স্কুল ভেঙে ফেলায় শিক্ষাবঞ্চিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুরা

আলি হায়দার, ভোলাহাট (চাঁপাইনবাবগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৮ জুলাই ২০২৫, ০৬: ১১
ছবি: আমার দেশ

চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার সদর ইউনিয়নের চরধরমপুর গ্রামের মহানন্দা নদীরতীর টাঙ্গন নামক স্থানে ১০০ আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি করে সরকার। উপজেলার ভূমিহীন পরিবারগুলোকে বাড়ি বরাদ্দ দিয়ে গ্রামটির নাম রাখা হয় মুজিব পল্লি। কাছে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় ২০২২ সালে আশ্রয়ণ প্রকল্পের শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নির্মাণ করা হয়। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে পতিত শেখ হাসিনা সরকার পালিয়ে গেলে পূর্বের বিরোধকে কেন্দ্র করে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা বিদ্যালয়টি ভেঙে ফেলে। এতে শিক্ষাবঞ্চিত হয়ে পড়েছে সেখানকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের শতাধিক পরিবারের শিশুরা।

শহীদ সাগরের মায়ের কান্না আজও থামছে না

বিজ্ঞাপন

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মিত জমি চরধরমপুর কবরস্থানের দখলে ছিল। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন খাসজমি দাবি করে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি নির্মাণ করে। এ নিয়ে এলাকাবাসী ও প্রশাসনের সঙ্গে জমি সংক্রান্ত বিরোধ তৈরি হয় এবং মামলা মোকদ্দমা পর্যন্ত গড়ায়। শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলে একদল বিক্ষুব্ধ জনতা প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে ফেলে এবং বই-খাতা, আসবাবপত্র পুড়িয়ে দেই।

সরেজমিনে গিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটিতে চারজন শিক্ষক বিনা বেতনে পাঠদান করাছিলেন। শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম এখন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে আছে। আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয় দূরে হওয়ায় বিদ্যালয়ে শিশুদের

যেতে অনিহা দেখা যাচ্ছে। অনেক শিশু লেখাপড়া থেকে ঝরে পড়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে শিশুদের ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়বে। বিদ্যালয় সংস্কার ও শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকরা। দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র জুবায়ের, স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর থেকে আর পড়ালেখা করছে না। আহাদ আলী ক্লাসে অনেক পড়াশোনা করত কিন্তু বিদ্যালয় ভেঙে দেওয়ার পর সে লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছে। রকি পার্শ্ববর্তী স্কুলে ভর্তি হলেও স্কুলে যায় না। রবিয়া ক্লাস ফোরে পড়ে কিন্তু স্কুলটি দূরে হওয়ায় নিয়মিত স্কুলে যেতে পারছে না।

বাঁশখালীতে স্বেচ্ছায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ

বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে শিশুদের পড়ালেখা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিভাবকরা জানান। বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে বাচ্চাদের দূরের স্কুলে যেতে হচ্ছে। এখন বাচ্চারা সপ্তাহে দুই-তিন দিন স্কুলে যায়, তাও ঠিকভাবে নয়। সম্প্রতি নদীতে পানি বাড়ায় খালে পানি প্রবেশ করেছে, যা যাতায়াতে আরো সমস্যা তৈরি করেছে। তাই এলাকাবাসীর দাবি, আগের স্কুলটি পুনরায় চালু করা হোক।

মোসা. রেজিনা বলেন, আমার একটা ছেলে আছে, সে ক্লাস ফোরে পড়ে। এখন তাকে দূরের স্কুলে যেতে হচ্ছে। যাতায়াতে অনেক সমস্যা হচ্ছে। অনেক শিশু দূরের স্কুলে যেতে চায় না, তারা স্কুলে যাওয়ার পথে বাগানে খেলতে শুরু করে দিচ্ছে। আলমাস হোসেন বলেন, আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েরা পার্শ্ববর্তী স্কুলে যেতে বাধ্য হচ্ছে। কিন্তু খালে পানি জমে যাওয়ায় নৌকা দিয়ে পারাপার হতে হচ্ছে, যার জন্য প্রতিজনকে ১০ টাকা করে নৌকা ভাড়া দিতে হচ্ছে।

প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মো. সামিউল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়টি নির্মাণের শুরু থেকে আমরা চারজন শিক্ষক মিলে বিনা বেতনে প্রায় দুই বছর ধরে শিক্ষাদান করেছি। কিন্তু গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মাধ্যমে বিদ্যালয়টি ভাঙচুর করা হয়। তারপর থেকে ক্লাস কার্যক্রম সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে আছে। এখানকার শিশুরা এখন বাধ্য হয়ে প্রায় দুই থেকে তিন কিলোমিটার দূরে গিয়ে পড়াশোনা করছে, যা তাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। আমরা চাই, বিদ্যালয়টি দ্রুত চালু করা হোক, যাতে শিশুদের শিক্ষা জীবন আর ব্যাহত না হয়।

এ বিষয়ে ভোলাহাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জান বলেন, পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত