নীলফামারীতে বাড়ছে সুপারির আবাদ-স্বাস্থ্যঝুঁকি

জেলা প্রতিনিধি, নীলফামারী
প্রকাশ : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৩৭
আপডেট : ০২ জানুয়ারি ২০২৫, ১১: ৪৪

নীলফামারীতে দিন দিন বাড়ছে সুপারি বা গুয়ার আবাদ এবং চাহিদা। চাহিদার কারণে এখন বাণিজ্যিক ভিত্তিতে এর চাষ বেড়েছে। সুপারি প্রধানত খাওয়া হয় পানের সঙ্গে। তবে এর সঙ্গে জর্দা, চুন ও মসলা খাওয়া হয়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। এ বিষয়ে মানুষের মাঝে কোনো সচেতনতা নেই।

বিজ্ঞাপন

সুপারির সঙ্গে জড়িয়ে আছে এ অঞ্চলের সুদীর্ঘকালের সামাজিকতা। কোনো বাড়িতে মেহমান বা জানাশোনা কেউ এলে তাকে পান খাওয়ানোর চল রীতিমতো সামাজিক প্রথা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সুপারি ছাড়া পান খাওয়া তো অসম্ভব কল্পনা। কিন্তু সুপারি যে জনস্বাস্থ্যের জন্য বেশ ক্ষতিকর তা কয়জন জানেন।

এ জেলার এক-তৃতীয়াংশ মানুষ সুপারি নানাভাবে খেয়ে অভ্যস্ত। স্থানীয় ভাষায় সুপারিকে গুয়া বলা হয়। এখানে সুপারিকে ভালোবাসার প্রতীক, বদহজম ও বন্ধ্যত্ব সমস্যার প্রতিকার হিসেবে দেখা হয়।

এ এলাকায় কারো একটি সুপারির বাগান থাকলে তাকে প্রভাবশালী পরিবার হিসেবে গণ্য করা হয়। জনশ্রুতি আছে, এখানে শত শত বছর ধরেই সুপারি খাওয়ার প্রচলন। এখানকার বাসিন্দারা সুপারি নেশার মতো করে খায়। তাই এর চাহিদাও বাড়ছে। সুপারি খাওয়া এখানে ট্রাডিশনে পরিণত হয়েছে।

এই অতিরিক্ত সুপারি খাওয়া নিয়ে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন। এর ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে জ্ঞান না থাকায় ব্যাপক মাত্রায় মানুষ এটি খেয়েই যাচ্ছেন। সুপারি আসক্তদের মুখ ও গলার ক্যানসার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। এ জেলায় অতিরিক্ত সুপারি খাওয়ার কারণে হাজারেরও বেশি মানুষ রোগাক্রান্ত হচ্ছেন বলে চিকিৎসকদের দাবি। নিয়মিত সুপারি খেলে হৃদরোগ, পেটের নানান রোগ, গ্যাস্ট্রিক, আলসার, কিডনি রোগ, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ, অনিদ্রা, মুখের ক্যানসারসহ দাঁতের সদস্যা দেখা দেয়।

আন্তর্জাতিক ক্যানসার গবেষণা সংস্থা পান, সুপারি, জর্দা ও চুনে ক্যানসার সৃষ্টিকারী উপাদান ‘কার্সিনোজেন’ শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে চুন বেশি ক্ষতিকর। এটির ব্যবহারে মুখের ভেতর ছোট ছোট ক্ষত তৈরি হয়। ক্যানসারের অনেক উপাদান এসব ক্ষতের মাধ্যমেই চামড়ার ভেতরে প্রবেশ করে।

সুপারি সাধারণত তাজা, শুকনো কিংবা ভিজানো অবস্থায় খাওয়া হয়। আবার পান দিয়ে খিলি করেও খায়। সুপারিতে রয়েছে বিষাক্ত তামা, যা স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। সুপারি খাওয়ার পর তামার প্রভাবে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব সৃষ্টি হয়। একপর্যায়ে তা স্নায়ুতন্ত্রের ওপর কাজ করতে শুরু করে। এতে শরীরে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। একটি সুপারির কার্যক্ষমতা ছয় কাপ কফির সমান।

সুপারি গাছ একটি বহু বর্ষজীবী উদ্ভিদ। ফুল থেকে সুপারি ফল হয়। এর বৈজ্ঞানিক নাম areca catechu।

আসক্তি হিসেবে সুপারির কার্যক্ষমতা এতটাই বেশি যে নিকোটিন, অ্যালকোহল ও ক্যাফেইনের পাশাপাশি সুপারিকে মানসিক বিভ্রমকারী মাদক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সমাজের সব বয়সী ও পেশাজীবী মানুষ এটি ব্যবহার করেন। তবে পুরুষ বেশি ব্যবহার করেন। গাড়ি চালানো, রাত জেগে কাজ করা কিংবা কায়িক পরিশ্রমের সময় শক্তি পেতে তারা সুপারি খেয়ে থাকেন।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, সুপারি হালকা মাত্রার মাদক, যা প্রাণঘাতীও বটে। সুপারির ব্যবহার যে জনস্বাস্থ্যর জন্য হুমকি, এ বিষয়ে সরকারি কোনো প্রচার প্রচারণা নেই। সুপারির বিষয়ে সরকারি উদ্যোগে জনগণকে সচেতন না করলে এ অঞ্চলের জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়বে।

/এফ/

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত