আধুনিক চিকিৎসা উপকরণ থাকলেও চিকিৎসক ও জনবলের চরম সংকটে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে। এতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরা।
জানা গেছে, ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নের প্রায় দেড় লাখ মানুষের একমাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতাল। এখানে চিকিৎসক ও জনবল সংকটে সেবাবঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার সাধারণ মানুষ, বিশেষ করে প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালে চিকিৎসকের ২২টি পদ থাকেলও আছেন মাত্র ১১ জন। এর মধ্যে আবার চারজন রয়েছেন প্রেশনে। এখন ২২ জন চিকিৎকের স্থলে সেবা দিচ্ছেন মাত্র সাতজন। আরএম, অ্যানেস্থেসিয়া, সার্জারি, মেডিসিনের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ ডাক্তারশূন্য। এছাড়া ছয় ইউনিয়নের ছয় উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের তিনটিতেই ডাক্তার নেই। আলফাডাঙ্গা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক, কর্মকর্তা কর্মচারীসহ মোট ১৩৫টি পদের মধ্যে ৫০টি শূন্য রয়েছে, যা মোট জনবলের ৩৭ দশমিক ০৪ শতাংশ।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ও বহির্বিভাগে প্রতিদিন গড়ে ৪৫০ থেকে ৫০০ রোগী প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে আসেন এবং গড়ে ভর্তি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৪০ জন। সাতজন চিকিৎসকে প্রতিনিয়ত এত রোগী সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের এক্স-রে মেশিন বিকল রয়েছে। হাসপাতালটিতে অত্যাধুনিক প্যাথলজিক্যাল ল্যাব, আলট্রাসনোগ্রাম, অপারেশন থিয়েটারসহ যাবতীয় উপকরণ থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র জনবলের অভাবে এসব সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন চিকিৎসা নিতে আসা রোগীরা।
সরকারি হিসাব অনুযায়ী এ উপজেলার ছয় ইউনিয়নের জনসংখ্যা এক লাখ ১৯ হাজার ৬৩১ জন। এছাড়াও পাশের বোয়ালমারী ও কাশিয়ানী উপজেলার অনেক রোগী চিকিৎসা নিতে এই হাসপাতালে আসেন। বৃহৎ এ জনগোষ্ঠী স্বল্পমূল্যে উন্নত সেবার জন্য এই হাসপাতালের ওপর নির্ভরশীল। তবে স্থানীয়দের আক্ষেপ, চিকিৎসক ও জনবল সংকট থাকায় তারা যথাযথ সেবা পাচ্ছেন না। ফলে বেসরকারি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এক্স-রে, আলট্রাসনোসহ সব পরীক্ষা করতে হচ্ছে। সিজারিয়ানের জন্য বিভিন্ন ক্লিনিকে ব্যয়বহুল চিকিৎসাসেবা নিতে হচ্ছে।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মো. আবুল বাশারের সঙ্গে কথা হলে তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, প্রতিদিন শত শত সাধারণ মানুষ চিকিৎসার জন্য এখানে আসেন। হাসপাতালে সব ব্যাবস্থা থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় চিকিৎসক ও জনবলের অভাবে মানুষ সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আর্থিক সক্ষমতা না থাকা সত্ত্বেও অনেককে বাধ্য হয়ে বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এ অঞ্চলের নিম্ন আয়ের মানুষ।
উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. নিয়াজ মোস্তাফি চৌধুরী আমার দেশকে বলেন, হাসপাতালে চিকিৎসকসহ জনবল সংকট রয়েছে। বিশেষ করে প্যাথলজিক্যাল ল্যাবের মেডিসিনসহ সব উপকরণ থাকলেও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট না থাকায় ল্যাবের যাবতীয় কর্মকাণ্ড বন্ধ রয়েছে। এতে হাসপাতালে আসা রোগীরা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ল্যাবের মেডিসিনসহ যাবতীয় উপকরণ মেয়াদোত্তীর্ণ হলে সরকারি সম্পদের অপচয় হবে। ইচ্ছা থাকলেও জনবল সংকটের কারণে শতভাগ চিকিৎসাসেবা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।

