সাংবাদিকের চোখ তুলে নেয়ার হুমকি, থানায় জিডি

মাদারীপুরে কুমার নদ থেকে রাতের আঁধারে বালু উত্তোলনের সময় ধাওয়া করে ধরে অবৈধভাবে ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দেয় স্থানীয় জনগণ। পরে স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দাসহ সাংবাদিকের চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দেন অবৈধ ড্রেজার বালু ব্যবসায়ী ওবায়দুল ফরাজি। এ ঘটনায় শনিবার (২ আগস্ট) বিকালে জীবনের নিরাপত্তার স্বার্থে মাদারীপুর সদর থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন সাংবাদিক সোহেল শিকদার।

তিনি সদর উপজেলার শিরখাড়া গ্রামের মো. এসকেন শিকদারের ছেলে। সোহেল শিকদার দৈনিক গণকণ্ঠ পত্রিকার রাজৈর উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। তবে পুলিশের দাবি, নিয়মিতই চালানো হচ্ছে অভিযান। এ বিষয়েও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মাদারীপুর পুলিশ সুপার নাঈমুল হাসান।

এর আগে ১ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টার দিকে সদর উপজেলার শিরখাড়া ইউনিয়নের রায়েরকান্দী শ্রীনদী গ্রামের কুমার নদে থাকা অবৈধ ড্রেজার মেশিনটি পোড়ানো হয়। এসময় স্থানীয়রা ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে পালিয়ে যায় বালুদস্যুরা।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, হাসিনা সরকার উৎখাতের পর শিরখাড়া ইউনিয়নে অবৈধ ড্রেজার ব্যবসা শুরু করেন রায়েরকান্দি শ্রীনদী গ্রামের মাইজ্জা ফরাজীর ছেলে ওবায়দুল ফরাজিসহ কয়েকজন। এরপর থেকেই প্রতিদিন রাতে কুমার নদে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করে আসছিলেন তারা। একইভাবে শুক্রবার রাতেও অবৈধ ড্রেজার মেশিন নিয়ে রায়েরকান্দী শ্রীনদী এলাকায় বালু উত্তোলনের জন্য আসে ওই বালুদস্যুরা। পরে টের পেয়ে স্থানীয় জনগণ তাদের ধাওয়া করে। এসময় বালুদস্যুরা জনগণকে প্রতিরোধ করতে চাইলে ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করেন উপস্থিত জনগণ। একপর্যায়ে দ্রুত ড্রেজার মেশিন রেখেই একটি বাল্কহেড নিয়ে তারা পালিয়ে যান। পরবর্তীতে অবৈধ ড্রেজারটি আটক করে আগুন ধরিয়ে দেয় বিক্ষুব্ধ জনতা।

জানা গেছে, অভিযুক্ত ওবায়দুল ফরাজি ৩-৪ দিন আগে বিদেশে গেছেন। সেখান থেকেই বালু ব্যবসার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, শ্রীনদী ফাঁড়ির কয়েকশ’ মিটার পাশেই কুমার নদে বালু উত্তোলন করা হয়। কিন্তু এর প্রতিকারে জোরালো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অবৈধ বালু উত্তোলনের বিষয়ে কেউ প্রতিবাদ করলে তাদের হুমকি দেন বালুদস্যুরা। শুক্রবার রাতে ড্রেজার আটক ও আগুন দেয়ার ঘটনায় ফেসবুক লাইভে এসে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে হুমকি দিয়েছেন বালুদস্যু ওবায়দুল ফরাজি। এ কারণে সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছেন।

স্থানীয়রা বলেন, কুমার নদের ভাঙনে আমাদের ঘরবাড়ি বিলীন হয়ে যাচ্ছে। অবৈধ ড্রেজার দিয়ে বালু কেটে বিক্রি করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা আয় করছেন কথিত কয়েকজন বিএনপি নেতা। বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনে একাধিকবার অভিযোগ জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাচ্ছি না আমরা। এখন নিজেদের সম্পদ রক্ষায় নিজেরাই মাঠে নেমেছি।

থানায় জিডি করা সাংবাদিক সোহেল শিকদার জানান, অবৈধ ড্রেজার মেশিন পুড়িয়ে দেয়ার পর শুক্রবার রাত দেড়টার দিকে ফেসবুক লাইভে এসে স্থানীয় জিয়াউল হক বাবুল খালাসী (৪০) ও পলাশ খালাসী (৪০)-সহ আমাকে গালাগাল এবং চোখ তুলে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন ওবায়দুল ফরাজি। তিনি এলাকায় বিএনপি নেতা হিসেবে পরিচয় দেন। আমাদের জীবন নিয়ে ঝুঁকিতে আছি। ওবায়দুল বা তার লোকজন আমাদের বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। প্রয়োজন হলে মামলা করবো। তবে ওবায়দুল ফরাজি বিদেশে থাকায় তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।

এ ব্যাপারে মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মো. নাঈমুল হাসান বলেন, ঘটনাটি শোনার পরপরই পুলিশ পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অবৈধ ড্রেজারের বিরুদ্ধে আমরা প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করছি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাও ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন।