হারানো আসন ফিরে পেতে চায় বিএনপি-জামায়াত

সাইফুল ইসলাম, গোদাগাড়ী (রাজশাহী)
প্রকাশ : ১১ জুলাই ২০২৫, ১০: ০৭
আপডেট : ১১ জুলাই ২০২৫, ১০: ০৯

গোদাগাড়ীতে পদ্মার ধু-ধু বালুচর, তানোরে ঠা ঠা বরেন্দ্রভূমি— এই দুই ভৌগোলিক বৈচিত্র্যেঘেরা রাজশাহী-১ (গোদাগাড়ী-তানোর) আসনের মানুষের প্রত্যাশাও একটু ভিন্নমাত্রার। সেই প্রত্যাশা পূরণের দায়িত্ব যার কাঁধে পড়ে, ভোটের আগে তাকে ঘিরেই হিসাব-নিকাশের পালা চলে। গেল তিনটি বিতর্কিত নির্বাচনে সে হিসাব মেলেনি। এবার তাই ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদে বরেন্দ্রভূমির ভোটাররা চাইছেন একজন যোগ্য প্রতিনিধি। এই আসনে একটি বড় সংখ্যা রয়েছে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ও সংখ্যালঘু ভোটার।

বিজ্ঞাপন

কৃষিজীবী জনগণ, সীমান্ত পরিস্থিতি ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি— সব মিলিয়ে এই আসনে নির্বাচন হয়ে থাকে ইস্যুকেন্দ্রিক। ফলে দলীয় জোট বা স্রেফ জনপ্রিয়তা নয়, প্রার্থী বাছাইয়ে এ এলাকার ভোটাররা দেখেন অভিজ্ঞতা, গ্রহণযোগ্যতা এবং এলাকায় বাস্তব কাজের নজির। এবার কার্যত আওয়ামী লীগ নেই। ফলে বিএনপি ও জামায়াত ধরে নিচ্ছে এখানে লড়াই হবে এই দুই দলের।

খরাপ্রবণ বরেন্দ্র অঞ্চল আর পানিশূন্য পদ্মা তীরবর্তী এলাকার নদীভাঙন, কৃষি এবং সীমান্ত ব্যবস্থাপনা— এই তিনটি বড় ইস্যুই রাজশাহী-১ আসনকে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে। জাতীয় নীতিনির্ধারণেও এর প্রভাব পড়ে। কিন্তু বছরের পর বছর এই আসনের সবচেয়ে বড় সংকট ভারতের সীমান্তঘেঁষা গোদাগাড়ী অংশে মাদকের বিস্তার। গত দেড় যুগে এ সমস্যার প্রকোপ আরো বেড়েছে।

২০০৮ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত চারবারের এমপি হিসেবে দায়িত্বে থাকা আওয়ামী লীগ নেতা ওমর ফারুক চৌধুরী নিজেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত মাদকের পৃষ্ঠপোষক। যার কারণে এবার পরিচ্ছন্ন ও যোগ্য ব্যক্তিকেই খুঁজবেন ভোটাররা।

আওয়ামী লীগের ওমর ফারুকের আগে তিনবার এ আসনের এমপি ছিলেন বিএনপির প্রয়াত ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার আমিনুল হক।

২০০১-৬ মেয়াদে তিনি ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। তার সময়েই গোদাগাড়ী-তানোরের দুর্গম কাঁচা রাস্তাগুলো পাকাকরণসহ দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়। আমিনুলের আগে ১৯৮৬ সালে এ আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর বর্তমান কেন্দ্রের নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। এবার ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে তিনিই এ আসনের জামায়াতের একক প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন। নিরবচ্ছিন্নভাবে চালিয়ে যাচ্ছেন প্রচার-প্রচারণা।

কয়েক মাস ধরে বিএনপির একাধিক প্রার্থী ও জামায়াতে ইসলামীর একক প্রার্থী গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনি এলাকায় বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টার, তোরণ সাঁটিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ছাড়াও খেলাধুলা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এলাকার নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা ।

এ আসনে দলের মনোনয়ন পেতে জনপ্রিয়তার পরীক্ষা দিতে মাঠে নেমেছেন বিএনপির চার নেতা। প্রত্যেকেই প্রতিদিন নিজ নিজ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে সভা-সমাবেশ চালিয়ে যাচ্ছেন। এ আসনে মনোনয়ন চান ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ছোট ভাই বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল (অব.) শরীফ উদ্দিন। ব্যারিস্টার আমিনুল হকের উত্তরসূরি হতে চান তার ভাগনে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলনও। এ ছাড়া মাঠে আছেন গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সদস্য শিল্পপতি সুলতানুল ইসলাম তারেক ও জিয়া পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সালাম বিপ্লব।

ব্যারিস্টার আমিনুল হকের মৃত্যুর পর এ আসনে মনোনয়নের জন্য সক্রিয় হয়েছেন শরীফ উদ্দীন ও সুলতানুল ইসলাম তারেক। সাম্প্রতিককালে মাঠে দেখা যাচ্ছে বিপ্লবকে। তবে তাদেরও আগে থেকে আওয়ামী শাসনামলে বিএনপির নেতাকর্মীদের মামলাগুলো বিনামূল্যে পরিচালনা করে তৃণমূলে যোগাযোগ স্থাপন করেছেন ব্যারিস্টার আমিনুল হকের ভাগনে ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন।

গোদাগাড়ী উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি ও সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার মাহফুজুর রহমান মিলন বলেন, ‘এবার শুধু শিক্ষাগত যোগ্যতা বা বড় পদে ছিলেন এসব বিষয় নয়। বরং আন্দোলন-সংগ্রামে বিগত বছরগুলোতে দলের প্রতি আনুগত্য অবদানের কথা মাথায় রেখে মনোনয়ন প্রত্যাশীদের বিবেচনা করা হবে বলে আমি মনে করি।

পরিবর্তনের স্বপ্ন জামায়াতের বিএনপির পাশাপাশি এবার মাঠে দৃশ্যমান সক্রিয় জামায়াতে ইসলামী। কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান গোদাগাড়ী ও তানোরে নিয়মিত কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। দুই উপজেলার কয়েকটি এলাকায় দলটির সংগঠন বেশ শক্তিশালী। সেই ঘাঁটিগুলো কাজে লাগিয়ে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে জামায়াত।

জামায়াতের রাজশাহী জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল খালেক বলেন, ‘দীর্ঘ ৫৪ বছর মানুষ শুধু হাত বদলের রাজনীতি দেখেছে। এবার তারা চায় সত্যিকার পরিবর্তন। ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে জামায়াতই এখন একমাত্র বিকল্প।

তবে রাজশাহী-১ সংসদীয় আসনে বিএনপির একাধিক ও জামায়াতের একক প্রার্থী নির্বাচনি প্রচার শুরু করলেও অন্য কোনো রাজনৈতিক দলের প্রার্থী নির্বাচনি প্রচার-প্রচারণায় মাঠে নেই— এমনকি অন্য কোনো প্রার্থীর নামও সাংগঠনিক কার্যক্রমে দেখা যাচ্ছে না। বিএনপির পক্ষ থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীরা নিজ নিজ আসনে কর্মী সমাবেশ, সভা-মিছিল এবং মোটরসাইকেল শোডাউনের মাধ্যমে জনসমর্থন লাভের চেষ্টা করছেন। একইভাবে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থীরাও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ সভা-সমাবেশের মাধ্যমে ভোটারদের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত