‘নয়বার ঘর তুলেছি, তিস্তা কাইরা নিছে’

উপজেলা প্রতিনিধি, গঙ্গাচড়া (রংপুর)
প্রকাশ : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১২: ৪৩
আপডেট : ০৭ জুলাই ২০২৫, ১৩: ০৭

রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার মটুকপুর গ্রামের সাহেরা খাতুন (৭০) কাঁদতে কাঁদতে বলেন, নয়বার ঘর তুলেছি, নয়বারই তিস্তা কাইরা নিছে। ছেলে-মেয়ে শহরে কাম করে, আমি থাকি হাটে-ঘাটে। বাঁধ চাই, মরার আগে শান্তিতে থাকতে চাই।

বিজ্ঞাপন

শুধু সাহেরা খাতুনই নয় ‘আমরা ত্রাণ চায় না, চায় বাঁধ’ এমন হাহাকার এখন পুরো উপজেলাজুড়েই। বছরের পর বছর ভাঙন দেখা দিলেও হাল ছাড়েনি উপজেলার তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা। তারা স্বপ্ন দেখছেন, একটি বাঁধই তাদের বাঁচিয়ে রাখবে।

জানা গেছে, প্রতিবছর বর্ষায় তিস্তার তাণ্ডবে উপজেলার গ্রামের পর গ্রাম ভেঙে যায়। ৫ বছরে গঙ্গাচড়ায় তিস্তার ভাঙনে ৬ হাজারের বেশি পরিবার বসতভিটা হারিয়েছে। নোহালী ইউনিয়নের মিনার বাজার থেকে লক্ষিটারী ইউনিয়নের মহিপুর পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে যদি একটি সুরক্ষিত বাঁধ নির্মাণ করা হয়, তাহলে গঙ্গাচড়ার বাগডোহরা চর, ঢাকের চর, মিনার বাজার, চর বিনবিনা, মটুকপুর, ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট, আওলীয়ার হাট, আনন্দ বাজার গ্রাম বাঁচিয়ে তোলা সম্ভব।

চর বিনবিনার কৃষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, নদী ভাঙলেই ত্রাণ আসে কিন্তু ত্রাণে কি জমি ফেরত পাওয়া যায়? সরকার একটা বাঁধ দিলে এই এলাকায় হাজার হাজার পরিবার আবার নতুন করে ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।

প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, প্রতিবছর স্কুলের ছাত্রছাত্রী কমে যাচ্ছে। অনেকে নদীভাঙনের কারণে এলাকা ছেড়ে চলে যায়। শিক্ষার আলো টিকিয়ে রাখতে হলে আগে এই এলাকার অস্তিত্ব বাঁচাতে হবে-এর একমাত্র উপায় বাঁধ।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান শরিফুল ইসলাম বলেন, যদি পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সরকারিভাবে একটি টেকসই বাঁধ প্রকল্প দেওয়া হয়, তাহলে হাজারো পরিবার রক্ষা পাবে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) সজিবুল করীম বলেন, ত্রাণ দেওয়া কোনো স্থায়ী সমাধান না। তিস্তা নদীতে পর্যাপ্ত বাঁধ না থাকায় তিস্তা পাড়ের মানুষ প্রতি বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ১০ কিলোমিটার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে নদীর গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করে এ ক্ষতি কমানো সম্ভব।

উপজেলার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, তিস্তা নদীভাঙন গঙ্গাচড়ার একটি দীর্ঘদিনের সংকট। আমরা ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডে জানিয়েছি। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে সমন্বয় করে জনগণের দাবি উচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো আশা করছি সরকার বিষয়টি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনা করবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত