চট্টগ্রাম বন্দরে বড় ধাক্বা আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে

চট্টগ্রাম ব্যুরো
প্রকাশ : ২৯ জুন ২০২৫, ১৮: ০৫

দ্বিতীয় দিনের মতো রোববার সব ধরনের কাজ বন্ধ রয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউজে। এতে বন্দরে কন্টেইনার, কন্টেইনারে পণ্য আর বহির্নোঙ্গরে জাহাজ জটও প্রকট আকার ধারণ করছে। বন্দরের চেয়েও ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে ১৯টি বেসরকারি কন্টেইনার ডিপো বা অফডক কর্তৃপক্ষকে। প্রতিটি অফডকের সামনে শত শত ট্রাক, লড়ি ও কাভার্ডভ্যান পণ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কাস্টমস ডকুমেন্ট রিসিভ না করায় পণ্য নামাতে পারছে না তারা।

বিজ্ঞাপন

বন্দর সূত্র জানিয়েছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে আন্দোলন শুরু হয় ঈদের আগে অর্থাৎ গত মে মাসের মাঝামাঝি সময় থেকে। এনবিআরকে দুই ভাগ করে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব নীতি নামে দুটি স্বতন্ত্র বিভাগ চালু করার সরকারি নীতিতে কেন্দ্র করে এই আন্দোলনের সূত্রপাত। তখন থেকেইে কখনো কলম বিরতি কখনো কর্মবিরতির নামে জাতীয় অর্থনীতিকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের কৌশলে নামেন এনবিআরের আওতাভুক্ত ট্যাক্স ভ্যাটসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংস্থার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা।

এতে সবচেয়ে বড় ধাক্বা লাগে চট্টগ্রাম বন্দরের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য। কারণ দেশের সমুদ্র বাণিজ্যের আমদানি–রপ্তানির অন্তত ৯২ শতাংশ পরিচালিত হয় এই বন্দর দিয়ে। কাস্টমসের কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পণ্যের শুল্কায়ন, বিল অব এন্ট্রি দাখিলসহ অন্যান্য কার্যক্রম বন্ধ হয়ে গেছে। এতে করে বন্দরে আসা পণ্যের সরবরাহ কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ার পাশাপাশি রপ্তানি পণ্যের জাহাজিকরণও বন্ধ হয়ে গেছে।

বিকডার সেক্রেটারি রুহুল আমিন শিকদার জানান, রপ্তানিকারকরা প্রথমে তাদের পণ্য অফডকে পাঠায়। সেখান থেকে জাহাজিকরণ করা হয়। অফডকে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে কাস্টমসের কার্যক্রম শুরু হয়। কন্টেইনার গেইটে ঢোকা, বের হওয়া এমনকি গাড়িতে ও জাহাজে ওঠানোর প্রতিটি ধাপে কাস্টমসের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। শনিবার থেকে যা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে। তাই রপ্তানিকারকরা জাহাজি করনের উদ্দেশ্যে পাঠানো কন্টেইনার বা কার্টুন পণ্য তারা রিসিভ করতে পারছেন না। এতে প্রতিটি ডিপোর সামনে পণ্যবাহী গাড়ির দীর্ঘ লাইন তৈরি হয়েছে। এভাবে চলছে জট সামলামে হিমসিম খেতে হবে তাদের। একই ভাবে গত দুই দিন ধরে যে কটি জাহাজ নোঙর তুলেছে সেই জাহাজগুলোকে পণ্য না নিয়েই গন্তব্যে যেতে হয়েছে। এতে বিশ্ব বাণিজ্য বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পরবে বলে জানান তিনি।

বিজিএমইএর সাবেক পরিচালক অঞ্জন শেখর দাশ জানান, এই ধরনের দীর্ঘমেয়াদি সংকটে আগে কখনো পড়েনি বাংলাদেশ। সরকার একদিকে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ নিচ্ছে কিন্তু বিনিয়োগের পরিবেশ তৈরি করতে ব্যর্থ হচ্ছে। কস্টমসের মতো প্রতিষ্ঠান দিনের পর দিন বন্ধ থাকবে এটা কল্পনাতিত ঘটনা। এর ওপর বাড়তি সংকট তৈরী হয়েছে বন্দরের স্টোররেন্ট নীতি। ঈদের আগে জটের শঙ্কায় চার দিনের মধ্যে পণ্য ডেলিভারি না নিলে চারগুন হারে স্টোররেন্ট আদায় করার নির্দেশনা জারি করে চট্টগ্রাম বন্দর। যা এখনো বলবৎ আছে।

মেট্রোপলিটন চেম্বারের সহ-সভাপতি এ এম মাহবুব চৌধুরী জানান, যেকোনো দেশের উন্নয়ন সম্পূর্ণ নির্ভর করে সে দেশের শিল্প–বাণিজ্য সম্প্রসারণ, রপ্তানি ও তার গতিশীলতার ওপর। কিন্তু বাংলাদেশের কিছু দায়িত্বরত প্রতিষ্ঠান দেশের শিল্প–বাণিজ্য রক্ষার বিন্দুমাত্র তোয়াক্কা না করে নিজেদের একতরফা কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। দেশের রাজস্ব বোর্ডের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রায় গত দেড় মাস ধরে যেভাবে কলম বিরতি, কমপ্লিট শাটডাউনের নামে জিম্মি করে রেখেছে তাতে দেশে আমদানি–রপ্তানি, রাজস্ব আহরণ সম্পূর্ণ স্থবির হয়ে পড়ছে।

এ ব্যাপারে কথা বলতে রাজি হননি কাস্টমসের কোন কর্মকর্তা। তাদের দাবি কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী কাজ বন্ধ রেখেছেন তারা। কেন্দ্র থেকে সিদ্ধান্ত দিলে কাজ শুরু হবে যেকোন সময়।

চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ওমর ফারুখ জানান, শনিবার পর্যন্ত আগে শুল্কায়ন হওয়া সামান্য পরিমান কন্টেইনার ডেলিভারি হয়েছে। রোবাবর সকাল থেকে একেবারে বন্ধ রয়েছে। স্বাভাবিক সময়ে দৈনিক যেখানে সাড়ে তিন থেকে চার হাজার টিইইউএস কন্টেইনার ডেলিভারি হয় এখন তা পুরোপুরি বন্ধ। তবে জেটিতে জাহাজ আসা যাওয়ার প্রক্রিয়া স্বাভাবিক আছে। ডেলিভারি না হওয়ায় দৈনিক চার হাজার করে বাড়তি কন্টেইনার যুক্ত হচ্ছে বন্দরের ইয়ার্ডে। মোট ৫৩ হাজার কন্টেইনার ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন বন্দরে স্বাভাবিক সময়ে কন্টেইনারের পরিমাণ থাকে ৩০ হাজারের কাছাকাছি। রোববার দুপুর ১২টা পর্যন্ত কন্টেইনারের পরিমাণ ৪০ হাজার ছাড়িয়েছে। এভাবে চলতে থাকলে বড় ধরনের জট তৈরি হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত