অন্যের নানার মুক্তিযোদ্ধা কোটায় কৃষি কর্মকর্তা তফির আলী

শাফায়াত জামিন সজল, শিবগঞ্জ (বগুড়া)
প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৭
তফির আলী

বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার পীরব ইউনিয়নের দাইমুল্যা গ্রামের তফির আলী অন্য একজন মুক্তিযোদ্ধার সনদ ব্যবহার করে জালিয়াতির মাধ্যমে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চাকরি নিয়েছেন।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে তিনি কাহালু উপজেলা কৃষি অফিসে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত। তফির আলী যে ব্যক্তিকে নানা পরিচয় দিয়ে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করেছেন সেই নানা তাকে নাতি বলে অস্বীকার করেছেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালে তফির আলী জালিয়াতির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধার নাতি কোটায় চাকরিতে যোগ দেন। এর কিছুদিন পর তার জালিয়াতির বিষয়ে গুঞ্জন ওঠে। তার বিরুদ্ধে জালিয়াতির অভিযোগ ওঠে। তবে সে আওয়ামী লীগ সরকারের আজ্ঞাবহ দপ্তরগুলোকে অর্থ দিয়ে দমিয়ে রেখেছিলেন বিষয়টি।

তফির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, এসব অভিযোগে চাকরি যাবে না। তিনি তার কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করেছেন। এসব নিউজেও তার কিছু হবে না।

তফির আলী দাইমুল্যা (নড়িয়াল) গ্রামের জাফের আলী সরকার ও হাসিমন বেগম দম্পতির ছেলে। ২০১৭ সালের ৩১ জানুয়ারি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর প্রকাশিত নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের পুত্র-কন্যা এবং তাদের পুত্র-কন্যা অর্থাৎ নাতি-নাতনিদের কাছ থেকে আবেদন চাওয়া হয়।

সেই সুযোগে চতুর তফির আলী বগুড়ার শিবগঞ্জ উপজেলার আটমুল ইউনিয়নের কঞ্চিথল গ্রামের বীরমুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিন আকন্দের মুক্তিযোদ্ধা সনদ ব্যবহার করেন। তিনি নবীর উদ্দিনকে তার নানা হিসেবে দেখান। তফির আলী নিজের মা হাসিমন বেগমকে মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিনের কন্যা হিসেবে উল্লেখ করেন। পরে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় তিনি উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পদে চাকরি পান।

তফির আলী তার মা হাসিমনকে মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিনের কন্যা দেখিয়ে পীরব ইউনিয়ন পরিষদের প্যাডে মিথ্যা প্রত্যয়নপত্র তৈরি করে জমা দেন।

পরে মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিন আকন্দ তফির আলীর নানা কি না তার সত্যতা নিশ্চিত হতে শিবগঞ্জ উপজেলা নির্বাচন অফিসে মা হাসিমন বেগমের জাতীয় পরিচয়পত্র তল্লাশি করা হয়। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, হাসিমনের বাবার নাম হাতেম আলী, মা জয়গুন বিবি, ঠিকানা দাইমুল্যা (নড়িয়াল), পীরব, শিবগঞ্জ, বগুড়া দেখা যায়।

শিবগঞ্জের পীরব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসিফ মাহমুদ ও দাইমুল্যা (নড়িয়াল) গ্রামের ৬ নম্বর ওয়ার্ড ইউপি মেম্বার আকরাম হোসেনের স্বাক্ষরিত হাতেম আলীর ওয়ারিশ সনদ অনুসারে দেখা যায়, হাতেম আলী হাসিমন বেগমের প্রকৃত পিতা অর্থাৎ তফির আলীর আসল নানা।

ইউপি সদস্য আকরাম হোসেন নিশ্চিত করে আমার দেশকে বলেন, তফির আলী হাসিমন বেগমের পুত্র অর্থাৎ হাতেম আলীর নাতি। মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিন তফির আলীর নানা নন। আমার জানা মতে, মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিন আকন্দের সঙ্গে তফির আলীর কোনো আত্মীয়তার সম্পর্ক নেই।

এ বিষয়ে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তফির আলী বলেন, এ রকম কেস সারা দেশে হাজার হাজার আছে। সব ডিপার্টমেন্টেই আছে। আমার কাগজপত্র সব ঠিকঠাক করা আছে। অভিযোগ দিলেই চাকরি যাবে না।

তিনি বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা) আসনের সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মরহুম আব্দুল মান্নানের নাম উল্লেখ করে বলেন, ‘সারিয়াকান্দিতে মান্নান এমপি শত শত লোককে পুলিশে ঢুকিয়েছেন। তাদের একজনেরও বৈধ কাগজপত্র ছিল না। পরে সব কাগজপত্র তৈরি করা হয়েছে। টাকা হলে সবই হয় ভাই।’

তফির আলী নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিন আকন্দের নাতি প্রমাণ করতে তার মা হাসিমন বেগমের এনআইডি পরিবর্তনের জন্য আবারও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছেন।

নবীর উদ্দিনই তার নানা এটা প্রমাণ করতে তফির আলী তার মা হাসিমন বেগমের জন্ম নিবন্ধনের একটা হার্ড কপি দেখান, যেখানে হাসিমন বেগমের পিতা হাতেম আলীর পরিবর্তে নবীর উদ্দিন আকন্দের নাম দেওয়া হয়েছে। জন্মনিবন্ধনটি প্রস্তুত করা হয়েছে এ বছরের ১৯ ফেব্রুয়ারি।

এদিকে বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীর উদ্দিন আকন্দ বলেন, হাসিমন বিবি নামে তার কোনো মেয়ে নেই। শুধু তাই নয়, তফির আলী নামে কোনো নাতিও নেই তার। তিনি তফির আলী নামের কাউকে তার মুক্তিযোদ্ধা সনদও দেননি।

এ ব্যাপারে কাহালু উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা জান্নাতুল ফেরদৌস বলেন, তফির আলির ব্যাপারে এমন অভিযোগ শুনেছি। আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে অবগত আছেন। তারা অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত করছেন। অপরাধ প্রমাণিত হলে সরকারি চাকরি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবেন।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত