বগুড়ায় সারের কৃত্রিম সংকটে বিপাকে হাজারও প্রান্তিক কৃষক

সবুর শাহ লোটাস, বগুড়া
প্রকাশ : ২৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮: ৩৫

বগুড়ায় চলতি আমন মৌসুমে ৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদ হয়েছে। এ সময় সারের ব্যাপক চাহিদা থাকায় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেছে একশ্রেণির অসাধু ডিলার। সরকার অনুমোদিত ডিলারদের কাছ থেকে নির্ধারিত মূল্যে সার না পেয়ে বিপাকে পড়েছেন জেলার হাজারও প্রান্তিক কৃষক। সরকার নির্ধারিত দামে ইউরিয়া ও টিএসপি কেজি ২৭ টাকা, এমওপি ২১ টাকা আর ডিএপি ২২ টাকা হলেও সেই দাম শুধুই কাগজ-কলমে। খোলাবাজারে এর প্রতিফলন না থাকায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।

একটি সূত্রে জানা গেছে, বিএডিসি ও বিসিআইসি দুটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমানে সাত হাজার ১৫০ জন ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে বিএডিসি অনুমোদিত পাঁচ হাজার ২২ জন এবং বিসিআইসির দুই হাজার ১২৮ জন। যাদের অধিকাংশই বিগত আওয়ামী লীগ আমলে নিয়োগ পাওয়া। এমন অনেক ডিলার রয়েছেন যারা একই ব্যক্তি, ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক ডিলারশিপ নিয়ে এ খাত কুক্ষিগত করে রেখেছেন। তারাই এখন নেপথ্যে থেকে যেসব জেলায় সার ব্যবসায়ীদের নতুন কমিটি হয়েছে তাদের সঙ্গে যোগ হয়ে সংকট তৈরি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তা উল্লেখ রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

প্রতিবেদনের বিষয়টি নিশ্চিত করে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের প্রধান অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সাল ইমাম সূত্রে জানা গেছে, গোয়েন্দা প্রতিবেদনের পর আমরা সার ডিলার নিয়োগ নীতিমালা পরিবর্তন করছি। আমরা দেখছি অতীতে কারা অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন, কারা অনিয়ম করছেন। তাদের বিষয়ে আমরা মাঠপর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করছি। এরই মধ্যে অনেক তথ্য পেয়েছি। তিনি বলেন, যারা অনিয়মে জড়িত ও অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে, তাদের সবার ডিলার লাইসেন্স বাতিল হবে। প্রয়োজনে আইনের আওতায় আনা হবে।

জেলা কৃষি কর্মকর্তা সোহেল মো. ছামছুদ্দিন ফিরোজ বলেন, আমরা সার বিতরণে প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে জিরো টলারেন্সে আছি। ইতোমধ্যেই বগুড়ার গাবতলী, শিবগঞ্জ, নন্দীগ্রাম উপজেলার ডিলারকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে শাস্তি দেওয়া হয়েছে। এরপরও কিছু দোকানে ডিলারের নির্ধারিত দামের বেশি বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা যায়, বর্তমানে দেশের বিভিন্ন গুদামে ছয় লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ টন ইউরিয়া সারের মজুত রয়েছে। এছাড়া দুই লাখ ১৭ হাজার টন টিএসপি, দুই লাখ ৭৩ হাজার টন ডিএপি এবং দুই লাখ ৮১ হাজার টন এমওপি সার মজুত রয়েছে। এই সার দিয়ে আগামী আমন মৌসুমে তিন মাসের সারের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে।

বিএডিসির তথ্য বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সারা দেশে জুলাই মাসের চাহিদা অনুযায়ী সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করার পরও বর্তমানে বিভিন্ন গুদামে ছয় লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ টন ইউরিয়া সার মজুত রয়েছে। এছাড়া দুই লাখ ১৭ হাজার টন টিএসপি, দুই লাখ ৭৩ হাজার টন ডিএপি এবং দুই লাখ ৮১ হাজার টন এমওপি মজুত রয়েছে। এই সার দিয়ে তিন মাসের সারের চাহিদা মেটানো সম্ভব। পাশাপাশি ২৫ হাজার টন টিএসপি, এক লাখ ১০ হাজার টন এমওপি এবং এক লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি নতুন করে দেশে পৌঁছেছে।

কৃষক ও বিএডিসির সূত্র জানিয়েছে, দেশে বার্ষিক সারের চাহিদা তিনটি মৌসুমে ভাগ করা হয়। সবচেয়ে বেশি সার প্রয়োজন হয় রবি মৌসুমে অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চে (কার্তিক-ফাল্গুন)। এ সময় মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ সার প্রয়োজন হয়। পরবর্তী মৌসুম আউশ, যা এপ্রিল থেকে জুলাই (চৈত্র-আষাঢ়) পর্যন্ত। এ সময় চাহিদার ৩০ শতাংশ এবং আমন মৌসুমে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর (আশ্বিন-মাঘ) অবশিষ্ট ৩০ শতাংশ সারের প্রয়োজন হয়।

গত ১৭ আগস্ট উপজেলার আরিয়া ইউনিয়নে এই অভিযান চালান জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফয়সাল মাহমুদ। সরকারি দামে এক বস্তা টিএসপি সারের দাম এক হাজার ৩৫০ টাকা। কিন্তু কৃষকদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা বেশি নিয়ে মেসার্স নূর কৃষি ভাণ্ডারের মালিক প্রতি বস্তা বিক্রি করছিলেন এক হাজার ৭৫০ টাকায়। অভিযানে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা ফারহানা আফরোজা প্রসিকিউশন দেন। এদিকে ১২টি উপজেলাÑ বগুড়া সদর, গাবতলী, শাজাহানপুর, নন্দীগ্রাম, শিবগঞ্জ, কাহালু, শেরপুর, দুপচাচিয়া, আদমদীঘি, ধুনট, সোনাতলা, সারিয়াকান্দির অবস্থা একই রকম।

এদিকে জেলা ফার্টিলাইজার অ্যাসোসিয়েশন, বগুড়া জেলা ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা এনামুল হক এনাম বলেন, প্রশাসনের সঙ্গে আমরাও কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করছি। তবে কিছু কিছু ডিলার অসাধু হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ অনেককেই ডিলারশিপ দিয়েছে তাদের মধ্যে অনেকেই পলাতক। কেউ কেউ তাদের সার সংগ্রহ করে অতিরিক্ত দামে বিক্রয় করছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে। যা আমরা প্রশাসনের কাছে অবগত করেছি।

জেলায় কৃষি মন্ত্রণালয় আগস্ট মাসে কৃষকদের মাঝে ২ হাজার মে.টন টিএসপি, এর মধ্যে (বিসিআইসি ২৭৪ মে.টন এবং বিএডিসি ১৭২৬ মে.টন) এবং ৩ হাজার ২২ টন ডিএপি (এর মধ্যে বিএডিসি ২৭শ ও বিসিআইসি ৩২০ মে.টন) বরাদ্দ করা হয়। এছাড়া ৯ হাজার ৮৬৭ মে.টন ইউরিয়া সার বরাদ্দ হয়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত