কোন্দল সত্ত্বেও শক্ত অবস্থানে বিএনপি, ভোট বাড়াতে তৎপর জামায়াত

শফিকুল ইসলাম শফিক, মাগুরা
প্রকাশ : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৪৬
আপডেট : ০৪ আগস্ট ২০২৫, ১০: ১৯

আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে সরগরম মাগুরার দুটি সংসদীয় আসনের সম্ভাব্য প্রার্থী ও মনোনয়নপ্রত্যাশীরা। বিএনপি, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল তাদের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে মাঠে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। তবে দুটি আসনেই বিএনপির নিজ দলের মধ্যে পদ-পদবি এবং নির্বাচনে মনোনয়ন নিয়ে গ্রুপিং বিদ্যমান। অনেকেই মনোনয়ন পেতে চেষ্টা-তদবির চালিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে দলের ভাবমূর্তি ধরে রাখতে ইতোমধ্যে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বেশ কয়েকজন নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। বহিষ্কৃতদের দাবি, গ্রুপিংয়ের স্বীকার তারা। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে বিএনপির ওয়ার্ডপর্যায়ে সরাসরি ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন চলমান থাকায়, বর্তমানে দলের সাংগঠনিক অবস্থা বিগত ৩০ বছরের তুলনায় অধিক শক্তিশালী। আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকায় জেলার দুটি আসনেই বিএনপির প্রার্থীদের পাল্লা ভারী মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিজ্ঞাপন

অন্যদিকে দলীয় ভোট বাড়াতে জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী আন্দোলনসহ বিভিন্ন ছোট রাজনৈতিক দলের মনোনীত ও সম্ভাব্য প্রার্থীরা নানাভাবে ভোটারদের মন জয়ের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কর্মিসভাসহ দলীয় কর্মকাণ্ড অব্যাহত রেখেছে দল দুটি।

মাগুরা-১ (শ্রীপুর ও সদরের একাংশ)

সদর উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন এবং শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে মাগুরা-১ আসন। এখানে ভোটার চার লাখ ২৭ হাজার ২৭৬ জন। এই আসনে ২০১৮ সালের নির্বাচনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ছিলেন মাগুরা জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খান। নির্বাচনের সময় তিনি মাগুরার আলোচিত মঘির ঢালে ট্রাকে পেট্রল বোমায় ৫ শ্রমিক নিহত মামলার প্রধান আসামি হিসেবে কারাবন্দি ছিলেন। চিকিৎসাসেবা, শত শত যুবকের কর্মসংস্থান এবং দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন। আগামী নির্বাচনে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী তিনি।

এছাড়া মাগুরা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আলী আহমেদ, সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আহসান হাবিব কিশোর, বিএনপির সাবেক মন্ত্রী প্রয়াত মেজর জেনারেল এম মজিদ উল হকের কন্যা ডা. সিমিন এ মজিদ, মাগুরা জেলা জিয়া পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আলিমুজামান, কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি আলমগীর হাসান সোহান মনোনয়ন পেতে আগ্রহী।

তবে সাংগঠনিক দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি দলীয় মনোনয়ন পেতে আলি আহমেদ এবং আহসান হাবিব কিশোর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে জোর লবিং চালিয়ে যাচ্ছেন। মনোয়ার হোসেন খান নির্বাচনি নানা শোডাউন অব্যাহত রাখলেও বাকিরা মাঝে মধ্যে সোশ্যাল মিডিয়া এবং দু-একটি ব্যানার ফেস্টুন ঝুলানোর মধ্যেই তাদের প্রচার সীমাবদ্ধ রেখেছেন।

এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর মনোনীত প্রার্থী জেলার সাবেক আমির ও কেন্দ্রীয় নেতা মওলানা আব্দুল মতিন। তিনি দ্বিতীয়বারের মতো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যেই গণসংযোগসহ দলীয় কর্মকাণ্ডে সক্রিয়া ভূমিকায় রয়েছেন তিনি। তিনি বেশ জোরেশোরে কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সভা সমাবেশ অব্যাহত রেখেছেন।

এছাড়া ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের প্রার্থী হিসেবে মাওলানা নাজিরুল ইসলাম, গণফোরামের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান ইতোমধ্যে গণসংযোগ শুরু করেছেন।

মাগুরা-২ (শালিখা, মহম্মদপুর ও সদরের একাংশ)

মহম্মদপুর, শালিখা এবং সদর উপজেলার বাকি চারটি ইউনিয়ন নিয়ে মাগুরা-২ আসন। এখানে চার লাখ ১১ হাজার ৫৫৯ জন ভোটার রয়েছেন। আসনটিতে ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করেন। তিনি জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ছিলেন। তিনি ঢাকায় বসবাস করলেও মাঝে মধ্যে তার নির্বাচনি এলাকায় দলীয় কর্মকাণ্ডে অংশ নেন। কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে এবারও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী।

তবে এ আসনে বিএনপির একাধিকবারের সংসদ সদস্য ও বর্তমান কেন্দ্রীয় বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির অন্যতম সদস্য শিল্পপতি কাজী সালিমুল হক কামাল এবং ঢাকা দক্ষিণ যুবদলের সদস্য সচিব রবিউল ইসলাম নয়ন মনোনয়নের দৌড়ে সমানতালে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। কাজী কামাল জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে একই মামলায় দীর্ঘ সাত বছর কারাভোগ করেছেন। তিনি এমপি থাকাকালীন মাগুরা-২ আসনের রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থানে ভূমিকা রেখেছেন।

অন্যদিকে জুলাই আন্দোলনের পর থেকে যুবদল নেতা রবিউল ইসলাম নয়ন এবং কাজী কামাল যৌথভাবে যুবদল, ছাত্রদলসহ বিএনপির অধিকাংশ নেতাকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নানা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করেছেন। এ নিয়ে রীতিমতো নিতাই রায় চৌধুরীর সঙ্গে গ্রুপিং অনেকটা প্রকাশ্যে রূপ নিয়েছে।

এই আসনে জেলা জামায়াতের আমির এ বি বাকেরকে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। তবে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা কৃষিবিদ গ্রুপের চেয়ারম্যান কৃষিবিজ্ঞানী ড. আলি আফজাল এলাকায় ব্যাপক সভা, সমাবেশ, কৃতী ছাত্রছাত্রীদের সংবর্ধনা, ফুটবল, ক্রিকেট, কাবাডি খেলার আয়োজন অব্যাহত রাখায় দলীয় এবং সাধারণ মানুষের কাছে দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছেন।

এছাড়া দ্বিতীয়বারের মতো দলীয় মনোনয়ন পেয়ে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সম্ভাব্য প্রার্থী মুফতি মোস্তফা কামাল এলাকায় গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কোনো কমিটি জেলায় গঠন না হওয়ায় পদযাত্রা ছাড়া তাদের কোনো কর্মকাণ্ড নেই। তবে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের গণঅধিকার পরিষদের কমিটি থাকলেও তেমন কোনো কর্মসূচি নেই।

মাগুরা জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. মাসুদুর রহমান বলেন, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য ইতোমধ্যে জেলার দুটি আসনের সম্ভাব্য ভোটকেন্দ্রগুলোর সংস্কারকাজ শুরু হয়েছে। সাধারণ ভোটাররা দ্রুত সংস্কার ও জাতীয় সংসদ নির্বাচন যেমন চান, তেমনি সব রাজনৈতিক দলের প্রার্থী হিসেবে দুর্নীতিমুক্ত, সৎ, শিক্ষিত ও মানবিক গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তিকে এমপি হিসেবে দেখতে চান।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত