ময়মনসিংহে আ.লীগ নেতার কাউন্টার ভাঙচুর, বাস চলাচল বন্ধ

জেলা প্রতিনিধি, ময়মনসিংহ
প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৩১
আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০২৫, ২০: ৩৯

ময়মনসিংহ-ঢাকা রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীম। মঙ্গলবার দুপুরে মাসকান্দা কেন্দ্রীয় বাসস্ট্যান্ডে ইউনাইটেড বাস সার্ভিসের কাউন্টারে বিক্ষুব্ধ জনতা হামলা চালানোর পর সে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, টিকেট কাউন্টার ভাঙচুরের সময় হামলাকারীরা “শামীমের কোনো বাস চলবে না”, “ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতার বাস চাই না রাস্তায়” স্লোগান দেয়।

বিজ্ঞাপন

হামলার কারণ হিসেবে স্থানীয় বাস মালিক ও কর্মচারীরা বলছেন, আজ দুপুরে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী একটি অংশ আমিনুল হক শামীমের ‘বাস সিন্ডিকেট’ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং ইউনাইটেড পরিবহনের কাউন্টার থেকে শামীমের বাস বন্ধ রাখতে বলে। কিন্তু কাউন্টারের কর্মচারীরা এ সময় বাকবিতণ্ডায় জড়ালে ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনার পর দুপুর ১টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ, ময়মনসিংহ থেকে শেরপুর, নেত্রকোণা, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া, পূর্বধলা, কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর ময়মনসিংহে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানান জেলা মোটর মালিক সমিতির সভাপতি আলমগীর মাহমুদ আলম।

তিনি বলেন, “আমি ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে ফিরছি। গফরগাঁও আসতেই একজন ফোন করে মাসকান্দার ঢাকা বাস কাউন্টার ভাঙচুর ও লুটপাটের কথা জানায়। তবে কী কারণে, কে বা কারা ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে, তা এখনো জানা যায়নি। ঘটনাস্থলে গিয়ে বিস্তারিত বলতে পারব।”

জানা গেছে, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি আমিনুল হক শামীমের মালিকানাধীন ‘শামীম এন্টারপ্রাইজ’ ও ইউনাইটেড পরিবহনের শতাধিক বাস এখনো প্রশাসনের আশীর্বাদে মহাসড়কে নির্বিঘ্নে চলাচল করছে। যা এর আগেও সংবাদে প্রকাশিত হয়েছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, শামীমের এই চলমান ব্যবসায় সরাসরি সহায়তা দিচ্ছেন ময়মনসিংহ জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এম এম মোহাইমেনুর রশীদ, যিনি আওয়ামী লীগ সরকারের সময় নিজেকে ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিতেন। তাঁর বিতর্কিত ভূমিকা এবং শামীমের পরিবহন ব্যবসায় তার সহযোগিতা নিয়ে পূর্বেও ‘আমার দেশ’-এ রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল। নানা অভিযোগে তাঁকে একাধিকবার বদলি করা হলেও, অজ্ঞাত শক্তির ছত্রছায়ায় তিনি এখনো ময়মনসিংহে বহাল আছেন।

ময়মনসিংহ কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শিবিরুল ইসলাম বলেন, “গত বছরের ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের আগে যারা বাসস্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ করত, এখনো তারা করছে—এমন অভিযোগে কিছু অজ্ঞাত লোক হামলা চালিয়েছে।” বিষয়টি নিয়ে বাস মালিক সমিতির নেতা এবং ঢাকায় কথা বলে সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, আমিনুল হক শামীম দীর্ঘদিন ধরেই বিএনপি ঘরানার কিছু বাস মালিকের সঙ্গে জোট বেঁধে বাস সিন্ডিকেট ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। তার পক্ষে কাজ করছেন মোহাইমেনুর রশীদের মতো পুলিশ কর্মকর্তা, যিনি বর্তমানে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িকভাবে শামীমের সহযোগী।

তবে অনুসন্ধানে ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। বাস কাউন্টারে ভাঙচুরের পর আমিনুল হক শামীম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাইমেনুর রশিদ পরিবহন শ্রমিকদের ইন্ধন দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ রাখতে বলেন, যাতে সাধারণ মানুষ ভোগান্তিতে পড়েন এবং পরিবহন খাতে অস্থিরতা তৈরি হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত