‘মৃত্যুপুরী’ খুলনা–মোংলা মহাসড়ক প্রশস্ত করার দাবি

জেলা প্রতিনিধি, বাগেরহাট
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৫, ১৫: ৪০

২০ বছরের টগবগে তরুণ কায়সান কবির। শিক্ষার প্রতিটি ধাপে কৃতিত্ব অর্জন করে সম্প্রতি ভর্তি হয়েছিলেন দেশের অন্যতম বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ আর্মি ইউনিভার্সিটি অব ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে। ২৭ জুলাই বসার কথা ছিল তার ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই ক্লাসে বসা আর হলো না তার। ১২ জুলাই খুলনা–মোংলা মহাসড়কের ভাগা বাজার এলাকায় এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান এই মেধাবী তরুণ।

বিজ্ঞাপন

কায়সানের মৃত্যুর খবরে শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছে পরিবার। পিতা হুমায়ূন কবির বলেন,ওরিয়েন্টেশন ক্লাসে বাবা–ছেলে একসাথে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে আমার জীবন এখন অন্ধকার।

খুলনা–মোংলা মহাসড়ক দীর্ঘদিন ধরেই ভয়াবহ দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যুর ফাঁদ হিসেবে পরিচিত।

কাটাখালী হাইওয়ে থানার তথ্যমতে, শুধু ২০২৪ সালেই এই সড়কে অন্তত ২৫টি দুর্ঘটনা ঘটেছে, যাতে প্রাণ হারিয়েছেন ২১ জন। ২০২৫ সালের এ পর্যন্ত সময়ে সংঘটিত হয়েছে ৩০টি দুর্ঘটনা প্রাণ হারিয়েছেন অন্তত ১৩ জন।

অভিযোগ রয়েছে, খানাখন্দে ভরা রাস্তা, বেপরোয়া গতি, অবৈধ যানবাহনের দৌরাত্ম্য, ওভারটেকিং এবং সংকীর্ণতার কারণেই প্রায়ই ঘটছে এসব দুর্ঘটনা।

স্থানীয় ব্যাংক কর্মকর্তা দিপু রায় চৌধুরী বলেন, প্রতিদিন বাইকে এই রাস্তা দিয়ে যাই। বেপরোয়া গতি আর ওভারটেকিংয়ের কারণে একাধিকবার দুর্ঘটনার শিকার হয়েছি। মোটরসাইকেলের জন্য আলাদা লেন থাকলে অনেক দুর্ঘটনা এড়ানো যেত।

স্থানীয় শিক্ষার্থী রায়হান অপু বলেন,পদ্মা সেতুর পর গাড়ির চাপ কয়েকগুণ বেড়েছে। অথচ রাস্তা আগের মতোই রয়ে গেছে। দ্রুত ফোর লেন না করলে কায়সানের মতো আরও অনেক প্রাণ ঝরবে।

খানাখন্দ আর সংকীর্ণতার কারণে খুলনা–মোংলা মহাসড়ক আজ ভয়াবহ মৃত্যু ফাঁদে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছেন হাজারো মানুষ। তাই অবিলম্বে লেন বৃদ্ধি ও সড়ক সংস্কার কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন এখন সময়ের দাবি।

বাস চালক রেজাউল, যিনি ২৪ বছর ধরে এই সড়কে গাড়ি চালাচ্ছেন বলেন, গাড়ির সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। নসিমন, করিমন, ভটভটি থেকে শুরু করে বড় বড় ট্রাক সব একই লেনে চলে। ফলে দুর্ঘটনা বাড়ছে। অন্তত ফোর লেন হলে অনেকটা কমে আসবে।

পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর মোংলা বন্দরের গুরুত্ব বহুগুণ বেড়েছে। প্রতিদিন শত শত পণ্যবাহী ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস ও বিভিন্ন ধরনের যানবাহন চলাচল করছে এ সড়ক দিয়ে। এছাড়া সুন্দরবন ভ্রমণে আসা পর্যটক, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এবং নির্মাণাধীন খানজাহান আলী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সব মিলিয়ে এ মহাসড়কের গুরুত্ব এখন বহুগুণ বেশি।

তবে অভিযোগ, ১৯৮০ সালের পর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কে বড় ধরনের উন্নয়ন হয়নি। বিশেষ করে কাটাখালী থেকে মোংলা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার সড়ক এখনও সংকীর্ণ ও ভাঙাচোরা অবস্থায় রয়েছে।

কাটাখালী হাইওয়ে থানার অফিসার ইনচার্জ মো. জাফর আহমেদ বলেন, এই গুরুত্বপূর্ণ সড়কে নেই ডিভাইডার। ফলে ছোট গাড়ি আর বড় গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষে দুর্ঘটনা ঘটে। পাশাপাশি খানাখন্দের কারণে গাড়ি ছিটকে পড়ার ঘটনাও ঘটছে। লেন বৃদ্ধি করলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে যাবে।

বাগেরহাট সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল ইসলাম প্রাং বলেন, খুলনা–মোংলা মহাসড়কের উন্নয়ন নিয়ে ইতোমধ্যেই পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। মহাসড়কটিকে পর্যায়ক্রমে চার লেনে উন্নীত করার পরিকল্পনা হাতে আছে। পাশাপাশি রাস্তার সংস্কার কার্যক্রম চলছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত