রংপুরে নাহিদ ইসলাম

জুলাই সনদের প্রথম প্রস্তাবে একমত এনসিপি, সরকার সাড়া দিলেই স্বাক্ষর

জেলা প্রতিনিধি, রংপুর
প্রকাশ : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ১১

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন সংক্রান্ত ঐক্যমত্য কমিশনের সর্বশেষ দুই সুপারিশের প্রথম প্রস্তাবনায় এনসিপি একমত, সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমটি বাস্তবায়নের উদ্যোগের সাড়া আসলে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবে দলটি বলে মন্তব্য করেছেন আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

তিনি বলেন, বিএনপি ও জামায়াতের সাথে জোটে যাওয়ার বিষয়ে অবশ্যই তাদের ভাবতে হবে। শাপলা প্রতীক যদি এনসিপিকে না দেয়া হয়, তাহলে তাদের দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা এটা প্রশ্ন থেকে যায় বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

বুধবার দিনভর রংপুর পর্যটন মোটেলে বিভাগের মহানগর, জেলা, উপজেলা ও পৌরসভার আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ভাইভা কার্যক্রম পরিচালনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে এই মন্তব্য করেন তিনি। এসময় সদস্য সচিব আখতার হোসেন, উত্তরাঞ্চলীয় মুখপাত্র সারজিস আলম, বিভাগীয় সমন্বয়কারী ডা. আতিক মুজাহিদ, যুগ্ম মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) আবু সাঈদ লিওন, সাদিয়া ফারজানা দিনা, আসাদুল্লাহ আল গালিব, কেন্দ্রীয় সদস্য আব্দুল মোনায়েমসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘সংস্কার বিষয় বা জুলাই সনদ বিষয়ে ঐক্যমত্য কমিশন সর্বশেষ যে সুপারিশ করেছে সে বিষয়ে আমাদের আনুষ্ঠানিক বক্তব্য হলো, আমরা মনে করছি যে এতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের একটা দাবি ছিল যে, জুলাই সনদ বাস্তবায়িত হলে সেটা কিভাবে হবে। সেখানে ঐক্যমত্য কমিশন দুইটি প্রস্তাব দিয়েছে। আমরা মনে করি দুটি প্রস্তাবের প্রয়োজন ছিল না। কারণ দ্বিতীয় যে প্রস্তাবটি সেই প্রস্তাবটি একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথম প্রস্তাবটি তুলনামূলকভাবে গ্রহণযোগ্য। ফলে প্রথম প্রস্তাবটিকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি। সেটা কিছুটা সংশোধন সাপেক্ষে। এখন প্রয়োজন আদেশটাকে প্রকাশ করা। সুপারিশে বলা আছে যে, আদেশ জারি করবে অন্তর্বর্তী সরকার। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস তিনি এই আদেশটি জারি করবেন।’

নাহিদ আরও বলেন, ‘আমাদের যে দাবিগুলো ছিল সেই প্রেক্ষিতে আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করা থেকে বিরত ছিলাম। এছাড়া আমরা গণভোটের কথা বলেছি। আমাদের পরবর্তী সংসদের হাতে সেই ক্ষমতা থাকবে। যার ভিত্তিতে তারা সংস্কার করে সংবিধান দুই হাজার ছাব্বিশ তৈরি করবে। ফলে প্রথম প্রস্তাবটিকে আমরা সমর্থন দিচ্ছি এবং প্রথম প্রস্তাবটি যাতে সরকার দ্রুত আদেশ জারি করার ব্যবস্থা করে। সাথে সাথে এ বিষয়ে জনগণের কাছে বাস্তবায়নের নিশ্চয়তা তৈরি হয়। এ ব্যাপারে আদেশ জারির বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে সাড়া আসলে আমরা তখন স্বাক্ষরের বিষয়ে আমাদের সিদ্ধান্ত জানাবো। তাই প্রথম প্রস্তাবটাকে আমরা সমর্থন করছি এবং সরকার যখনই জানাবে যে তারা প্রথম প্রস্তাবটি অনুযায়ী কার্যক্রম শুরু করবে, তখনই আমরা জুলাই সনদে স্বাক্ষর করবো।’

ঐক্যমত্য কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশ নিয়ে বিএনপি নেতাদের বক্তব্যে প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘ঐক্যমত্য কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশ নিয়ে বিভিন্ন দল এখন নানা ধরণের কথা বলছে। তবে আমরা বলবো, এ বিষয়ে দীর্ঘদিন আলোচনা হয়েছে। সেখানে আমাদের দেশের যে প্রয়োজনীয় গণতান্ত্রিক সংস্কারগুলো প্রয়োজন সেগুলোই আলোচনায় এসেছে। ‘নোট অব ডিসেন্ট’ যে বিষয়গুলো এসেছে। এখনো অনেকে মনে হয় কথা বলতে যেন ভুলে গেছি। সেগুলো ছিল যে, কমিশন একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু একটা দলের সেখানে বিরোধিতা ছিল। সেটাকে ডকুমেন্ট আকারে রাখতে চেয়েছে তারা। কোনো ‘নোট অব ডিসেন্ট’ মানেই এটা বুঝায়। যাতে আমরা সবাই মিলে একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। হয়তো কারো কারো সেখানে বিরোধিতা ছিল। সেটা উল্লেখ করা থাকবে। সেই ধারণাটা গৃহীত হয়ে গেছে।’

ফেব্রুয়ারির নির্বাচন প্রসঙ্গে নাহিদ বলেন, ‘সর্বশেষ সুপারিশের প্রথমটা অনুযায়ী সরকার সামনে এগোবে। সর্বোপরি জুলাই সংস্কার, জুলাই সনদ এবং জুলাইয়ের গণহত্যার বিচারের রোড ম্যাপ অবশ্যই সরকারকে নির্বাচনের আগে দিতে হবে এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। কারণ নির্বাচন কমিশন জনগণ এবং রাজনৈতিক দলের আস্থা হারাচ্ছে। তাই ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে হলে এই বিষয়গুলো দ্রুতই সমাধানের দিকে যেতে হবে।’

জুলাই সনদ অধ্যাদেশ জারি হলে পরবর্তী সংসদ এসে শুধু সেটা সংবিধানে সংযুক্ত করবে উল্লেখ করে এনসিপি আহ্বায়ক নাহিদ বলেন, ‘গণভোটই এই প্রস্তাবগুলো সম্পূর্ণ অনুমোদন হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী সংবিধান এবং সংস্কার যেটাই বলি সেটা শুধু আনুষ্ঠানিকভাবে সেটাকে সংবিধানে অধিষ্ঠিত করবে। পরবর্তী সংসদের কোনো ইখতিয়ার থাকবে না যে, সেখানে কোনো ধরনের পরিবর্তন আনার। শুধু সংবিধানে সেসব সন্নিবেশিত হবে মাত্র। ২৭০ দিনের মধ্যে পরবর্তী সংবিধান সেগুলো বাস্তবায়ন না করলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সেগুলো সংবিধানে সংযুক্ত হবে কমিশনের এই প্রস্তাব আমাদের কাছে যথার্থই মনে হয়েছে। পৃথিবীর অনেক দেশেই এই উদাহরণগুলো আছে। এটা তো নতুন কোনো কিছু না, যারা বিরোধিতা করছেন, তারা চাইলে এটা দেখতে পারেন। এক্সপার্টদের সাথে কথা বলতে পারেন।’

দেশে বহুমাত্রিক সংকট আছে, তবুও রাজনৈতিক ঐকমত্যের মাধ্যমে এগিয়ে যাওয়ার কথা উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘জনগণের অনেক প্রত্যাশা ছিল গণ-অভ্যুত্থানের পর। এই সরকারের পক্ষ থেকে, এমনকি আমাদের পক্ষ থেকেও। ফলে আমরা মনে করছি প্রত্যাশাগুলো পূরণ করতে হবে। মানুষ পরিবর্তন চাচ্ছেন দেশে। মানুষের একটা ভয় আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, সব কিছু কি আগের মতো হয়ে যাচ্ছে কিনা? যাবে কিনা? নতুন করে কোনো ফ্যাসিবাদ আসবে কিনা? স্বৈরতন্ত্র আসবে কিনা? মানুষের সেই কথা বলার জায়গাটা থাকবে কিনা?’

নাহিদ বলেন, ‘৫ আগস্টের পর দুর্নীতি ও দুর্বৃত্তায়নের যে রাজনীতি নতুন করে শুরু হয়েছে, চাঁদাবাজ দখলদারিত্ব, অন্যদিকে আমরা আবার সামাজিক ফ্যাসিবাদের উত্থান দেখছি। দেশে নানা মুখী সংকট আছে। পতিত স্বৈরাচারী শক্তি তারা তো নানা ধরণের ষড়যন্ত্র করছে। যার সাথে অনেক বৈদেশিক শক্তিও জড়িত। ফলে আমরা সংকটের মুখেই আছি। এই সংকটের মধ্যে যেমন আমাদের জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন। আবার এই জাতীয় ঐক্যের ভেতরে নিজেদের দলগুলোর ভেতরে যে সমস্যাগুলো রয়েছে। সেগুলো সমাধান করেই আমাদের এক জায়গায় থাকতে হবে।’

নাহিদ বলেন, ‘কেউ যদি মনে করে, তারা এককভাবে নেতৃত্ব দিবে। অথবা সরকার গঠন করে ফেলবে। এটা আসলে সম্ভব হবে না। দেশের সবগুলো পক্ষের মধ্যে যদি এই ন্যূনতম ঐক্য না থাকে। ফলে এককভাবে সরকার গঠন করে সেই সরকার এককভাবে টিকিয়ে রাখা কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। জনগণের যে ন্যূনতম আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছিল সংস্কার বিচার এই দাবিগুলো উপেক্ষা করে যদি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হয়। সেটিও আসলে টেকসই হবে না। আমরা মনে করি, একটা টেকসই পরিবর্তনের জন্য সংবিধানসহ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ন্যূনতম সংস্কারের যে পরিবেশ তৈরি হয়েছিল। এজন্য যদি বাঁধা তৈরি করা হয়, সরকারের জায়গা থেকে যদি গড়িমসি তৈরি হয়, তাহলে এই সরকারকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে। যারা বাঁধা দিবে তাদেরকে জনগণের মুখোমুখি হতে হবে।’

শাপলা প্রতীকের বিষয়ে অনঢ় অবস্থানের কথা জানিয়ে নাহিদ বলেন, ‘শাপলা প্রতীক কমিশন কেন এনসিপিকে দিবে না, সেটার আইনি ব্যাখ্যা দিতে হবে কমিশনকে। আমরা এখনও মনে করছি তারা আমাদের শাপলা দিয়ে দিবেন। শাপলা যদি এনসিপিকে না দেয়া হয়, তাহলে তাদের দ্বারা সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব হবে কিনা এটা প্রশ্ন থেকে যায়। একটা নবগঠিত দলের সাথে যদি তারা বেইমানি/অবিচার করে তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের অধীনে একটা সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয়। আর নির্বাচন যদি সুষ্ঠু না হয়, তাহলে এই নির্বাচন কমিশনের যে পরিণতি হয়েছে। সেই পরিণতিই ভোগ করতে হবে তাদেরকে।’

বিএনপি ও জামায়াতের সাথে জোট করতে গেলে ভাবতে হবে উল্লেখ করে নাহিদ বলেন, ‘এনসিপি এককভাবে নির্বাচনে যাওয়ার জন্য সাংগঠনিক শক্তি সঞ্চয় করছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করছে। কারো মুখাপেক্ষী বা কারো ওপর নির্ভরশীল হয়ে আমরা রাজনীতি করবো না। কৌশলগত কারণে বা দেশের বৃহত্তর স্বার্থে যদি কারো সাথে সমঝোতার প্রয়োজন হয় সেটার জন্য আমার দল ওপেন আছে। কারো সাথে জোট হবে কি হবে না সেটার ওপর বসে নেই। আমি জোট করবো না বলেছি, সেটা বলিনি। বলেছি, জোট করতে হলে অনেক ভাবতে হবে। আমাদেরকে নিয়ে জনগণের অনেক প্রত্যাশা আছে। আমাদের ওপর তাদের একটা আলাদা আগ্রহ আছে। পুরোনোদের প্রতি একটা অনিহা আছে। আওয়ামী লীগকে জনগণ বিতাড়িত করেছে। এছাড়াও যে দলগুলো আছে। গত ১৬ বছর তাদের ভূমিকা জনগণের পক্ষে সঠিকভাবে দাঁড়াতে না পারা। এবং ঐতিহাসিকভাবেও অনেক দলের অনেক ব্যত্যয় আছে। আমরা মনে করি, নতুন রাজনীতির আকাঙ্ক্ষা সমাজে তৈরি হয়েছে। বিভিন্ন দলের বিভিন্ন ধরণের কলঙ্ক রয়েছে।

বিএনপির কথা যদি বলি, অতীতে তাদের শাসনামলে দুর্নীতি নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। ৫ আগস্টের পর তাদের নিয়ে অনেক সমালোচনা আছে। এভাবে জামায়াতেরও ঐতিহাসিক দায়ভার রয়েছে। ৫ আগস্টের পরেও জামায়াতকে নিয়ে অনেক সমালোচনা রয়েছে। সেকারণে এই ধরণের দলগুলোর সাথে কোনো ধরনের জোটে গেলে আমাদেরকে অবশ্যই ভাবতে হবে। তাই আমরা আমাদের মতো করেই আগাতে চাই। আমাদের জোটের বিষয়টা জুলাই সনদ, বিচার, গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা পূরণ, নতুন বাংলাদেশের প্রশ্নে, সংস্কারের প্রশ্নে কাদের ভূমিকা কেমন। সেসব বিষয়ে যদি দেখি আমরা আমাদের সাথে কারো মিলে যায় বা কাছাকাছি হয়, তখন আমরা তাদের সাথে জোটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিবো।

এসময় আখতার বলেন, ‘এনসিপি ১৭ তারিখে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলে ঐক্যমত্য কমিশনের সর্বশেষ সুপারিশমালা আসতো না। তাতে জুলাই অভ্যুত্থানের আশা-আকাঙ্ক্ষা ধূলিসাৎ হয়ে যেত।’

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বন্ধে বিএনপিকে মহিলা জামায়াতের আহ্বান

মুফতি মুহিব্বুল্লাহ কি পতিত ফ্যাসিস্টদের দাবার গুটি?

বিকেলে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর মিছিল, রাতে আড়াইহাজার ইয়াবাসহ যুবদল নেতা আটক

১৫ নভেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি সম্পন্নের তাগিদ

ইসরাইলি সেনা নিহতের অভিযোগে গাজায় হামলা, মৃত বেড়ে ১০৪

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত