বরগুনায় স্ত্রী হত্যার দায়ে স্বামীসহ তিনজনের মৃত্যুদণ্ড

জেলা প্রতিনিধি, বরগুনা
প্রকাশ : ০৭ অক্টোবর ২০২৫, ২১: ১৩

বরগুনায় স্ত্রীকে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট করে হত্যার দায়ে স্বামী, সতিন ও মেয়ের জামাতাকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ প্রদান করা হয়েছে। একই সাথে প্রত্যেককে এক লক্ষ টাকা অর্থদণ্ডও দেওয়া হয়েছে। রায় প্রদানকালে আসামিরা আদালতে উপস্থিত ছিলেন।

মঙ্গলবার বেলা দুইটার দিকে চাঞ্চল্যকর এ হত্যা মামলার রায় প্রদান করেন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক, জেলা জজ বেগম লায়লাতুল ফেরদৌস।

বিজ্ঞাপন

মৃত্যুদণ্ড প্রাপ্তরা হলেন, জেলার পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মৃত মাজেদ তালুকদারের ছেলে কবির তালুকদার, তার ২য় স্ত্রী এলাচী বেগম ও জামাতা সুজন।

নিহত মহিমা বেগমের ছেলে হেলাল তালুকদার ছিলেন মামলার বাদী এবং প্রধান অভিযুক্ত দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে একজন।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী হেলাল তালুকদারের মা, ভিকটিম মহিমা বেগমকে তার পিতা, আসামি কবির তালুকদার ৩০ বছর আগে বিবাহ করেন। বৈবাহিক জীবনে বাদীর পিতা যৌতুকের দাবিতে প্রায়ই তার মাকে নির্যাতন করতেন। এছাড়াও তার ছোট বোনের শাশুড়ী, আসামি এলাচী বেগমের সঙ্গে তার অনৈতিক সম্পর্ক ছিল। বাদীর বোন রেখা বেগম তার পিতা ও তার শাশুড়ীর সঙ্গে আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেলায় এবং এর প্রতিবাদ করায় শাশুড়ী এলাচী বেগম ও জামাতা সুজন তার ওপর নির্যাতন চালানো শুরু করে। তাদের নির্যাতন সইতে না পেরে বোন রেখা বেগম রাগে ও ক্ষোভে আত্মহত্যা করে।

রেখা বেগমের মৃত্যুর ৩ থেকে ৪ বছর পর কবির তালুকদার তার মায়ের অমতে বোনের শাশুড়ী এলাচি বেগমকে ২য় বিয়ে করেন। তাদের বিয়ে না মানায় ভিকটিম মহিমা বেগমকে যৌতুকের জন্য চাপ দিতে থাকে এবং নির্যাতন চালাতে থাকে। এক পর্যায়ে বাদীর মা আত্মহত্যা করার জন্য বিষপান করে। পরবর্তীতে চিকিৎসায় বেঁচে গেলেও আসামিরা ভিকটিম মহিমা বেগমকে হত্যার জন্য পরিকল্পনা করতে থাকে। পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ৩নং আসামি প্রস্তাব দেয়, “আমি কারেন্টের মিস্ত্রি। কারেন্টে শক দিয়ে হত্যা করে, কারেন্টের শক খেয়েছে বলে চালিয়ে দেওয়া যাবে।”

তাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দিন, ২০১৯ সালের ২৫ অক্টোবর, শুক্রবার সকালে আসামি কবির তালুকদার বাদী হেলাল তালুকদারকে বলে, “তোর শ্বশুর অসুস্থ, তুই তাড়াতাড়ি যা।” বাদী সরল বিশ্বাসে শ্বশুরবাড়ি কালমেঘায় স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে যাওয়ার পর দেখতে পান শ্বশুর সুস্থ আছেন এবং তিনি তার পিতা কবির তালুকদারকে কোনো ফোন করেননি।

বাদী মামলায় উল্লেখ করেন, তিনি শ্বশুরবাড়ি চলে যাওয়ার পর ওই দিন দুপুর ১২টা থেকে ১টার মধ্যে তার মাকে তার বাবার বাড়ির সম্পত্তি বিক্রি করার জন্য চাপ দিতে থাকে। তার মা এতে রাজি না হওয়ায় আসামি কবির তালুকদার, আসামি এলাচি বেগম ও আসামি সুজনের সহায়তায় ভিকটিম মহিমা বেগমের ডান হাতের ৩টি আঙুলে, পিঠে ও বুকে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে হত্যা করে। হত্যা নিশ্চিত হওয়ার পর আসামিরা চিৎকার করে বলে, “মহিমা বিদ্যুৎ-এর শক খেয়েছে।” “আমি এই সংবাদ শুনে এসে দেখি ঘর থেকে ১০ মিটার দূরে আমার মা আমড়া গাছের সঙ্গে হেলে পড়ে আছেন।”

মামলার রায় শুনে বাদী হেলাল তালুকদার বলেন, “রায়ে আমি আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। আমার মায়ের হত্যাকারীদের ফাঁসির আদেশ হওয়ায় আমি আইনকে শ্রদ্ধা জানাই।”

মামলা পরিচালনাকারী রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট রঞ্জুয়ারা শিপু জানান, মামলার ভিকটিমকে পরিকল্পিতভাবে আসামিরা হত্যা করেছে। বিজ্ঞ আদালতের কাছে হত্যাকাণ্ডটি প্রমাণিত হওয়ায় আসামিদেরকে মৃত্যুদণ্ড এবং অনাদায়ে এক লক্ষ টাকা করে অর্থদণ্ড প্রদান করা হয়। তিনি রায়ে বিজ্ঞ আদালতের প্রতি সন্তুষ্ট। তিনি আরো বলেন, “এই রায় প্রদানের মাধ্যমে সমাজে অপরাধ কমে আসবে।”

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত