রংপুরে তীব্র ক্ষোভ
বাদশাহ ওসমানী, রংপুর
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ও জুলাই ৩৬ আন্দোলনের মুখ্য কারিগর শহীদ জাতীয় বীর আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন এসবি শাখার এসপি।
আবু সাঈদকে উদ্ধারকারী অয়ন এবং সুমনসহ সহপাঠীরা জানান, প্রকাশ্যে পুলিশ আবু সাঈদকে গুলি করেছে সেটা সবাই আমরা দেখেছি। ওই সময়ের এসবির পুলিশ সুপার আবু বক্কর সিদ্দিক জোর করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাজিবুল ইসলামকে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য ভয়-ভীতি দেখিয়েছিল। ইতিমধ্যে সেই ডাক্তার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের বর্ণনা দিয়েছেন আমরা এ কারণে সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই আবু বক্কর সিদ্দিকসহ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে ইন্ধনদাতা সহায়তাকারী এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদানোর চেষ্টা করে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন তাদেরকে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক ইমরান হোসেন আমার দেশকে জানান, পুলিশ এখনো পরিবর্তন হয়নি। পুলিশের মধ্যে এখনো ঘাপটি মেরে আছে ৩৬ জুলাই বিরোধী অনেক কর্মকর্তা। আজকে কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে সহজে পুলিশ যেতে চায় না । কারণ হলো আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলাতে ডাক্তারকে ভয়ভীতি দেখানো পুলিশ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিকের মতো জুলাই বিরোধী অনেক কর্মকর্তারা উপরে বসে কলকাটি নাড়ছেন। তবে আবু সাঈদের হত্যার সাথে জড়িত ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলানোর কারিগর আবু বকর সিদ্দিকসহ সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সুরা কমিটির সদস্য এবং উত্তরাঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরিকারি ডাক্তার তার নিজ মুখে সঠিক জবানবন্দী দিয়েছেন। কোন ডাক্তার এবং কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ভয় ভীতি দেখিয়েছিল সেটাও তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জানিয়ে দিয়েছেন। এতকিছু বলার পরও অপরাধীদের বহাল তবিয়তে রাখার কারণে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরো কমে যাচ্ছে।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক শামসুজ্জামান সামু আমার দেশকে জানান, কর্মকাণ্ড দেখে বলাই যায় যে পুলিশ এখনো বদলায়নি। তবে কিছু সৎ পুলিশের কারণে এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা ভালো রয়েছে। তবে আবু সাঈদের রিপোর্ট বদলাতে চাপ প্রয়োগকারী আবু বক্কর সিদ্দিকসহ যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের উপর মহলে বসে আছে। তাদেরকে না সরালে বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে পুলিশের মধ্যে এখনো হ য ব র ল থেকেই যাবে।
গত রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ -বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সামনে জবানবন্দিতে দিয়েছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাজিবুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত করি। শরীরে অনেকগুলো পিলেট বিদ্ধ হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ করি। তবে মতামতসহ আমার করা রিপোর্ট তাজহাট থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে দিতে গেলে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট গ্রহণ না করে নতুন করে রিপোর্ট লিখতে বলে। এভাবে তিনবার আমার রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়নি। ৩০ জুলাই ২০২৪ রংপুর মেডিক্যালের ভাইস প্রিন্সিপালের রুমে রংপুর সিটি এসবির এসপি সিদ্দিক, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মারুফ, রংপুর মেডিক্যালের স্বাচিপ সভাপতি ড. চন্দন আমাকে তাদের মতো করে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে চাপ দেন। এ সময় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা রুমের বাইরে অবস্থান করছিলেন। ওনারা প্রথম থেকেই আমাকে বলেন যে- আবু সাঈদের মাথায় ইনজুরি আছে সেটা ফোকাস করতে হবে। তারা আমাকে তাদের মতো করে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে চাপ দেন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তারা আমাকে আবু সাঈদের বুলেট/পিলেট ইনজুরির পরিবর্তে হেড ইনজুরি ও নিউরোজেনিক শক লিখতে বলেন। তারা আমাকে বলেন, তাদের মতো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না দিলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমার বিষয়ে নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে।
রাজিবুল ইসলাম জবানবন্দিতে আরো বলেন, তারা আমাকে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ঘুরে আসার প্রলোভন দেন। আমি বলি, আমার পাসপোর্ট নেই। তখন তারা আমাকে স্ত্রী সন্তানের নিয়ে দুই সপ্তাহ কক্সবাজারে ঘুরে আসার অফার দেয়। সবকিছুর ব্যবস্থা তারা করবেন বলে জানান। তবে আমি তাদের কথায় রাজি হইনি। আমি ভাইস প্রিন্সিপাল স্যারকে বলি, স্যার আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য টিভিতে লাইভ সম্প্রচার হয়েছে এবং তা সারা বিশ্ব দেখেছে। আমি যদি এই হত্যাকে হেড ইনজুরি বলে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেই তাহলে সারা বিশ্বের মানুষ ড. সমাজকে ঘৃণার চোখে দেখবে।
রংপুর মেডিক্যালের স্বাচিপ সভাপতি ড. চন্দন তাকে পেশাগত প্রলোভন দেন উল্লেখ করে চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলেন, ড. চন্দন আমাকে বলেন, নেত্রী তোমার ব্যাপারে কনসার্ন। তোমার ব্যাপার আমরা দেখব। পুলিশ যেভাবে চায় সেভাবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দাও। কিন্তু এতকিছুর পরেও আমি আমার জায়গা থেকে সরে যাইনি। সর্বশেষ দেয়া পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আমি আবু সাঈদের শরীরে পিলেট ইনজুরির বর্ণনা দেই। তবে রিপোর্টে ‘গান শর্ট’ শব্দটা লিখিনি। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম।
চিকিৎসক বলেন, আমার স্ত্রী ও দুটি সন্তান আছে। তখনকার ওই সরকার থাকলে এখন আমার কী হতো? আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য রিপোর্ট প্রদান করেছি। আমি আবু সাঈদ হত্যার নির্দেশ দাতাসহ জড়িতদের বিচার ও শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে পুলিশের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, আবু সাঈদ জীবন দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যে আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে পুলিশ সদস্যরা গুলি করে হত্যা করল। আবার সেই খুনিদের বাঁচাতে পুলিশের একটি মহল পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলিয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এরকম অসংখ্য পুলিশ কর্মকর্তা এখনো পুলিশ বাহিনীতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উচিত দ্রুত আবু বক্কর সিদ্দিকীর মত পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে পুলিশবাহিনীকে সংস্কার করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা।
তারা আরো জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় এসপি আবু বক্কর সিদ্দিক উপযাচক হয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে গিয়ে অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখতেন। ওই সময় ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি মেহেদী হাসান রনি সহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে তার খুবই সব কথা ছিল এ কারণেই তিনি আবু সাঈদ এর হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটলেও তিনি আসামিদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য ডাক্তারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। আবু বকর সিদ্দিককে আইনের আওতায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বের হবে বলে তারা মনে করেন ।
পুলিশের এই জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তারা আরো জানান, মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক এসপি আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলানোর চেষ্টাকরী আবু বক্কর সিদ্দিককে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার এডিআইজি হিসেবে প্রমোশন দেয়। ৩৬ জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপর হামলা নির্যাতন কারী হিসেবে এবং আবুবকর সিদ্দিক এর বিতর্কিত ভূমিকা ও আবু সাঈদের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে ভয় ভীতি দেখানোর কারণে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে ছাত্র-জনতা রংপুর টাউন হল মাঠে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে বদলি করে রংপুর রেঞ্জে এডিশনাল হিসেবে সংযুক্ত করেন। এরপরেও ছাত্র জনতা আন্দোলনে নামায় বর্তমানে তাকে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশ অফিসে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। সেখানে দিব্যি তিনি নিজের কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছেন বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এসবির সাবেক এসপি আবু বক্কর সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) ইংরেজি বিভাগের ছাত্র ও জুলাই ৩৬ আন্দোলনের মুখ্য কারিগর শহীদ জাতীয় বীর আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন বদলানোর চেষ্টা করেছিলেন আবু বক্কর সিদ্দিক। তিনি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের তৎকালীন এসবি শাখার এসপি।
আবু সাঈদকে উদ্ধারকারী অয়ন এবং সুমনসহ সহপাঠীরা জানান, প্রকাশ্যে পুলিশ আবু সাঈদকে গুলি করেছে সেটা সবাই আমরা দেখেছি। ওই সময়ের এসবির পুলিশ সুপার আবু বক্কর সিদ্দিক জোর করে রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাজিবুল ইসলামকে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য ভয়-ভীতি দেখিয়েছিল। ইতিমধ্যে সেই ডাক্তার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে পোস্টমর্টেম রিপোর্টের বর্ণনা দিয়েছেন আমরা এ কারণে সাধুবাদ জানাই। আমরা চাই আবু বক্কর সিদ্দিকসহ আবু সাঈদ হত্যাকাণ্ডে ইন্ধনদাতা সহায়তাকারী এবং পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদানোর চেষ্টা করে ভয়-ভীতি দেখিয়েছেন তাদেরকে শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের জেলা সমন্বয়ক ইমরান হোসেন আমার দেশকে জানান, পুলিশ এখনো পরিবর্তন হয়নি। পুলিশের মধ্যে এখনো ঘাপটি মেরে আছে ৩৬ জুলাই বিরোধী অনেক কর্মকর্তা। আজকে কোথাও কোন দুর্ঘটনা ঘটলে সেখানে সহজে পুলিশ যেতে চায় না । কারণ হলো আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলাতে ডাক্তারকে ভয়ভীতি দেখানো পুলিশ কর্মকর্তা আবু বক্কর সিদ্দিকের মতো জুলাই বিরোধী অনেক কর্মকর্তারা উপরে বসে কলকাটি নাড়ছেন। তবে আবু সাঈদের হত্যার সাথে জড়িত ও পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলানোর কারিগর আবু বকর সিদ্দিকসহ সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে শাস্তির দাবি জানাচ্ছি।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সুরা কমিটির সদস্য এবং উত্তরাঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ইতিমধ্যে আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট তৈরিকারি ডাক্তার তার নিজ মুখে সঠিক জবানবন্দী দিয়েছেন। কোন ডাক্তার এবং কোন কোন পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ভয় ভীতি দেখিয়েছিল সেটাও তিনি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জানিয়ে দিয়েছেন। এতকিছু বলার পরও অপরাধীদের বহাল তবিয়তে রাখার কারণে পুলিশের প্রতি মানুষের আস্থা আরো কমে যাচ্ছে।
রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক শামসুজ্জামান সামু আমার দেশকে জানান, কর্মকাণ্ড দেখে বলাই যায় যে পুলিশ এখনো বদলায়নি। তবে কিছু সৎ পুলিশের কারণে এখন পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেকটা ভালো রয়েছে। তবে আবু সাঈদের রিপোর্ট বদলাতে চাপ প্রয়োগকারী আবু বক্কর সিদ্দিকসহ যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত তাদের মধ্যে অনেকেই পুলিশের উপর মহলে বসে আছে। তাদেরকে না সরালে বা তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা না নিলে পুলিশের মধ্যে এখনো হ য ব র ল থেকেই যাবে।
গত রোববার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ -বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের সামনে জবানবন্দিতে দিয়েছেন রংপুর মেডিক্যাল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. রাজিবুল ইসলাম।
তিনি বলেন, ২০২৪ সালের ১৬ জুলাই শহীদ আবু সাঈদের ময়নাতদন্ত করি। শরীরে অনেকগুলো পিলেট বিদ্ধ হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে পোস্টমর্টেম রিপোর্টে উল্লেখ করি। তবে মতামতসহ আমার করা রিপোর্ট তাজহাট থানার তদন্ত কর্মকর্তাকে দিতে গেলে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট গ্রহণ না করে নতুন করে রিপোর্ট লিখতে বলে। এভাবে তিনবার আমার রিপোর্ট গ্রহণ করা হয়নি। ৩০ জুলাই ২০২৪ রংপুর মেডিক্যালের ভাইস প্রিন্সিপালের রুমে রংপুর সিটি এসবির এসপি সিদ্দিক, রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের ডিসি মারুফ, রংপুর মেডিক্যালের স্বাচিপ সভাপতি ড. চন্দন আমাকে তাদের মতো করে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে চাপ দেন। এ সময় পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা রুমের বাইরে অবস্থান করছিলেন। ওনারা প্রথম থেকেই আমাকে বলেন যে- আবু সাঈদের মাথায় ইনজুরি আছে সেটা ফোকাস করতে হবে। তারা আমাকে তাদের মতো করে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দিতে চাপ দেন ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তারা আমাকে আবু সাঈদের বুলেট/পিলেট ইনজুরির পরিবর্তে হেড ইনজুরি ও নিউরোজেনিক শক লিখতে বলেন। তারা আমাকে বলেন, তাদের মতো পোস্টমর্টেম রিপোর্ট না দিলে আমার বিরুদ্ধে মামলা হবে। আমার বিষয়ে নাকি গোয়েন্দা রিপোর্ট আছে।
রাজিবুল ইসলাম জবানবন্দিতে আরো বলেন, তারা আমাকে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ঘুরে আসার প্রলোভন দেন। আমি বলি, আমার পাসপোর্ট নেই। তখন তারা আমাকে স্ত্রী সন্তানের নিয়ে দুই সপ্তাহ কক্সবাজারে ঘুরে আসার অফার দেয়। সবকিছুর ব্যবস্থা তারা করবেন বলে জানান। তবে আমি তাদের কথায় রাজি হইনি। আমি ভাইস প্রিন্সিপাল স্যারকে বলি, স্যার আবু সাঈদকে গুলি করে হত্যার দৃশ্য টিভিতে লাইভ সম্প্রচার হয়েছে এবং তা সারা বিশ্ব দেখেছে। আমি যদি এই হত্যাকে হেড ইনজুরি বলে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দেই তাহলে সারা বিশ্বের মানুষ ড. সমাজকে ঘৃণার চোখে দেখবে।
রংপুর মেডিক্যালের স্বাচিপ সভাপতি ড. চন্দন তাকে পেশাগত প্রলোভন দেন উল্লেখ করে চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম বলেন, ড. চন্দন আমাকে বলেন, নেত্রী তোমার ব্যাপারে কনসার্ন। তোমার ব্যাপার আমরা দেখব। পুলিশ যেভাবে চায় সেভাবে পোস্টমর্টেম রিপোর্ট দাও। কিন্তু এতকিছুর পরেও আমি আমার জায়গা থেকে সরে যাইনি। সর্বশেষ দেয়া পোস্টমর্টেম রিপোর্টে আমি আবু সাঈদের শরীরে পিলেট ইনজুরির বর্ণনা দেই। তবে রিপোর্টে ‘গান শর্ট’ শব্দটা লিখিনি। এ সময় কান্নায় ভেঙে পড়েন চিকিৎসক রাজিবুল ইসলাম।
চিকিৎসক বলেন, আমার স্ত্রী ও দুটি সন্তান আছে। তখনকার ওই সরকার থাকলে এখন আমার কী হতো? আমি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সত্য রিপোর্ট প্রদান করেছি। আমি আবু সাঈদ হত্যার নির্দেশ দাতাসহ জড়িতদের বিচার ও শাস্তি চাই।
এ বিষয়ে পুলিশের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা আমার দেশকে জানান, আবু সাঈদ জীবন দিয়ে নতুন করে বাংলাদেশের মানুষকে স্বাধীনতার স্বাদ পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন। যে আবু সাঈদকে প্রকাশ্যে পুলিশ সদস্যরা গুলি করে হত্যা করল। আবার সেই খুনিদের বাঁচাতে পুলিশের একটি মহল পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলিয়ে মামলাটি ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করেছিল। এরকম অসংখ্য পুলিশ কর্মকর্তা এখনো পুলিশ বাহিনীতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের উচিত দ্রুত আবু বক্কর সিদ্দিকীর মত পুলিশ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে পুলিশবাহিনীকে সংস্কার করে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করা।
তারা আরো জানান, বিগত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের সময় এসপি আবু বক্কর সিদ্দিক উপযাচক হয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন প্রোগ্রামে গিয়ে অতিথি হয়ে বক্তব্য রাখতেন। ওই সময় ছাত্রলীগের জেলা সভাপতি মেহেদী হাসান রনি সহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে তার খুবই সব কথা ছিল এ কারণেই তিনি আবু সাঈদ এর হত্যাকাণ্ড প্রকাশ্য দিবালোকে ঘটলেও তিনি আসামিদের বাঁচানোর ক্ষেত্রে পোস্টমর্টেম রিপোর্টটি ভিন্নখাতে নেওয়ার জন্য ডাক্তারকে বিভিন্নভাবে হুমকি দিয়ে আসছিল। আবু বকর সিদ্দিককে আইনের আওতায় নিয়ে এসে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই আসল রহস্য বের হবে বলে তারা মনে করেন ।
পুলিশের এই জ্যৈষ্ঠ কর্মকর্তারা আরো জানান, মেট্রোপলিটন পুলিশের সাবেক এসপি আবু সাঈদের পোস্টমর্টেম রিপোর্ট বদলানোর চেষ্টাকরী আবু বক্কর সিদ্দিককে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকার এডিআইজি হিসেবে প্রমোশন দেয়। ৩৬ জুলাই আন্দোলনে ছাত্র জনতার উপর হামলা নির্যাতন কারী হিসেবে এবং আবুবকর সিদ্দিক এর বিতর্কিত ভূমিকা ও আবু সাঈদের রিপোর্ট নিয়ে ডাক্তারকে ভয় ভীতি দেখানোর কারণে তাকে গ্রেফতারের দাবিতে ছাত্র-জনতা রংপুর টাউন হল মাঠে তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এ সময় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাকে বদলি করে রংপুর রেঞ্জে এডিশনাল হিসেবে সংযুক্ত করেন। এরপরেও ছাত্র জনতা আন্দোলনে নামায় বর্তমানে তাকে ময়মনসিংহ রেঞ্জ পুলিশ অফিসে অতিরিক্ত ডিআইজি হিসেবে সংযুক্ত করে রাখা হয়েছে। সেখানে দিব্যি তিনি নিজের কর্মযজ্ঞ পরিচালনা করছেন বলে তারা জানান।
এ বিষয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের এসবির সাবেক এসপি আবু বক্কর সিদ্দিকীর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বুধবার ভোর রাতে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ২৩০ পিস ইয়াবাসহ তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার সাইফুল ইসলাম সাঘাটা উপজেলার কামালেরপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের আহ্বায়ক। তিনি ওই এলাকার বারকোনা গ্রামের চান মিয়ার ছেলে।
১২ মিনিট আগেমঙ্গলবার রাতে ১২টার দিকে তিনটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার সময় স্থানীয় বাসিন্দারা ধাওয়া করে। এসময় চালসহ একটি অটোরিকশা জব্দ করলেও বাকি দুটি রিকশা দ্রুত গতিতে পালিয়ে যায়।
১৮ মিনিট আগেবিএনপি নেতা সামছুল ইসলাম জেলার সদর উপজেলার সাধারণ সম্পাদক। ছাড়া পাওয়া দুই আসামি হলেন, সদর উপজেলার লস্করপুর ইউনিয়ন যুবলীগ সহ-সভাপতি মাহবুবুর রহমান ওরফে রানা (৪০) ও একই কমিটির সদস্য মামুন আহমেদ (৩৮)।
২৯ মিনিট আগেমৌলভীবাজারে শ্রীমঙ্গল-ভানুগাছ সড়কের জানকিছড়া এলাকায় হাঁটতে হাঁটতে বাড়ি ফেরার পথে অজ্ঞাত গাড়িচাপায় এক কমিউনিটি পেট্রোলিং গ্রুপ (সিপিজি) সদস্য নিহত হয়েছেন। বুধবার ভোরে কমলগঞ্জ উপজেলার লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
২ ঘণ্টা আগে