আহসান কবীর, যশোর
জুলাই আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং তাকে গণঅভ্যুত্থানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রায় সব রাজনৈতিক শক্তি এবং সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। এমনকি ছাত্রলীগ কর্মীদের একাংশ এবং আওয়ামী পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তখন কে কোন মতাদর্শের, তা কারো বিবেচ্য ছিল না। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর এর কৃতিত্ব দাবি করে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায় অংশগ্রহণকারী নানা সংগঠনকে। এমন প্রেক্ষাপটে আমার দেশ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে সে সময়ের আন্দোলনে যশোরে সংগঠনগতভাবে কাদের কী ভূমিকা ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকা নেন প্রধানত ছাত্রশক্তির নেতারা। তখন যশোরে এ সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে অল্পসংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থী কোনো নেতৃত্ব ছাড়াই প্রথমে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) স্বল্পপরিসরে কর্মসূচি শুরু করে। এরপর আন্দোলন শহরভিত্তিক হলে তাতে প্রথম অবস্থায় সংগঠকের ভূমিকা নেন বামধারার রাজনৈতিক কর্মীরা। একপর্যায়ে এতে যুক্ত হয় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্য সংগঠনগুলোর কর্মীসহ অরাজনৈতিক কিছু সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা কদিনের মাথায় ছাত্র ইউনিয়ন যবিপ্রবি সভাপতি রাশেদ খানকে জেলার ‘প্রধান সংগঠক’ হিসেবে সামনে আনেন। রাশেদ ও তার সহযোগীদের নেতৃত্বেই এক মাস যশোরের রাজপথ দখলে রাখেন শিক্ষার্থী ও তরুণরা।
ওই আন্দোলনের সংগঠকরা বলছেন, জুলাইয়ের ৪ ও ৫ তারিখ এখানে প্রথম আন্দোলনে নামেন যবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখনই সংগঠকরা যশোর ইনস্টিটিউট চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে সমমনাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শহরে আনার উদ্যোগ নেন। তাদের প্রথম টার্গেট ছিল যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে বিকাল-সন্ধ্যার দিকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসভিত্তিক সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ তৎপরতায় ছাত্র ইউনিয়নের রাশেদ খান ও মানব আকরাম, যবিপ্রবি শিক্ষার্থী মারুফ হাসান সুকর্ণ (বর্তমানে এনসিপিতে যুক্ত), ছাত্র ফেডারেশনের জান্নাতুল ফাতেমা অনন্যা, জান্নাতুল ফোয়ারা অন্তরা, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর পলাশ বিশ্বাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের উজ্জ্বল বিশ্বাস ও ইমরান খান, ছাত্র অধিকার পরিষদের আসিফ ইকবাল প্রমুখ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
শুরু হয় শহরভিত্তিক আন্দোলন। ধীরে ধীরে এতে যোগ দিতে থাকেন যবিপ্রবি ছাড়াও যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি পলিটেকনিক কলেজ, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, সরকারি মেডিকেল কলেজ, জিলা স্কুলসহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এমনকি সেনানিবাস ও বিমানঘাঁটিকেন্দ্রিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। দিন যত যায়, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ততই বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনে যুক্ত হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো বৃহৎ সংগঠনও।
এরপর যে জমায়েত হতে থাকে, তা যশোরের ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি। ২ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে অল্প কিছু ছাত্র অবস্থান নেন শহরের পালবাড়ি মোড়ে। সেখান থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি চাঁচড়া মোড় ঘুরে যখন শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় আসে, তখন অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল অন্তত ৩০ হাজার। ৪ আগস্ট চাঁচড়ায় মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া ছাত্র-জনতা যখন শহরে প্রবেশ করে, সেই মিছিলটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪৩ মিনিট। আর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দিন সকাল থেকেই শহরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্র-জনতার হাতে।
সংগঠকদের মতে, কারফিউ চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান ও তার সহযোগীদের সঙ্গে বিএনপি খুলনা বিভাগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের অন্তত দুই দফা গোপন বৈঠক হয় যশোর জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের ধর্মতলার বাড়িতে। রাশেদ ও অমিত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাশেদ খান বলেন, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ওই বৈঠকগুলোতে ছাত্র আন্দোলনে লোকবল দেওয়া ছাড়াও যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং তিনি তা রক্ষাও করেছিলেন। ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক সে সময় আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হন। সংগঠনটির এমএম কলেজ শাখার আহ্বায়ক হাসান ইমামও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতিহত করার আশ্বাসসহ যাবতীয় সহযোগিতা দেন।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ছাত্রদলকর্মীদের আমরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিই। প্রায় প্রতিদিন পালবাড়ি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধীদের মিছিলে আমাদের বিপুলসংখ্যক কর্মী অংশ নেন।
আমার দেশকে অমিত বলেন, ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতার সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনই যোগাযোগ হতো। মিছিলের রুট ঠিক করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পানি-খাদ্য সরবরাহ করা থেকে আনুষঙ্গিক লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা দিয়েছি। প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। এমনকি আমি সে সময় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এও বলেছি যে, শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। আমাদের দলের যে নিয়মিত মিছিল হচ্ছে, প্রয়োজনে সেখানে শক্তিপ্রয়োগ করুন। ছাত্রদের গায়ে আঘাত করলে আমরা সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগ দেব।
এদিকে, আন্দোলন দানা বাঁধার পর তাতে সক্রিয় অংশ নেয় আরেক বৃহৎ সংগঠন ছাত্রশিবির। এ সংগঠনের তখনকার জেলা সভাপতি মোস্তফা কামাল আমার দেশকে বলেন, আমাদের পুরো শক্তি যশোরের আন্দোলনে নিযুক্ত করি। শিবির নেতারা আন্দোলনস্থলের আশপাশে থাকতেন আর কর্মী-সমর্থকরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। আমাদের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যোগাযোগ হতো মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাসুম বিল্লাহ ও আমানুল্লাহর।
বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ আমার দেশকে বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই আমাদের ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কর্মীরা সক্রিয় অংশ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। বামপন্থিদের বড় অংশ এই আন্দোলনের পক্ষে ছিল। তবে সিপিবি ও উদীচীর একাংশের অবস্থান ছিল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পক্ষে।
সমন্বয়ক রাশেদ খান ও মারুফ হাসান সুকর্ণ জানান, এর বাইরে উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচ প্রথম থেকে এ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শেষের কদিন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্সের ভূমিকাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের নেতৃত্ব ছাড়াও মাঠে থাকা সংবাদকর্মীদের একাংশ, সিপিবির আমিনুর রহমান হিরু, বাসদের মো. শাজাহান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মোস্তফা কামাল মিন্টু, জামায়াতপন্থি আইনজীবী রুহিন বালুচসহ নানা শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহায়তা পাওয়া গেছে।
তিনি আরো জানান, বিশেষ করে যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞানের শিক্ষক ড. অভিনু কিবরিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের দিকনির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রাচ্যসংঘ ও চারুপীঠের সংগঠকরা আন্দোলনের পক্ষে তৎপর ছিলেন। আর নারী শিক্ষার্থী-শিক্ষক, নারী-পুরুষ অভিভাবক, রিকশাচালক থেকে শুরু করে দোকান কর্মচারী, ফুটপাতের হকার, এমনকি সরকারি কর্মচারীদের অবদানও ছিল অবিস্মরণীয়।
জুলাই আন্দোলন গড়ে তুলতে এবং তাকে গণঅভ্যুত্থানের পর্যায়ে নিয়ে যেতে প্রায় সব রাজনৈতিক শক্তি এবং সাধারণ মানুষ অংশ নেয়। এমনকি ছাত্রলীগ কর্মীদের একাংশ এবং আওয়ামী পরিবার থেকে আসা শিক্ষার্থীরাও আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তখন কে কোন মতাদর্শের, তা কারো বিবেচ্য ছিল না। কিন্তু গণঅভ্যুত্থান সফল হওয়ার পর এর কৃতিত্ব দাবি করে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হতে দেখা যায় অংশগ্রহণকারী নানা সংগঠনকে। এমন প্রেক্ষাপটে আমার দেশ অনুসন্ধানের চেষ্টা করেছে সে সময়ের আন্দোলনে যশোরে সংগঠনগতভাবে কাদের কী ভূমিকা ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক আন্দোলনে নেতৃত্বের ভূমিকা নেন প্রধানত ছাত্রশক্তির নেতারা। তখন যশোরে এ সংগঠনের অস্তিত্ব ছিল না। এমন পরিস্থিতিতে অল্পসংখ্যক সাধারণ শিক্ষার্থী কোনো নেতৃত্ব ছাড়াই প্রথমে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) স্বল্পপরিসরে কর্মসূচি শুরু করে। এরপর আন্দোলন শহরভিত্তিক হলে তাতে প্রথম অবস্থায় সংগঠকের ভূমিকা নেন বামধারার রাজনৈতিক কর্মীরা। একপর্যায়ে এতে যুক্ত হয় ছাত্রদল, ছাত্রশিবির, ছাত্র অধিকার পরিষদসহ অন্য সংগঠনগুলোর কর্মীসহ অরাজনৈতিক কিছু সংগঠন ও সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনকারীরা কদিনের মাথায় ছাত্র ইউনিয়ন যবিপ্রবি সভাপতি রাশেদ খানকে জেলার ‘প্রধান সংগঠক’ হিসেবে সামনে আনেন। রাশেদ ও তার সহযোগীদের নেতৃত্বেই এক মাস যশোরের রাজপথ দখলে রাখেন শিক্ষার্থী ও তরুণরা।
ওই আন্দোলনের সংগঠকরা বলছেন, জুলাইয়ের ৪ ও ৫ তারিখ এখানে প্রথম আন্দোলনে নামেন যবিপ্রবির কয়েকজন শিক্ষার্থী। তখনই সংগঠকরা যশোর ইনস্টিটিউট চত্বরসহ বিভিন্ন স্থানে সমমনাদের সঙ্গে একের পর এক বৈঠক করে আন্দোলনকে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে শহরে আনার উদ্যোগ নেন। তাদের প্রথম টার্গেট ছিল যশোর ইনস্টিটিউট পাবলিক লাইব্রেরিতে বিকাল-সন্ধ্যার দিকে পড়তে আসা শিক্ষার্থীরা, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ক্যাম্পাসভিত্তিক সাহিত্য, সংস্কৃতি ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠান। এ তৎপরতায় ছাত্র ইউনিয়নের রাশেদ খান ও মানব আকরাম, যবিপ্রবি শিক্ষার্থী মারুফ হাসান সুকর্ণ (বর্তমানে এনসিপিতে যুক্ত), ছাত্র ফেডারেশনের জান্নাতুল ফাতেমা অনন্যা, জান্নাতুল ফোয়ারা অন্তরা, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর পলাশ বিশ্বাস, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের উজ্জ্বল বিশ্বাস ও ইমরান খান, ছাত্র অধিকার পরিষদের আসিফ ইকবাল প্রমুখ অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন।
শুরু হয় শহরভিত্তিক আন্দোলন। ধীরে ধীরে এতে যোগ দিতে থাকেন যবিপ্রবি ছাড়াও যশোর সরকারি মাইকেল মধুসূদন কলেজ, সরকারি সিটি কলেজ, সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি পলিটেকনিক কলেজ, ডা. আব্দুর রাজ্জাক মিউনিসিপ্যাল কলেজ, সরকারি মেডিকেল কলেজ, জিলা স্কুলসহ নানা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এমনকি সেনানিবাস ও বিমানঘাঁটিকেন্দ্রিক স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। দিন যত যায়, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ততই বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে আন্দোলনে যুক্ত হয় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের মতো বৃহৎ সংগঠনও।
এরপর যে জমায়েত হতে থাকে, তা যশোরের ইতিহাসে কখনো দেখা যায়নি। ২ আগস্ট বেলা ১১টার দিকে প্রবল বৃষ্টির মধ্যে অল্প কিছু ছাত্র অবস্থান নেন শহরের পালবাড়ি মোড়ে। সেখান থেকে শুরু হওয়া মিছিলটি চাঁচড়া মোড় ঘুরে যখন শহরের প্রাণকেন্দ্র দড়াটানায় আসে, তখন অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা ছিল অন্তত ৩০ হাজার। ৪ আগস্ট চাঁচড়ায় মহাসড়কে অবস্থান নেওয়া ছাত্র-জনতা যখন শহরে প্রবেশ করে, সেই মিছিলটির দৈর্ঘ্য ছিল ৪৩ মিনিট। আর ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের দিন সকাল থেকেই শহরের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ছিল ছাত্র-জনতার হাতে।
সংগঠকদের মতে, কারফিউ চলাকালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান ও তার সহযোগীদের সঙ্গে বিএনপি খুলনা বিভাগের কেন্দ্রীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের অন্তত দুই দফা গোপন বৈঠক হয় যশোর জেলা বিএনপির বর্তমান সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন খোকনের ধর্মতলার বাড়িতে। রাশেদ ও অমিত এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
রাশেদ খান বলেন, অনিন্দ্য ইসলাম অমিত ওই বৈঠকগুলোতে ছাত্র আন্দোলনে লোকবল দেওয়া ছাড়াও যাবতীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং তিনি তা রক্ষাও করেছিলেন। ছাত্রদলের বিপুলসংখ্যক কর্মী-সমর্থক সে সময় আন্দোলনে সরাসরি যুক্ত হন। সংগঠনটির এমএম কলেজ শাখার আহ্বায়ক হাসান ইমামও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের প্রতিহত করার আশ্বাসসহ যাবতীয় সহযোগিতা দেন।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত বলেন, ছাত্রদলকর্মীদের আমরা স্ব-স্ব প্রতিষ্ঠানের ইউনিফর্ম পরে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার নির্দেশনা দিই। প্রায় প্রতিদিন পালবাড়ি থেকে ধর্মতলা পর্যন্ত বৈষম্যবিরোধীদের মিছিলে আমাদের বিপুলসংখ্যক কর্মী অংশ নেন।
আমার দেশকে অমিত বলেন, ছাত্র আন্দোলনের বিভিন্ন স্তরের নেতার সঙ্গে আমাদের প্রতিদিনই যোগাযোগ হতো। মিছিলের রুট ঠিক করা, নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পানি-খাদ্য সরবরাহ করা থেকে আনুষঙ্গিক লজিস্টিক সাপোর্ট আমরা দিয়েছি। প্রশাসনের সঙ্গেও যোগাযোগ রক্ষা করা হতো। এমনকি আমি সে সময় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের এও বলেছি যে, শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। আমাদের দলের যে নিয়মিত মিছিল হচ্ছে, প্রয়োজনে সেখানে শক্তিপ্রয়োগ করুন। ছাত্রদের গায়ে আঘাত করলে আমরা সরাসরি তাদের সঙ্গে যোগ দেব।
এদিকে, আন্দোলন দানা বাঁধার পর তাতে সক্রিয় অংশ নেয় আরেক বৃহৎ সংগঠন ছাত্রশিবির। এ সংগঠনের তখনকার জেলা সভাপতি মোস্তফা কামাল আমার দেশকে বলেন, আমাদের পুরো শক্তি যশোরের আন্দোলনে নিযুক্ত করি। শিবির নেতারা আন্দোলনস্থলের আশপাশে থাকতেন আর কর্মী-সমর্থকরা সক্রিয়ভাবে অংশ নিতেন। আমাদের সঙ্গে সাংগঠনিকভাবে যোগাযোগ হতো মূলত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা মাসুম বিল্লাহ ও আমানুল্লাহর।
বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ইকবাল কবির জাহিদ আমার দেশকে বলেন, আন্দোলনের শুরু থেকেই আমাদের ছাত্রসংগঠন বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর কর্মীরা সক্রিয় অংশ নেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মূল নেতৃত্বের সঙ্গে আমাদের সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল। বামপন্থিদের বড় অংশ এই আন্দোলনের পক্ষে ছিল। তবে সিপিবি ও উদীচীর একাংশের অবস্থান ছিল ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগের পক্ষে।
সমন্বয়ক রাশেদ খান ও মারুফ হাসান সুকর্ণ জানান, এর বাইরে উচ্চমাধ্যমিক ব্যাচ প্রথম থেকে এ আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শেষের কদিন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্সের ভূমিকাও ছিল চোখে পড়ার মতো। সাংবাদিক ইউনিয়ন যশোরের নেতৃত্ব ছাড়াও মাঠে থাকা সংবাদকর্মীদের একাংশ, সিপিবির আমিনুর রহমান হিরু, বাসদের মো. শাজাহান, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মোস্তফা কামাল মিন্টু, জামায়াতপন্থি আইনজীবী রুহিন বালুচসহ নানা শ্রেণি-পেশার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহায়তা পাওয়া গেছে।
তিনি আরো জানান, বিশেষ করে যবিপ্রবির অণুজীববিজ্ঞানের শিক্ষক ড. অভিনু কিবরিয়াসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেটওয়ার্কের দিকনির্দেশনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর মধ্যে প্রাচ্যসংঘ ও চারুপীঠের সংগঠকরা আন্দোলনের পক্ষে তৎপর ছিলেন। আর নারী শিক্ষার্থী-শিক্ষক, নারী-পুরুষ অভিভাবক, রিকশাচালক থেকে শুরু করে দোকান কর্মচারী, ফুটপাতের হকার, এমনকি সরকারি কর্মচারীদের অবদানও ছিল অবিস্মরণীয়।
এ সময় অসাবধানতাবশত তার শরীরে সার্ভিস তার স্পর্শ করলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে গুরুতর আহত হন। পরে স্থানীয়রা দ্রুত তাকে কুয়াকাটা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
৮ মিনিট আগেবুধবার ভোর রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ২৩০ পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলাম সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তিনি ওই এলাকার বারকোনা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে।
২১ মিনিট আগেমঙ্গলবার রাতে ১২টার দিকে তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ধাওয়া করে। এসময় চালসহ একটি অটোরিকশা জব্দ করলেও বাকি দুটি রিকশা দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়।
২৭ মিনিট আগেবিএনপি নেতা সামছুল ইসলাম জেলার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক। ছাড়া পাওয়া দুই আসামি হলেন, সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে রানা (৪০) ও একই কমিটির সদস্য মামুন আহমেদ (৩৮)।
৩৯ মিনিট আগে