জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রাম শহরে গত দেড় যুগে উন্মুক্ত নালা ও খালে পড়ে অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু। নির্মাণ বা সংস্কারকাজে নিছক অবহেলায় এভাবেই অসংখ্য পরিবার হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে একটি মামলারও বিচার হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ তদন্ত না করে অপমৃত্যু হিসেবে থানায় রেকর্ড করেছে।
চট্টগ্রামের ১৬ থানা, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০২৫ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা নালায় পড়ে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় হিজরা খালে পড়ে নিখোঁজ হওয়া শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
উন্মুক্ত নালা ও খালে ৩২ জনের মৃত্যতে শুধু দুটি ঘটনা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও বাকি ৩০টি ঘটনার কোনো তদন্তই হয়নি। সবকটি অপমৃত্যু হিসেবে থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে এসব ঘটনায় এলাকাবাসী নিরাপত্তাব্যবস্থার দাবি তুললেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
অপমৃত্যুতে পুলিশের দায় শেষ
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০৮ সালে বাকলিয়া এলাকায় সাত বছর বয়সি সোহেল খালে পড়ে মারা যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও পুলিশ কোনো এফআইআর নেয়নি এবং মামলা অগ্রগতি ছাড়া থেমে গেছে। ২০১০ সালে পাহাড়তলী এলাকায় ১৫ বছর বয়সি ফারহানা একটি উন্মুক্ত ড্রেনে পড়ে গিয়ে মারা গেলে পুলিশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে জিডি করে, কিন্তু পরে কোনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি।
২০১৭ সালের ৩ জুলাই চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় ঘটে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাওয়ার সময় খোলা নালায় পড়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশন বা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) শুধু দুঃখ প্রকাশ করেই দায় শেষ করে। এ ঘটনায় কোনো তদন্ত হয়নি, কিংবা দায়ী কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
এর ঠিক এক বছর পর ২০১৮ সালের ৯ জুন আমিন জুটমিল এলাকায় সাাত বছর বয়সি শিশু আল-আমিন খেলতে গিয়ে উন্মুক্ত খালে পড়ে মারা যায়।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকায় সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ খালে পড়ে নিখোঁজ হন। তার লাশ এখনো নিখোঁজ রয়ে গেছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে দায়ী করেছিল। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতে গেলেও সেখানে থেমে গেছে বিচারিক কার্যক্রম।
সালেহ আহমেদের মৃত্যুর পর তার পরিবার এখনো বিচার চেয়ে অপেক্ষায় আছে। ছেলে সাদেকুল্লাহ মহিম আমার দেশকে বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের অফিস সিডিএ বা সিটি করপোরেশনকে দায়ী করলেও কারো বিচার হয়নি। আমাদের পরিবার শুধু একজন প্রিয় মানুষ হারায়নি, আমরা বিচারহীনতার এক নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্যেও পড়ে গেছি। খোলা নালা রেখে যারা কাজ করছে, তাদের বিচার হওয়া অবশ্যই উচিত।
মহিম আরো বলেন, সরকারি কাগজে বলা হয় আমার বাবা নিখোঁজ। কিন্তু আমরা জানি, তিনি স্রোতে ভেসে গিয়েছিলেন ওই খোলা ড্রেনের কারণে। তারা শুধু একটুকু দুঃখ প্রকাশ করেছে আর কিছুই নয়।
শাস্তি হলে আর কোনো বাবা-মাকে কাঁদতে হতো না
২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহরিন মাহমুদ সাদিয়া আগ্রাবাদ এলাকায় রিকশা থেকে উন্মুক্ত নালায় পড়ে স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় চাপের মুখে যথারীতি সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে দায়ী করে। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হইনি। অবহেলাজনিত প্রাণহানির ঘটনায় এখনো বিচার চান বাবা মো. আলী। তিনি বলেন, ‘সেদিন যদি নালাটায় ঢাকনা থাকত, আমার মেয়ে হয়তো আজও বেঁচে থাকত।’
২০২৩ সালের ৭ আগস্ট হাটহাজারী সরকারি কলেজের ছাত্রী নিপা পালিত দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় হাঁটতে গিয়ে খোলা নালায় পড়ে মারা যান। নিপার মৃত্যুর সময় এলাকায় তীব্র বৃষ্টি হচ্ছিল এবং ড্রেনটি পানি দিয়ে উপচে উঠেছিল, ফলে খোলা নালার অবস্থান বোঝা যায়নি। এক তরুণ শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যুতে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করলেও প্রশাসন সাময়িক প্রতিক্রিয়া দিয়েই চুপ হয়ে যায়।
আরো করুণ একটি ঘটনা ঘটে একই বছরের ২৮ আগস্ট। মাত্র ১৮ মাস বয়সি শিশু ইয়াছিন আরাফাত খেলতে খেলতে আগ্রাবাদ রঙ্গিপাড়া এলাকার একটি খোলা নালায় পড়ে মারা যায়।
এমন অন্তত ১০টি ঘটনার মধ্যে দুজনের লাশও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। গত দেড় যুগের ১৮টি ঘটনায় পুলিশ কোনো এফআইআর তো নেয়নি, ১০টির বেশি ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা বদলি বা গাফিলতির কারণে অনুসন্ধান বন্ধ হয়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘অজ্ঞাতনামা’ মন্তব্য করে মামলাকে ফাইলবন্দি করে দেওয়া হয়েছে। অবহেলার অভিযোগ থাকলেও সিটি করপোরেশন, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ময়নাতদন্ত অসম্পূর্ণ, দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানো হয়
যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে, তখনই চসিক ও সিডিএ দায় এড়িয়ে চলে। অথচ তাদের কর্তৃক নিযুক্ত ঠিকাদাররা কাজ করার সময় যে কোনো প্রকল্পে নালা বা খাল খুঁড়ে খোলা রাখছে। সেই খোলা নালা বা খালে পড়ে মৃত্যু হচ্ছে বারবার। মৃত্যু হওয়ার পর দেখা যায়, কারো ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না। ময়নাতদন্তে এগুলোকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে রেকর্ড করা হয়। তারপর ওই মৃত্যর অভিযোগ বা জিডি সেখানেই সমাপ্ত করতে হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (পিআর) মাহমুদা বেগম আমার দেশকে বলেন, ‘খোলা নালা বা খালে পড়ে কারো মৃত্যু হলে, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে, আমরা আমলে নিই। তারপর আমাদের অপেক্ষা করতে হয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য। ময়নাতদন্তে যদি দুর্ঘটনা থাকে, তাহলে আমাদের আর কিছু করার থাকে না।’
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
উন্মুক্ত নালা ও খালে বারবার মৃত্যুর বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘হিজরা খালের তদারকি করছিল সিডিএ। আগে সেখানে প্রতিবন্ধকতা ছিল। সিডিএ কাজ করার সময় সেটি তুলে ফেলে। আমাদের আওতাধীন নালায় প্রকৌশলী নিয়োগ করেছি, তারা প্রত্যেকটি জায়গায় পরিদর্শন করেছেন। যেখানে প্রতিবন্ধক নেই, সেখানে তা দেওয়া হচ্ছে।
ডা. শাহাদাত হোসেন আরো বলেন, ‘আগে সমন্বয় ছিল না। এখন আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। দ্রুত কাজ চলছে। নগরবাসী ভালো একটি কাজ দেখতে পাবে।’
চট্টগ্রাম শহরে গত দেড় যুগে উন্মুক্ত নালা ও খালে পড়ে অন্তত ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি শিশু। নির্মাণ বা সংস্কারকাজে নিছক অবহেলায় এভাবেই অসংখ্য পরিবার হারিয়েছেন তাদের প্রিয়জন। কিন্তু এই দীর্ঘ সময়ে একটি মামলারও বিচার হয়নি। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধেও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অনেক ক্ষেত্রেই পুলিশ তদন্ত না করে অপমৃত্যু হিসেবে থানায় রেকর্ড করেছে।
চট্টগ্রামের ১৬ থানা, ফায়ার সার্ভিস ও স্থানীয় সূত্রে প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০০৮ থেকে ২০২৫ সালের ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত খোলা নালায় পড়ে ৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। সর্বশেষ গতকাল শনিবার চকবাজারের কাপাসগোলা এলাকায় হিজরা খালে পড়ে নিখোঁজ হওয়া শিশুটির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।
উন্মুক্ত নালা ও খালে ৩২ জনের মৃত্যতে শুধু দুটি ঘটনা উচ্চ আদালত পর্যন্ত গেলেও বাকি ৩০টি ঘটনার কোনো তদন্তই হয়নি। সবকটি অপমৃত্যু হিসেবে থানায় রেকর্ড করা হয়েছে। অন্যদিকে এসব ঘটনায় এলাকাবাসী নিরাপত্তাব্যবস্থার দাবি তুললেও কর্তৃপক্ষের টনক নড়েনি।
অপমৃত্যুতে পুলিশের দায় শেষ
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ২০০৮ সালে বাকলিয়া এলাকায় সাত বছর বয়সি সোহেল খালে পড়ে মারা যায়। পরিবারের পক্ষ থেকে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হলেও পুলিশ কোনো এফআইআর নেয়নি এবং মামলা অগ্রগতি ছাড়া থেমে গেছে। ২০১০ সালে পাহাড়তলী এলাকায় ১৫ বছর বয়সি ফারহানা একটি উন্মুক্ত ড্রেনে পড়ে গিয়ে মারা গেলে পুলিশ অজ্ঞাতনামা হিসেবে জিডি করে, কিন্তু পরে কোনো অনুসন্ধান চালানো হয়নি।
২০১৭ সালের ৩ জুলাই চট্টগ্রামের বাকলিয়া এলাকায় ঘটে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। সাবেক সরকারি কর্মকর্তা শীলব্রত বড়ুয়া বৃষ্টির মধ্যে হেঁটে যাওয়ার সময় খোলা নালায় পড়ে মারা যান। তার মৃত্যুর পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সিটি করপোরেশন বা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) শুধু দুঃখ প্রকাশ করেই দায় শেষ করে। এ ঘটনায় কোনো তদন্ত হয়নি, কিংবা দায়ী কাউকে বিচারের আওতায় আনা হয়নি।
এর ঠিক এক বছর পর ২০১৮ সালের ৯ জুন আমিন জুটমিল এলাকায় সাাত বছর বয়সি শিশু আল-আমিন খেলতে গিয়ে উন্মুক্ত খালে পড়ে মারা যায়।
২০২১ সালের ২৫ আগস্ট মুরাদপুর এলাকায় সবজি বিক্রেতা সালেহ আহমেদ খালে পড়ে নিখোঁজ হন। তার লাশ এখনো নিখোঁজ রয়ে গেছে। এ ঘটনায় বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনে সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে দায়ী করেছিল। পরবর্তী সময়ে উচ্চ আদালতে গেলেও সেখানে থেমে গেছে বিচারিক কার্যক্রম।
সালেহ আহমেদের মৃত্যুর পর তার পরিবার এখনো বিচার চেয়ে অপেক্ষায় আছে। ছেলে সাদেকুল্লাহ মহিম আমার দেশকে বলেন, বিভাগীয় কমিশনারের অফিস সিডিএ বা সিটি করপোরেশনকে দায়ী করলেও কারো বিচার হয়নি। আমাদের পরিবার শুধু একজন প্রিয় মানুষ হারায়নি, আমরা বিচারহীনতার এক নির্মম অভিজ্ঞতার মধ্যেও পড়ে গেছি। খোলা নালা রেখে যারা কাজ করছে, তাদের বিচার হওয়া অবশ্যই উচিত।
মহিম আরো বলেন, সরকারি কাগজে বলা হয় আমার বাবা নিখোঁজ। কিন্তু আমরা জানি, তিনি স্রোতে ভেসে গিয়েছিলেন ওই খোলা ড্রেনের কারণে। তারা শুধু একটুকু দুঃখ প্রকাশ করেছে আর কিছুই নয়।
শাস্তি হলে আর কোনো বাবা-মাকে কাঁদতে হতো না
২০২১ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সেহরিন মাহমুদ সাদিয়া আগ্রাবাদ এলাকায় রিকশা থেকে উন্মুক্ত নালায় পড়ে স্রোতের তোড়ে নিখোঁজ হন। দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর তার লাশ উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় চাপের মুখে যথারীতি সিটি করপোরেশন ও সিডিএকে দায়ী করে। কিন্তু দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হইনি। অবহেলাজনিত প্রাণহানির ঘটনায় এখনো বিচার চান বাবা মো. আলী। তিনি বলেন, ‘সেদিন যদি নালাটায় ঢাকনা থাকত, আমার মেয়ে হয়তো আজও বেঁচে থাকত।’
২০২৩ সালের ৭ আগস্ট হাটহাজারী সরকারি কলেজের ছাত্রী নিপা পালিত দক্ষিণ পাহাড়তলী এলাকায় হাঁটতে গিয়ে খোলা নালায় পড়ে মারা যান। নিপার মৃত্যুর সময় এলাকায় তীব্র বৃষ্টি হচ্ছিল এবং ড্রেনটি পানি দিয়ে উপচে উঠেছিল, ফলে খোলা নালার অবস্থান বোঝা যায়নি। এক তরুণ শিক্ষার্থীর এমন মৃত্যুতে স্থানীয় বাসিন্দারা রাস্তা অবরোধ করলেও প্রশাসন সাময়িক প্রতিক্রিয়া দিয়েই চুপ হয়ে যায়।
আরো করুণ একটি ঘটনা ঘটে একই বছরের ২৮ আগস্ট। মাত্র ১৮ মাস বয়সি শিশু ইয়াছিন আরাফাত খেলতে খেলতে আগ্রাবাদ রঙ্গিপাড়া এলাকার একটি খোলা নালায় পড়ে মারা যায়।
এমন অন্তত ১০টি ঘটনার মধ্যে দুজনের লাশও পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। গত দেড় যুগের ১৮টি ঘটনায় পুলিশ কোনো এফআইআর তো নেয়নি, ১০টির বেশি ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা বদলি বা গাফিলতির কারণে অনুসন্ধান বন্ধ হয়ে গেছে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ‘অজ্ঞাতনামা’ মন্তব্য করে মামলাকে ফাইলবন্দি করে দেওয়া হয়েছে। অবহেলার অভিযোগ থাকলেও সিটি করপোরেশন, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনে দায়মুক্তির সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
ময়নাতদন্ত অসম্পূর্ণ, দুর্ঘটনা বলে দায় এড়ানো হয়
যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটছে, তখনই চসিক ও সিডিএ দায় এড়িয়ে চলে। অথচ তাদের কর্তৃক নিযুক্ত ঠিকাদাররা কাজ করার সময় যে কোনো প্রকল্পে নালা বা খাল খুঁড়ে খোলা রাখছে। সেই খোলা নালা বা খালে পড়ে মৃত্যু হচ্ছে বারবার। মৃত্যু হওয়ার পর দেখা যায়, কারো ময়নাতদন্ত প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ হয় না। ময়নাতদন্তে এগুলোকে ‘দুর্ঘটনা’ হিসেবে রেকর্ড করা হয়। তারপর ওই মৃত্যর অভিযোগ বা জিডি সেখানেই সমাপ্ত করতে হয়।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (পিআর) মাহমুদা বেগম আমার দেশকে বলেন, ‘খোলা নালা বা খালে পড়ে কারো মৃত্যু হলে, পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ দিলে, আমরা আমলে নিই। তারপর আমাদের অপেক্ষা করতে হয় ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের জন্য। ময়নাতদন্তে যদি দুর্ঘটনা থাকে, তাহলে আমাদের আর কিছু করার থাকে না।’
সংশ্লিষ্টদের বক্তব্য
উন্মুক্ত নালা ও খালে বারবার মৃত্যুর বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘হিজরা খালের তদারকি করছিল সিডিএ। আগে সেখানে প্রতিবন্ধকতা ছিল। সিডিএ কাজ করার সময় সেটি তুলে ফেলে। আমাদের আওতাধীন নালায় প্রকৌশলী নিয়োগ করেছি, তারা প্রত্যেকটি জায়গায় পরিদর্শন করেছেন। যেখানে প্রতিবন্ধক নেই, সেখানে তা দেওয়া হচ্ছে।
ডা. শাহাদাত হোসেন আরো বলেন, ‘আগে সমন্বয় ছিল না। এখন আমরা সমন্বয় করে কাজ করছি। দ্রুত কাজ চলছে। নগরবাসী ভালো একটি কাজ দেখতে পাবে।’
চলতি বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচনি তফসিল ঘোষণা হলে বর্তমান সরকার আর কোনো প্রকল্পের উদ্বোধন করতে পারবে না। সে কারণে দ্রুত পিডি নিয়োগ করে নভেম্বরেই কাজ শুরু করতে হবে। সেটি করা না হলে সারা দেশে এই আন্দোলন ছড়িয়ে দেওয়া হবে। প্রয়োজনে চীন টাকা না দিলেও নিজের টাকা দিয়ে কাজ শুরুর দাবি জানান তারা।
২২ মিনিট আগেময়মনসিংহের গৌরীপুরে জহিরুল ইসলাম মিঠু হত্যা মামলায় পলাতক দুই ভাইকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
১ ঘণ্টা আগেপরিবারের পক্ষ থেকে জানা গেছে, ১১ বছর বয়সে ১৯৩৫ সালে শামসুদ্দিন ব্রিটিশ-ইন্ডিয়ান আর্মিতে যোগ দিয়েছিলেন। তার সৈনিক নম্বর ছিল ৬৪১৪৬০। ১৯৩৯ থেকে শুরু করে ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত পুরো ছয় বছর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ময়দানে ছিলেন এ যোদ্ধা।
১ ঘণ্টা আগেচট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার ভেতরে পুলিশের ওপর চড়াও হয়েছেন ইসলামী ছাত্রশিবিরের এক সাবেক নেতা। ঘটনার পর তাকে আটক করেছে পুলিশ। বুধবার দুপুর ২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আটক মো. রায়হান হাটহাজারি কলেজ শিবিরের সাবেক সভাপতি।
২ ঘণ্টা আগে