পত্রিকার পাতা থেকে জীবন্ত স্মৃতি

পাঠকদের হৃদয় ছুঁয়ে গেল আমার দেশের ঈদ সংখ্যা

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
প্রকাশ : ২৭ মার্চ ২০২৫, ১২: ৪৯

চট্টগ্রামের চেরাগি পাহাড় মোড়ের বাতাসে আজ এক ধরনের নস্টালজিয়া ভাসছিল। পত্রিকার দোকানের সামনে গিজগিজে ভিড়, কারও চোখে উৎসাহ, কারও মনে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের স্মৃতি। ‘আমার দেশ’ পত্রিকার ঈদ সংখ্যা হাতে পেয়েই আবেগতাড়িত হয়ে পড়লেন সরকারি চাকরিজীবী আমিনুল ইসলাম।

বিজ্ঞাপন

পত্রিকার পাতায় ছাপা শব্দগুলো যেন তাকে ফিরিয়ে নিয়ে গেল সেই ষাটের দশকের বাংলায়—শায়েস্তা খাঁর আমলের স্মৃতি, ধানের গোলা, মাছভরা পুকুর, পাখিডাকা ভোর, আর রাখালের বাঁশির সুর। এই অনুভূতি যেন কেবল তার একার নয়, বরং শত শত পাঠকের।

শুধু পাঠক আমিনুল ইসলাম নয়। আজ ২৭ মার্চ (বৃহস্পতিবার) নগরীর চেরাগি পাহাড় মোড়ে চট্টগ্রাম বহুমুখী হর্কাস সমিতির স্টলে আরও অনেককে দেখা গেলো, আমার দেশের ঈদ সংখ্যা নিয়ে কাড়াকাড়ি করতে।

বইয়ের দোকানে ঠেলাঠেলি, কারও হাতে একাধিক কপি, কেউবা শেষ মুহূর্তে এসে হতাশ মুখে ফিরে যাচ্ছেন। হকার নজরুল ইসলাম লিটন তিনবার অর্ডার দিয়ে এনেও বিক্রি সামলাতে পারছেন না। সকাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনি একশরও বেশি সংখ্যা বিক্রি করে ফেলেছেন। তার কথায়, ‘ঈদ সংখ্যা বের হওয়ার পর তিনবার এনেছি, তবুও চাহিদা মিটছে না।’

ঈদ সংখ্যার প্রথম কয়েকটি পৃষ্ঠা পড়েই তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠেছিল আবিদুর রহমানের মুখে। বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল মাদরাসার এই শিক্ষার্থী বলেন, ‘শায়খ আহমাদুল্লাহ আমার খুব প্রিয় একজন আলেম। তার শৈশবের ঈদের স্মৃতিগুলো যেন আমার নিজের শৈশবকেই মনে করিয়ে দিল।’ পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম ঠাট্টা করলেন, ‘ফ্রিতে পড়লে পেট চলবে কীভাবে?’ এই খুনসুটির মাঝেও আবিদুর রহমান ঈদ সংখ্যাটি কিনে ব্যাগে ভরলেন।

শুধু আবিদুর রহমান নয়, তার বন্ধু আখতার হোসাইনও চোখ বুলাচ্ছিলেন আল মাহমুদের ‘আজ রাতে শুধু ঠাকুরমার ঝুলি’ গল্পের দিকে। হেসে বললেন, ‘গল্পের শিক্ষকটি দারুণ, তিনিই ছাত্রদের বললেন, আজ রাতে শুধু ঠাকুরমার ঝুলি শোনা হবে, পড়াশোনা নয়!’

এই উচ্ছ্বাস শুধু তরুণদের নয়, বরং ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম কিংবা চট্টগ্রাম কলেজের শিক্ষার্থী শোয়াইবুল ইসলামের মতো মানুষের হৃদয়ও দখল করে নিয়েছে ঈদ সংখ্যা। শোয়াইবুল পত্রিকার এক পাতায় চোখ রেখে বললেন, ‘স্বৈরাচার থেকে মুক্ত হয়েছি, তবে আরও কিছু হলে ভালো লাগত।’পাশে থাকা এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি সায় দিয়ে বললেন, ‘মাহমুদুর রহমান মানেই বাংলাদেশ, এই পত্রিকা আমাদের ইতিহাসের সাক্ষী।’

দিন গড়াতে থাকে, ঈদের আমেজের সঙ্গে মিশে যায় স্মৃতি ও বাস্তবতার মিশ্র অনুভূতি।

বিক্রেতা আব্দুর রহিম জানান, সকাল থেকে ৬০টিরও বেশি কপি বিক্রি হয়ে গেছে। এত ভালোবাসা, এত আবেগ, এত স্মৃতির সংকলন—এই ঈদ সংখ্যা যেন একদিনের নয়, বহুদিনের সঙ্গী হয়ে থাকবে পাঠকদের মনে।

বিকেলের দিকে আবারও ভিড় জমতে থাকে। অফিসফেরত পাঠকেরাও ভিড় করেন স্টলে। কেউ কেউ পুরনো সংখ্যা খুঁজছেন, কেউবা পরিচিতদের জন্য সংরক্ষণ করছেন একাধিক কপি।

এমনই একজন ছিলেন হাসান মাহমুদ, যিনি দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। তিনি বললেন, ‘এই পত্রিকাটা আমার শৈশবের অংশ, প্রতিবার দেশে এসে চেষ্টা করি ঈদ সংখ্যা সংগ্রহ করার। আজ এত কষ্টে পেয়েছি, মনটা ভরে গেল।’

শুধু চেরাগি পাহাড় মোড় নয়, জিইসি মোড়ের স্টলেও একই চিত্র। এখানে আসা কলেজ শিক্ষার্থী ইকবাল বলেন, ‘এই ঈদ সংখ্যা তো শুধু একটা বই নয়, এটা আমাদের সংস্কৃতির অংশ। ছোটবেলায় বাবা নিয়ে আসতেন, এখন আমি নিজেই কিনি।’

সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসে, বাতাসে ভাসে ঈদের আমেজ। ভিড় কমে এলে বিক্রেতারা গুছিয়ে নিতে থাকেন তাদের দোকান। দিনের শেষে একটাই উপলব্ধি—ঈদ সংখ্যা শুধু একটি প্রকাশনা নয়, এটি পাঠকদের আবেগ, স্মৃতি এবং ঐতিহ্যের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত