সহ সভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী জানান, অফডক কর্তৃপক্ষ কারোর সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফা ভাবে চার্জ বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। এটা আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। মূলত এই মুহূর্তে বাড়তি চার্জের চাপ সামলানোর মতো অবস্থায় তৈরি পোশাক শিল্পখাত নেই। এই ইস্যুতে এক দিনের জন্য অস্থিরতা তৈরি হলে তা হবে দু:খজনক। ইতিমধ্যে বিজিএমইএর পক্ষ থেকে বর্ধিত চার্জ কার্যকর না করতে চিঠি দেয়া হয়েছে। তাই এখনো সময় আছে সব স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌক্তিকভাবে চার্জ বাড়ানোর উদ্যোগ নিলে ইতিবাচক হতো।

অপডকের আরেকটি স্টেকহোল্ডার শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি সৈয়দ মোহাম্মদ আরিফ জানান, বন্দর সংশ্লিষ্ট যে কোন প্রতিষ্ঠান চার্জ নির্ধারণের জন্য একটি বোর্ড আছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা না করে হঠাৎ এমন সিদ্ধন্ত অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক নয়। কিছু দিন আগে কোন ঘোষণা না দিয়ে বার্থ অপারেটররা চার্জ বাড়িয়ে দিয়েছে। বন্দরও তাদের চার্জ বাড়াবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। অফডকও আগামী মাস থেকে কার্যকর করতে চাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হবার শঙ্কা রয়েছে বলে জানান তিনি।

বিকডার সেক্রেটারি রুহুল আমিন শিকদার জানান, ২০২১ সালে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় একবার চার্জ সমন্বয় করা হয়েছিল। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে কোনো চার্জ বাড়ানো হয়নি। অথচ অফডক পরিচালনার বিভিন্ন ধাপে ধাপে খরচ বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে। সর্বশেষ ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমে যাওয়ায় চার্জ বাড়ানোর বিকল্প তাদের হাতে নেই।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক পরিচালক, মাহফুজুল হক শাহ জানান, চার্জ বাড়ানোর অনেক যুক্তি থাকতে পারে কিন্তু তার সঠিক সময় নির্ধারণ ও বর্ধিত চার্জের হার নিয়ে আলোচনা হতে পারে। আর এই আলোচনার উদ্যোগ বন্দরকে নেয়া উচিত। কারণ সবগুলো প্রতিষ্ঠানই বন্দরের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। এই ইস্যুতে উভয়পক্ষের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বন্দরের স্বাভাবিক কার্যক্রম। তাই বন্দরকে উদ্যোগ নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে সমন্ময় করা উচিৎ।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুখ জানান, সবগুলো প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র। অফডক তাদের যুক্তিগুলো লিখিতভাবে জানিয়েছে। বিজিএমইএ ও শিপিং এজেন্টসহ একাধিক স্টেকহোল্ডাররা ও চার্জ না বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি দিয়ে চিঠি দিয়েছে বন্দরকে। উভয়পক্ষকে আলোচনার টেবিলে বসে সমাধান করতে হবে। সবপক্ষ চাইলে বন্দর মধ্যস্থতা করতে পারে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত