আ.লীগের ঘাঁটিতে সরব বিএনপি, ধীরগতি অন্য দলগুলোর

রফিকুল ইসলাম, দুর্গাপুর ও ওবায়দুল হক, কলমাকান্দা (নেত্রকোনা)
প্রকাশ : ২৫ জুলাই ২০২৫, ১২: ৪২

একসময় নেত্রকোনা-১ (দুর্গাপুর-কলমাকান্দা) আসনটি আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত ছিল। ভারতীয় সীমান্তবর্তী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী অধ্যুষিত দুর্গাপুর-কলমাকান্দা উপজেলায় এখন আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীকে দেখা যায় না।

বিজ্ঞাপন

ফ্যাসিবাদমুক্ত পরিবেশে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। গত ১৬ বছর সিপিবি ছাড়া আর কোনো দলকে এই আসনের কোনো জায়গায় প্রকাশ্যে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেওয়া হয়নি।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী জেলহাজতে রয়েছে, আবার বেশিরভাগ রয়েছে আত্মগোপনে। সেই সুযোগে ফাঁকা মাঠে বিএনপির বৃহৎ একটি পক্ষ পুরোদমে চালিয়ে যাচ্ছে তাদের রাজনৈতিক ও জনকল্যাণমূলক কর্মকাণ্ড, যেমন- দুই উপজেলায় বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসাসেবাসহ নানা চিকিৎসাসেবা।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির একাধিক সম্ভাব্য প্রার্থী তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে দলের নেতাকর্মীদের শুভেচ্ছা জানিয়ে ব্যানার পোস্টার, বিলবোর্ড টানিয়েছেন।

বিএনপির পক্ষ থেকে দলীয় সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে যারা মাঠে আছেন তারা হলেন— কলমাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা বিএনপি কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।

দুর্গাপুর উপজেলার বাসিন্দা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাবেক ছাত্রদল নেতা অ্যাডভোকেট ড. হামিদুর রহমান রাশেদ এবং জাতীয়তাবাদী ফর আইনজীবি ফোরাম, ঢাকা ট্যাক্স বার শাখা, সদস্য ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম কেন্দ্রীয় কমিটি দপ্তর সম্পাদক মোস্তফা নুরুল আলম খান ।

জাতীয় পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী কলমাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা দলের নির্বাহী সদস্য কেন্দ্রীয় কমিটি ও কলমাকান্দা উপজেলা কমিটির সহসভাপতি মো. আনোয়ার হোসেন খান শান্ত ।

বাংলাদের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) পক্ষ থেকে দুর্গাপুর উপজেলার বাসিন্দা কেন্দ্রীয় কমিটির সম্মানিত সদস্য ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালের নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী কমরেড মণিসিংহের একমাত্র সন্তান ডা. দিবালোক সিংহ।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী কলমাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা মাওলানা আবুল হাসিম দলীয় সভা-সমাবেশ করছেন। তবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কোনো সম্ভাব্য প্রার্থীর নাম ঘোষণা করা হয়নি।

এই আসনের দুই উপজেলার জনগণকে শুভেচ্ছা জানানোর মাধ্যমে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছেন তারা। আসনের সদরসহ ইউনিয়নগুলোতে পথসভা করে যাচ্ছেন। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে যোগ দিচ্ছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মী ও ভোটারদের নানা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।

জুলাই বিপ্লবে আহত-নিহতদের পরিবারের মাঝে ঈদসামগ্রী তুলে দেওয়া, আহতদের চিকিৎসার ভার নেওয়া, গরিব-দুঃখী খুঁজে বের করে তাদের সাহায্য করা, নিজেরা ইজারা নিয়ে অটোরিকশা টোল আদায় ফ্রি করে দেওয়া, ফেরি পারাপারে জনমাশুল ফ্রি করে দেওয়া, হাট-বাজারের ছোট মহালগুলো থেকে খাজনা আদায় না করা ইত্যাদি কাজ করছে বিএনপির কেন্দ্রীয় আইনবিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামালের নির্দেশে তার সমর্থকরা।

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীকে মরহুম জালাল উদ্দিন তালুকদারকে হারিয়ে বিএনপির আব্দুল করিম আব্বাসী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই আসনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল করিম আব্বাসীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল। অবশ্য ওই সংসদ ১১ দিন পর ভেঙে দেওয়া হয়েছিল।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জালাল উদ্দিন তালুকদার তার প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল করিম আব্বাসীকে হারিয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জালাল উদ্দিন তালুকদারকে হারিয়ে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী বিএনপির আব্দুল করিম আব্বাসী নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মোশতাক আহমেদ রুহী বিএনপি প্রার্থী ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে হারান।

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জালাল উদ্দিন তালুকদারের ছেলে শাহ্‌ কুতুব উদ্দিন তালুকদার রুয়েলকে হারিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী ছবি বিশ্বাস নির্বাচিত হয়েছিলেন।

২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী ব্যারিস্টার কায়সার কামালকে হারিয়ে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মানু মজুমদার নির্বাচিত হয়েছিলেন। ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রতীকের প্রার্থী মোশতাক আহমেদ রুহী নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বিএনপির অফিস মূল দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের পদচারণায় প্রতিনিয়ত সরগরম হয়ে থাকে। এখান থেকেই পরিচালিত হয় এজেন্ডাভিত্তিক প্রতিদিনের দলীয় কার্যক্রম।

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর তেরীবাজারের নেতা মো. রোস্তম আলীর আবাসিক গৃহের একপাশে সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে, তবে কার্যক্রমের গতিশীলতা নেই। এছাড়াও জামায়াতে ইসলামী কলমাকান্দা উপজেলার বাসিন্দা নেত্রকোনা শাখার শূরা ও কর্মপরিষদের সদস্য এবং কলমাকান্দা উপজেলা আমির মাওলানা আবুল হাসেম মাঠে রয়েছেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উপজেলা কমিটি থাকলেও কার্যক্রম তেমন একটা চোখে পড়ে না। এনসিপির কার্যালয় সাইনবোর্ড আছে, তবে কমিটি বা মাঠে কার্যক্রম নেই।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত