বিএনপিতে কোন্দল, মাঠে তৎপর জামায়াত প্রার্থী

খাদেমুল ইসলাম, মাদারগঞ্জ (জামালপুর)
প্রকাশ : ১৭ জুলাই ২০২৫, ১১: ৩৩

জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) উপজেলা নিয়ে গঠিত আসনটি মূলত কার্যক্রম নিষিদ্ধ ও নিবন্ধন স্থগিত হওয়া আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। স্বাধীনতার পর গত ১২টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী আটবার, বিএনপি দুইবার, বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগ একবার এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থী একবার এ আসনে নির্বাচিত হন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম সাতবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আসনটিতে বিএনপির ভোটব্যাংক থাকলেও অভ্যন্তরীণ কোন্দল ও জনপ্রিয় প্রার্থীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় বারবার আসনটি বিএনপি হাতছাড়া হয়েছে। ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর এ আসনে মাঠের রাজনীতিতে ও ভোট নিয়ে নতুন সমীকরণ চলছে। ফলে বিএনপি তাদের হারানো আসনটি পুনরুদ্ধারে জোর তৎপরতা চালাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

আগামী ফেব্রুয়ারিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা জেলার গুরুত্বপূর্ণ এ আসনে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। বিএনপির নতুন ও পুরাতন সাতজন সম্ভাব্য মনোনয়নপ্রত্যাশী কেন্দ্রে লবিং-তদবিরের পাশাপাশি এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন। বসে নেই জামায়াতে ইসলামী, এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদও। সম্ভাব্য প্রার্থীরা দলীয় রাজনৈতিক কর্মসূচির বাইরে সুযোগ পেলেই গণসংযোগের পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে। গেল ঈদুল আজহার আগে ও পরে পোস্টার-ব্যানার সাঁটিয়ে শুভেচ্ছা জানানো এবং দোয়া চাওয়ার ধারাও অব্যাহত রয়েছে।

জামালপুর-৩ আসনে মূলত লড়াই হবে বিএনপি ও জামায়াতের। তবে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরা ভোটের হিসাব-নিকাশ পাল্টে দিতে পারে। যার ফলে বিএনপির প্রার্থী বাছাইয়ে ভুল কিংবা দলের হেভিওয়েট নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হলে আসনটি আবারও হাতছাড়া হতে পাবে বলে মনে করছেন দলটির নেতাকর্মীরা।

এ আসনে ধানের শীষ প্রতীকে মনোনয়ন পেতে বিএনপি থেকে যারা প্রার্থী হতে চাচ্ছেন তারা হলেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সহসম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সহসম্পাদক ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল, বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক রেজাবুদ্দৌলা চৌধুরী, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি গোলাম রব্বানী, কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহসভাপতি দৌলতুজ্জামান আনছারী, সাবেক এমপি আবুল হোসেনের ছেলে অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল রফিকুল হান্নান ও জেলা বিএনপির সাবেক অর্থবিষয়ক সম্পাদক জাকির হোসেন। এ আসনটিতে ২০০৮ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী ছিলেন মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল।

অপরদিকে, এ আসনে জামায়াতে ইসলামী একক প্রার্থী জেলা জামায়াতে ইসলামীর কর্মপরিষদ সদস্য অধ্যাপক মাওলানা মো. মজিবুর রহমান আজাদী। তিনি প্রচারণা চালাচ্ছেন, দলীয় কর্মসূচির পাশাপাশি যোগ দিচ্ছেন সামাজিক অনুষ্ঠানে। মতবিনিময় করছেন গ্রামগঞ্জের হাটবাজারে। জেলা জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সাধারণ সম্পাদক মুফতি শামসুদ্দিন, মেলান্দহ উপজেলা ইসলামী আন্দোলনের সাবেক সভাপতি মাওলানা বোরহান উদ্দিন, জেলা খেলাফত মসলিসের সহসাংগঠনিক সম্পাদক মুফতি রফিকুল ইসলাম, জেলা জাকের পার্টির সাধারণ সম্পাদক মো. ইউসুফ আলী সম্ভাব্য প্রার্থী হিসাবে আলোচনায় রয়েছেন। এ ছাড়া জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমান মাঠে সরব রয়েছেন। দল গোছানোর পাশাপাশি তিনি তার নির্বাচনি এলাকাতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন।

এ ছাড়া গণঅধিকার পরিষদের সম্ভাব্য প্রার্থী দলটির ঢাকার বিমানবন্দর থানার সদস্য সচিব রুবেল মিয়া, জেলা গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি আরিফুল ইসলাম তুহিন, জেলা গণঅধিকার পরিষদের সহসভাপতি আল আমিন ও জেলা যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি লিটন মিয়া এলাকায় সরব রয়েছেন। আসনটিতে আওয়ামী লীগের মিত্র জাতীয় পার্টি ও বাম ঘরানার রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা এখনো দৃশ্যমান হয়নি।

বিএনপির একাধিক নেতাকর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৫ আগস্টের আগে দলীয় কর্মসূচিতে যাদের দেখা যায়নি, এখন তাদের আনাগোনায় দলীয় কার্যালয় জমজমাট। যারা ঝামেলা এড়াতে দলের কর্মসূচি থেকে দূরে থাকতেন, তারাও এখন সক্রিয়। জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এলাকায় গণসংযোগ চালাচ্ছেন তারা। এলাকায় জনপ্রিয়, বিগত আন্দোলনে ছিলেন, দলের প্রতি আনুগত্য রয়েছেন এবং দুঃসময়ে নেতাকর্মীদের পাশে ছিলেনÑ এমন নেতাকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবি তৃণমূলের নেতাকর্মীদের। তবে দল যাকে মনোনয়ন দেবে, তার পক্ষেই কাজ করার কথাও জানান তারা।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল বলেন, আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় আমার নামে ১১টি মামলা হয়েছে। পাঁচবার গ্রেপ্তার হয়েছি এবং আট মাসেরও অধিক সময় কারাবন্দি ছিলাম। শত নির্যাতনের মাঝেও নেতাকর্মীদের বুকে আগলে রেখেছি। মেলান্দহ-মাদারগঞ্জের নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে আমার গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। পাশাপাশি দলের প্রতি আনুগত্য, আত্মত্যাগ, নির্যাতন, মামলাসহ সবকিছু বিবেচনায় নিয়ে নীতিনির্ধারণী মহল আমাকে মনোনয়ন দেবে বলে আমি আত্মবিশ্বাসী। আর জনগণের বিপুল ভোটে ধানের শীষ বিজয়ী হবে।

বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী ব্যারিস্টার বদরুদ্দোজা বাদল বলেন, বিগত ১৭ বছর আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের সময় বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে অনেক ‘গায়েবি’ ও ‘হয়রানিমূলক’ মামলা হয়েছে। তাদেরকে উচ্চ আদালতে মাধ্যমে জামিনের ব্যবস্থা করিয়েছি। দলের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের দুঃসময়ে পাশে থেকেছি। নেতাকর্মীদের দলীয় কর্মসূচিতে চাঙা রাখতে নিরলসভাবে কাজ করছি। নেতাকর্মী ও ভোটারদের মাঝে আমার জনপ্রিয়তা রয়েছে। আশা করছি, এসব বিষয় মূল্যায়ন করে দল আমাকে মনোনয়ন দেবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম সদস্য সচিব লুৎফর রহমান বলেন, এনসিপি নতুন একটি দল। অল্প দিনেই সাধারণ মানুষের মাঝে দলটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। এখন আমরা দল গোছানোর পাশাপাশি এলাকাতে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছি। এলাকায় ভোটারদের ব্যাপক সাড়াও পাচ্ছি।

জামায়াতের প্রার্থী অধ্যাপক মাওলানা মো. মজিবুর রহমান আজাদী বলেন, জামায়াতে ইসলামী একটি ইসলামিক আদর্শিক দল। যার ফলে দিন যতই যাচ্ছে, ততই জামায়াতে ইসলামীর জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আমরা এবার অত্যন্ত সুসংগঠিত হয়ে মাঠে নামছি। আশা করি, জনগণ আমাদের ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত