পদ্মা সেতুর প্রভাবে যাত্রীসংকটে ধুঁকছে যশোর বিমানবন্দর

আহসান কবীর, যশোর
প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১২: ১২

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আকাশপথে যাতায়াতের একমাত্র কেন্দ্র ছিল যশোর বিমানবন্দর। বছর তিনেক আগেও এখান থেকে দৈনিক ১৭টির বেশি ফ্লাইট ওঠানামা করত। যাতায়াত করতেন হাজারো যাত্রী। এখন আর সেই দিন নেই। খাঁ-খাঁ করছে বিমানবন্দরটি। যাত্রীসংকটে অধিকাংশ সময় বেকার বসে থাকেন অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী। এখন দিনে একটি কিংবা দুটির বেশি ফ্লাইট চোখে পড়ে না। তাই স্থানীয়রাও ভুলে যেতে বসেছেন যে এখানে একসময় অন্যতম ব্যস্ততম রানওয়ে ছিল।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, পদ্মা সেতু চালুর পর রাজধানীর সঙ্গে সড়ক ও রেলযোগাযোগ সহজ হওয়ায় এয়ারলাইনসগুলো এই পথে যাত্রী পাচ্ছে না। তিন বছর আগে যে বিমানবন্দরে দিনে গড়ে ১৭টির বেশি ফ্লাইট যাতায়াত করত, এখন তা এক থেকে দুইয়ে নেমে এসেছে। অথচ বিমানবন্দরের রক্ষণাবেক্ষণ খরচ ও কর্মীসংখ্যা রয়ে গেছে আগের মতোই। ফ্লাইট কমে যাওয়ায় ক্ষতির মুখে পড়েছেন এয়ার টিকিট, সংশ্লিষ্ট যানবাহন ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে নানা পেশার মানুষ।

সড়ক ও রেলপথে আগে যশোর-ঢাকা চলাচলের জন্য প্রধান প্রতিবন্ধকতা ছিল পদ্মা নদী। যাত্রী ও যানবাহনের চাপে গোয়ালন্দ-পাটুরিয়া ফেরি ও লঞ্চঘাটের জ্যাম ছিল ভোগান্তির প্রধান কারণ। আর প্রায় গোটা উত্তরাঞ্চল ঘুরে যমুনা সেতু হয়ে ঢাকা যেতে হতো ট্রেনযাত্রীদের। মাওয়া পয়েন্টে পদ্মা নদীর ওপর বহুমুখী সেতু নির্মিত হওয়ায় যশোর-খুলনা থেকে ঢাকার দূরত্ব কমেছে। যাতায়াত অনেকটাই সহজ হয়েছে। এখন যশোর থেকে গড়ে সাড়ে তিন ও খুলনা থেকে গড়ে সাড়ে চার ঘণ্টায় ঢাকা যাওয়া যায় সড়কপথে। আর রেলপথে সময় লাগে এর চেয়ে প্রায় এক ঘণ্টা কম। ফলে যাত্রীরা আকাশপথ বাদ দিয়ে সড়ক ও রেলপথে যাতায়াতের দিকে ঝুঁকেছেন ব্যাপকভাবে।

২০১৮-১৯ সালের দিকটা ছিল যশোর বিমানবন্দরের সোনালি সময়। ওই সময় ঢাকা-যশোর-ঢাকা পথে গড়ে দিনে ইউএস-বাংলা সাতটি, নভো এয়ার সাতটি, বাংলাদেশ বিমান দুটি এবং রিজেন্ট এয়ার একটি ফ্লাইট পরিচালনা করত। এছাড়া ইউএস-বাংলা ও নভো এয়ার যশোর-চট্টগ্রাম ও যশোর-কক্সবাজার রুটেও কিছুদিন ফ্লাইট চালিয়েছে। এর বাইরে কক্সবাজার-যশোর রুটে কার্গো প্লেন চলাচল করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।

প্লেন চলাচলের ক্ষেত্রে প্রথম ধাক্কাটি আসে ২০২০ সালের মার্চের পর। সে সময় দেশে কোভিড-১৯-এর প্রাদুর্ভাব ঘটায় জনচলাচল সীমিত করা হয়। কমতে থাকে ফ্লাইটও। এরপর ২০২২ সালের ২৫ জুন পদ্মা সেতু চালুর পর সড়কপথে যশোর থেকে ঢাকার দূরত্ব ৬৪ কিলোমিটার কমে আসে। ফলে যশোর-খুলনার যাত্রীরা আকাশপথ এড়িয়ে ক্রমে সড়কপথের দিকে আকৃষ্ট হতে থাকেন। পরে পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকার সঙ্গে যশোর, খুলনা ও বেনাপোলের সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ শুরু হলে আরেক দফা যাত্রী হারায় উড়োজাহাজ। বর্তমানে ঢাকা-যশোর রুটে একমাত্র ইউএস-বাংলার একটি ফ্লাইট প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টায় ঢাকা থেকে ফ্লাই করে সোয়া ১০টায় যশোর নামে। এটি পৌনে ১১টায় ফ্লাই করে ঢাকা পৌঁছায় সাড়ে ১১টায়। একই এয়ারলাইনসের আরেকটি ফ্লাইট সপ্তাহে চার দিন সন্ধ্যায় ঢাকা-যশোর রুটে চলাচল করে।

ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনস যশোরের ব্যবস্থাপক সাব্বির হোসেন বলেন, ফ্লাইট সংখ্যা অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় তাদের কিছু কর্মী ঢাকা চলে গেছেন। অন্যদের অনেকটা অলস সময় কাটছে।

এদিকে, যশোর বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা, রক্ষণাবেক্ষণ, অপারেশন পরিচালনায় মোট ১০৮ জন কর্মী রয়েছেন। ফ্লাইট কমে যাওয়া সত্ত্বেও সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষকে এই জনবল পুষতে হচ্ছে।

এদিকে ফ্লাইট ও যাত্রী অস্বাভাবিক কমে যাওয়ায় নিদারুণ ক্ষতির মুখে পড়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। রমরমা থাকাকালে শুধু যশোরেই দেড় শতাধিক এয়ার টিকিট ব্যবসায়ী ছিলেন। এখন তা পঞ্চাশের নিচে নেমে এসেছে। টিকে থাকা এয়ার টিকিট ব্যবসায়ীরা শুধু আন্তর্জাতিক ফ্লাইটের ওপর নির্ভরশীল বলে জানান যশোরের বৈশাখী ট্যুরস অ্যান্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী আশরাফুজ্জামান রনি। এছাড়া যাত্রী না থাকায় অন্যান্য ব্যবসায়ও ধস নেমেছে। বিমানবন্দরকেন্দ্রিক রেস্তোরাঁ থেকে শুরু করে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসায়ীরা ভুগছেন গ্রাহক সংকটে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত