চট্টগ্রাম বন্দরে ৩০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর সিদ্ধান্ত

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৩৩
আপডেট : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১৮: ৫২

চট্টগ্রাম বন্দরে মাশুল বাড়ানো হচ্ছে এমন একটি খবর ক’দিন ধরেই বন্দর ব্যবহারকারীদের মুখে মুখে ঘুরছে। কিন্তু বন্দরের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছুই জানানো হয়নি এতদিন। অবশেষে নৌ-পরিবহণ উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেন বন্দর চেয়ারম্যান এম মনিরুজ্জামান।

শুক্রবার সকালে চট্টগ্রাম বন্দরের এনসিটি টার্মিনাল পরিদর্শনে এসে এসব কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগে. (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠান ছাড়া বন্দর চলবে না, এমন প্রচারণা চালিয়ে গত ১৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক এনসিটি টার্মিনালটি একটি প্রতিষ্ঠানের কাছে দিয়ে রাখা হয়েছিল। গত ১৭ দিনে সেই ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়েছে। ৭ জুলাই থেকে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে চট্টগ্রাম ড্রাইডক পরিচালনা করছে এনসিটিকে। ১৭ দিনে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ১০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। জাহাজের গড় অবস্থানকাল কমেছে ১০ ঘণ্টা। এটাকে বড় ধরনের অর্জন বলে দাবি করেছেন তিনি।

তিনি আরো বলেন, আগে যে প্রতিষ্ঠান কাজ করেছে তারাও তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী ভালো করেছে। নৌ বাহিনীর তত্ত্বাবধানে পরিচালনা শুরু হওয়ার পর আরো ভালো করছে। এই ধারা ধরে রাখতে হবে। বন্দরের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। এর জন্য বন্দরে আধুনিক প্রযুক্তি সংযুক্ত করার বিকল্প নেই। বর্তমান সরকার বন্দরকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিয়ে যেতে চায়। সেটা করতে হলে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজের সুযোগ করে দিতে হবে। কিন্তু বিষয়টিকে কেন্দ্র করে একটি পক্ষ বন্দরকে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয়া হবে বলে অপপ্রচার চালাচ্ছে। এসব অপপ্রচারে কাউকে বিভ্রান্ত না হওয়ার আহ্বান জানান নৌ পরিবহণ উপদেষ্টা।

এর আগে চট্টগ্রাম ড্রাইডক লিমিটেডের পক্ষ থেকে ১৭ দিনের অপারেশনের চিত্র তুলে ধরা হয়। ড্রাইডক জানায়, এর সময়ের মধ্যে দৈনিক গড় হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩ হাজার ২৫০ টিইইউএস কন্টেইনার। আগের ১৭ দিনে যার সংখ্যা ছিলো গড়ে ২ হাজার ৮৪৫ টিইইউএস। সব মিলিয়ে ১৭ দিনে মোট ৪০৫ টিইইউএস কন্টেইনার বেশি হ্যান্ডলিং করা হয়েছে। শতাংশের হিসেবে যা ১২ দশমিক ১০ শতাংশ বেশি হয়েছে। এই সময়ে চট্টগ্রাম ড্রাই ডক লিমিটেড মোট ৩০টি জাহাজের কনটেইনার লোডিং ও আনলোডিং সফলভাবে সম্পন্ন করেছে। বর্তমানে এনসিটির ২, ৩, ৪ ও ৫ নম্বর জেটিতে একযোগে ৪টি জাহাজে পণ্য ওঠানামার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল মীর এরশাদ আলী জানান, খুব অল্প সময়ের নোটিশে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্ব বুঝে নিতে হয়েছে নৌবাহিনীকে। তাই শুরুকে ছোট বড় বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে। দিন দিন অপারেশন আরো স্মুথ হচ্ছে। খুব শিগ্‌গির বন্দর অপারেশনে আরো গতিশীল হবে বলে জানান তিনি। এসময় চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ ও নৌবাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বন্দরের মাশুল ৩০ শতাংশ বাড়ানোর বিষয়ে বন্দর চেয়ারম্যান এম মনিরুজ্জামান জানান, সরকারের সম্মতি নিয়ে ৩০ শতাংশ মাশুল বাড়ানোর প্রক্রিয়া চূড়ান্ করা হয়েছে। বর্তমানে যে কাঠামোতে মাশুল আদায় করা হচ্ছে তা ১৯৮৬ সালে নির্ধারণ করা হয়েছিল। দীর্ঘ এই সময়ে সব খাতে পরিচালন ব্যয় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেলেও মাশুল বাড়ানো হয়নি। ২০০৮ সালে মাত্র ৫টি ক্যাটাগরিতে মাশুল হালনাগাদ করা হয়েছিল। ২০১৩ সালে একবার উদ্যোগ নিলেও বন্দর ব্যবহারকারীদের আপত্তির মুখে তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়নি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে মাশুল বাড়ানোর বিকল্প নেই। বর্ধিত এই মাশুল অনেকটা চূড়ান্ত হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা শেষে দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর করা হবে বলে জানান তিনি।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত