আবাহমান গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী খেলা নৌকাবাইচ। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বাংলার অনেক অতীত হারিয়ে গেলেও বর্ণিল নৌকা বাইচ এখনও টিকে আছে।
শনিবার (৬সেপ্টেম্বর) নরসিংদীর বেলাবো উপজেলার আড়িয়াল খাঁ নদীতে অনুষ্ঠিত হয়েছে গ্রামীণ ঐতিহ্যের নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। এই খেলা উপভোগ করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসেন ছোট বড় লাখো দর্শক।

এক সময় গ্রাম-গঞ্জের ছোট-বড় নদীতে নিয়মিতই অনুষ্ঠিত হতো গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতা। স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠন ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে আয়োজন করা হতো নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা। নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতাকে ঘিরে নারী-পুরুষ, তরুণ-তরুণীসহ সকল বয়সের মানুষ নদীর দুই পাড়ে ভিড় জমায়। এসময় বিভিন্ন বাজনা বাজিয়ে প্রতিযোগিতাদের উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি নিজেরাও আনন্দ উপভোগ করেন পরিবার পরিজন নিয়ে। অপরদিকে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ইঞ্জিন চালিত ট্রলার, বড় নৌকা, গাছ ও ভবনে উঠে মানুষ নৌকাবাইচ উপভোগ করেন। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় বিভিন্ন জেলা থেকে আসা ৯টি নৌকাবাইচের দল। লাল, হলুদ ও সবুজ পোষাক পড়ে বিশাল নৌকায় বৈঠা হাতে তরুণ ও অভিজ্ঞ মাঝিরা সমানতালে ছন্দ মিলিয়ে বৈঠা চালান।
এ সময় বাদ্যযন্ত্রের তালে তালে বৈঠার মন মাতানো শব্দের সাথে উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শনার্থীরা। তারা নেচে-গেয়ে আনন্দ উল্লাস করে ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ উপভোগ করেন।
স্থানীয় দর্শকরা মজিদ মিয়া জানান, দীর্ঘদিন ধরে এই নদীতে চলে আসা ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ খেলা এখনো নিয়মিতই চলে আসছে। নৌকাবাইচ দেখার জন্য আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকে হাজার হাজার দর্শকরা ছুটে আসেন। নদীর দু-তীরে দাঁড়িয়ে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। আবার কেউ কেউ পরিবার পরিজন নিয়ে প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে স্পীডবোট, ইঞ্জিনের নৌকা ভাড়া করে তা দিয়ে নদীতে প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন।
কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি থেকে আসা এক দর্শক আলতাব হোসেন জানান, প্রায় দশ বছর ধরে তিনি এখানে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করতে আসেন। তিনি শুধু একা আসেন না তার সাথে আরও আট দশজন আসেন।আসা যাওয়ার জন্য একটি গাড়িও ভাড়া করেন। তিনি এই প্রতিযোগিতা দেখে আনন্দ পান।
বেলোব প্রেসক্লাবের সভাপতি মোশারফ হোসেন নিলু জানান, প্রায় ২০/২৫ বছর ধরে চলে আসা নৌকাবাইচ দেখতে প্রতি বছরই প্রায় লাখো মানুষের সমাবেশ ঘটে এখানে। এছাড়া এই প্রতিযোগিতা উপলক্ষ্যে নদী দু-তীরের বাড়ি-ঘরে তাদের আত্মীয়-স্বজনরা বেড়াতে আসেন। ফলে এই এলাকায় উৎসবের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়।
নৌকাবাইচ শুধু বিনোদন নয়, এটি গ্রামীণ ঐতিহ্য, ভ্রাতৃত্ববোধ এবং ঐক্যের প্রতীক। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে এই ঐতিহ্য ধরে রাখবে এমনটাই আশা স্থানীয়দের।

