হাসিনার দুঃশাসনে বিধ্বস্ত জনপদ : গাইবান্ধা

আ.লীগ-পুলিশের হাতে খুন ৩২, পঙ্গুত্বের শিকার ১৫ জন

  • জামায়াত-ছাত্রশিবিরের ৮ নেতাকর্মীকে হত্যা
  • জঙ্গি নাটকে নিহত ৪, আহত অন্তত ৩০
  • আল্লামা সাঈদীর রায়ের প্রতিবাদে বিক্ষোভে নিহত ৮
  • বাসে পেট্রোল বোমায় নিহত ১০, আহত দেড় শতাধিক
  • প্রহসনের নির্বাচনের প্রতিবাদ করায় চারজনকে গুলি করে হত্যা
  • পুলিশ ও যুবলীগের দলবদ্ধ ধর্ষণের দুই ঘটনা ছিল আলোচিত
  • হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে আওয়ামী ডেপুটি স্পিকারের বহুতল ভবন
  • ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ জেলার ছয়জন
শামিম উল হক শাহীন, গাইবান্ধা
প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ০৮: ২৫
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ২০: ১৬

স্বৈরাচার শেখ হাসিনার গত সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে দেশের সর্বত্র হত্যা, খুন, জুলুম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ ছিল দেশের মানুষ। তার থেকে ব্যতিক্রম ছিল না গাইবান্ধা জেলা। ফ্যাসিবাদী শাসনে একদিকে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলা, চাঁদাবাজি, লুটতরাজ, গুন্ডামি, দখলবাজি, নৈরাজ্য; অন্যদিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তায় গুলি, হত্যা যেন ‘ডালভাতে’ পরিণত হয়েছিল। বিরোধীদের দমনে দেওয়া হতো মিথ্যা ও ‘গায়েবি মামলা’। তাদের ছিল না ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার। উপেক্ষিত ছিল মানবাধিকার। বানোয়াট মামলার ঘানি টেনে নিঃস্ব হয়েছে অনেক পরিবার।

স্থানীয় রাজনৈতিক শিষ্টাচারেরও বালাই ছিল না আওয়ামী লীগ শাসনামলে। উল্টো আওয়ামী লীগের অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে বিরোধীদের অনেককে জীবন দিতে হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সাড়ে ১৫ বছরের দুঃশাসনে আওয়ামী লীগের দলীয় ক্যাডার ও তাদের দোসর-প্রশাসনের হাতে জেলায় অন্তত ৩২ জন হত্যার শিকার হয়েছেন। আহত হয়েছেন অগণিত মানুষ। এর মধ্যে অনেকেই পঙ্গুত্বের অভিশাপ নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

বিজ্ঞাপন

জেলা প্রশাসন অফিস সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পতনের পর জেলায় বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে ২৭৩টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন পায় প্রশাসন। যাচাই-বাছাই শেষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় ২২৮টি এবং প্রত্যাহার হয় ১৪৪টি।

জনতার বিক্ষোভে পুলিশের নির্বিচার গুলি, নিহত ৮

২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ‘বিচারিক প্রহসনে’ মৃত্যুদণ্ড ঘোষণার পর ধর্মপ্রাণ মানুষ বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। এর থেকে ব্যতিক্রম ছিল না গাইবান্ধাও। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতার ওপর পুলিশের নির্বিচার গুলি ও এলাকাবাসীর প্রতিরোধে বিপুল হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ সময় মোট আটজন নিহত এবং অর্ধশতাধিক আহত হন। পুলিশ অসংখ্য রাইফেল ও শটগানের গুলি এবং টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, পুলিশের গুলি শেষ হওয়ার পর বিক্ষুব্ধ জনতার পিটুনিতে তিন পুলিশ সদস্য নিহত ও দুজন গুরুতর আহত হন। এ সময় জনতার সঙ্গে থাকা তিন জামায়াতকর্মী নিহত এবং ১৩ জন আহত হন।

এ ঘটনায় পুলিশ দ্রুত বিচার আইনে সাতটিসহ মোট ২৮টি মামলা দায়ের করে। এসব মামলায় আসামি করা হয় প্রায় ৩০ হাজার জামায়াত-শিবির নেতাকর্মীকে। অনেক গ্রাম গ্রেপ্তার আতঙ্কে পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।

পুলিশ-আ.লীগ মিলে জামায়াত-শিবিরের আট নেতাকর্মীকে খুন

২০২০ সালের অক্টোবরে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের শহীদদের হালনাগাদ তালিকা অনুযায়ী, ২০১৩ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তাদের আট নেতাকর্মীকে হত্যা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের দোসর পুলিশ বাহিনীর কিছু সদস্য। এর মধ্যে ২০১৩ সালের ১৯ জানুয়ারি রাতে পুলিশ অভিযান চালিয়ে গুলি করে হত্যা করে সোহানুর রহমান সোহাগকে। একই বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি আলেম-ওলামাদের ডাকে নাস্তিকদের শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করলে গুলি চালায় পুলিশ। এ সময় গুলিতে নিহত হন মজনু মিয়া। এর এক সপ্তাহ না পেরোতেই ২৮ ফেব্রুয়ারি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে ‘প্রহসণের রায়ের’ প্রতিক্রিয়ায় বিক্ষোভ করলে পুলিশের গুলিতে নিহত হন জুয়েল রানা ও ফরিদুল ইসলাম।

এছাড়া ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্রে পিটিয়ে হত্যা করা হয় শাহাবুল ইসলামকে। মামলা দিয়ে রংপুর থেকে ধরে নিয়ে ২০১৪ সালের ১১ জানুয়ারি গুম ও হত্যা করা হয় নাজমুস সাকিবকে। কথিত বাস পোড়ানোর মামলায় ১ নম্বর আসামি করে ২০১৫ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি শিবিরকর্মী মোস্তফা মঞ্জিলকে ক্রসফায়ারে খুন করা হয়। পুলিশি রিমান্ডের পর অসুস্থ হয়ে ২০১৫ সালের ৩ এপ্রিল কারাগারে মারা যান শাহারুল ইসলাম।

প্রহসনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পুলিশের গুলিতে নিহত চার, আহত ৫৪

২০১৪ সালের ৪ ও ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন সাদুল্যাপুরে দুটি, পলাশবাড়ীতে ছয়টি ও সদরে তিনটি ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। প্রহসনের নির্বাচনের প্রতিবাদে পলাশবাড়ীতে রংপুর-ঢাকা মহাসড়কের সাথী সিনেমা হল এলাকায় পিকেটিং করেন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা। পুলিশের সঙ্গে তাদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। এ সময় গুলিতে জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের তিন নেতাকর্মী নিহত হন। এসব ঘটনায় আহত হন অন্তত ৫৪ জন।

গাইবান্ধা সদরের বেড়াডাঙ্গা গ্রামে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত খোকারাম রংপুর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

সুন্দরগঞ্জের রামভদ্র খানবাড়িতে যৌথবাহিনী অভিযান চালায়। এ সময় গ্রামবাসীর সঙ্গে তাদের সংঘর্ষ হয়। এক পর্যায়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রামবাসীর ওপর টিয়ারশেল ও গুলিবর্ষণ করে। এ সময় এলাকাবাসীর বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে যৌথবাহিনীর সদস্যরা।

বাসে পেট্রোল বোমায় নিহত ১০, আহত দেড় শতাধিক

২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি গাইবান্ধা-পলাশবাড়ী সড়কের তুলশীঘাটে মধ্যরাতে ঢাকাগামী একটি বাসে পেট্রোল বোমা ছোড়া হয়। এতে ঘটনাস্থলেই চারজন এবং রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আরো তিনজন মারা যান। গাইবান্ধা আধুনিক হাসপাতালে মোট ৩২ জন দগ্ধ রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। ১৮ জনকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। ওই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে সন্ত্রাসবিরোধী একটি মামলা দায়ের করে। মামলায় গাইবান্ধা জেলা বিএনপির সভাপতি আনিসুজ্জামান খান বাবুসহ ৬০ জনকে আসামি করা হয়। এরপর বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের ওপর নেমে আসে নির্মম নির্যাতন।

অবরোধ চলাকালে মারা যান স্কুলশিক্ষক আলতাফ হোসেন। এ সময় গ্রেপ্তার করা হয় পাঁচ শতাধিক ব্যক্তিকে।

গাইবান্ধার বুড়িরঘর নামক স্থানে ১৭ ফেব্রুয়ারি ভোরে ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা মোস্তফা মঞ্জিলকে ক্রসফায়ারে হত্যা করে র‌্যাব। এর আগে আটকের পর তার ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হয়।

অভিযোগ রয়েছে, বিরোধী দলের আন্দোলন দমন করতে সে সময় বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমার হামলা চালিয়ে বিএনপি-জামায়াত নেতাদের ওপর ক্র্যাকডাউন চালায় আওয়ামী প্রশাসন।

জঙ্গি ঘটনায় নিহত চার, আহত ৩০, গ্রেপ্তার ৫৩

২০১৩ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি পবিত্র কোরআন অবমাননা ও ইসলামবিরোধীদের গ্রেপ্তার দাবিতে জুমার নামাজ শেষে পলাশবাড়ীতে জামায়াতে ইসলামীসহ সমমনা কয়েকটি দলের হাজার হাজার লোক মিছিলসহ রংপুর-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করেন। এ ঘটনায় পুলিশের সঙ্গে অবরোধকারীদের ব্যাপক সংঘর্ষ বাধে। এদিন পুলিশের গুলিতে তিনজন নিহত ও পুলিশসহ ৩০ জন আহত হন। এ সময় পুলিশ কমপক্ষে ৩০ রাউন্ড গুলি করে এবং ১৫ জনকে আটক করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ঘটনাকে সে সময় জঙ্গি দমন বলে চালিয়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া ২০১৬ সালের ৯ জুন গোবিন্দগঞ্জে কথিত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে পুলিশের গুলিতে একজন ঘটনাস্থলে নিহত হন।

পঙ্গুত্বের বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছেন ১৫ জন

গোবিন্দগঞ্জের বেড়ামালঞ্চা গ্রামের আজাদুল ইসলাম, একই উপজেলার আব্দুস সালাম পলাশ ২০১৪ সালের ১৪ এপ্রিল উপজেলা নিবার্চনে ভোট কারচুপির বিরুদ্ধে সোচ্চার হন। এ বিষয়ের কর্মসূচিতে পুলিশ ও ছাত্রলীগের হামলা এবং গুলিতে গুরুতর আহত হয়ে পঙ্গু্ত্ব বরণ করছেন তারা।

পলাশবাড়ীর শিখন গ্রামের শাকিল আহমেদ ২০১৩ সালের ৫ মে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হন। গুলি তার চোখে লাগায় তিনি অন্ধ হয়ে যান। সদরের লক্ষ্মীপুরের সেলিম উদ্দিন, পলাশবাড়ীর দুবলাগাড়ী গ্রামের আশরাফুল ইসলাম রায়হান, লোকমানপুর গ্রামের সবুজ মিয়া, দিঘলকান্দি গ্রামের হাফিজার রহমান, মহেশপুর গ্রামের পাপুল মিয়া, ফরকান্দাপুর গ্রামের আইয়ুব আলী, বাসুদেবপুর গ্রামের মমতাজ উদ্দিন, জামালপুর গ্রামের সজীব মিয়া, আসাদুজ্জামান, আমগাড়ী গ্রামের রাজিব মিয়া, মশিউর রহমান, কাশিয়াবাড়ি গ্রামের রাশেদ মিয়াসহ আরো অনেক নাম না-জানা যুবক আওয়ামী লীগের শাসনামলে গণবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে হামলা, পুলিশের গুলি ও নির্যাতনে আহত হয়েছেন। তারা এখন একেকটি জীবন্ত লাশ হয়ে আছেন।

পুলিশ ও যুবলীগের সংঘবদ্ধ ধর্ষণের আলোচিত দুই ঘটনা

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে গোবিন্দগঞ্জ থানা হেফাজতে এক কিশোরীকে পাশবিক নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে। বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করলেও প্রায় এক সপ্তাহ পর অবশেষে আদালতের নির্দেশে পাঁচ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়।

একই সালের ২৩ অক্টোবর সাদুল্যাপুরে এক গৃহবধূকে ১৫ দিন আটক রেখে দলবদ্ধ ধর্ষণ করেছে ইউনিয়ন যুবলীগ নেতারা। অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার এবং বিচার দাবিতে সাদুল্যাপুরে মানববন্ধন ও সড়ক অবরোধ করেন এলাকাবাসী।

বিএনপি ও জামায়াতের অফিস ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ

শেখ হাসিনার শাসনামলে জেলা বিএনপির অফিস কয়েকবার ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এর মধ্যে ১৮ দলের হরতাল চলাকালীন ২০১২ সালের ১১ ডিসেম্বর বিএনপি এবং জামায়াতের অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এক যুবলীগ কর্মীকে লাঞ্ছিতের ঘটনায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগকর্মীরা জেলা বিএনপি অফিস ভাঙচুর করে। এ ঘটনার জেরে বিকালে যুবলীগ ও ছাত্রলীগকর্মীরা জেলা জামায়াত অফিস এবং একটি ছাত্রাবাসে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এসব ঘটনায় উল্টো বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতাকর্মীদের মামলা দিয়ে হয়রানি করা হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের।

২০১৩ সালের ২৪ জানুয়ারি ছাত্রলীগ-যুবলীগ জামায়াতের জেলা অফিস ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। স্টেশনে ভাঙচুর ও পুলিশ-জনতার ধাওয়ায় কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। পুলিশ ১৫ রাউন্ড টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে।

সাদুল্যাপুর হাই স্কুলে জনসভায় সাবেক সংসদ সদস্য উম্মে কুলছুম স্মৃতির নেতৃত্বে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে বিএনপির ১৫-২০ নেতাকর্মীকে আহত করে। উম্মে কুলছুমের নেতৃত্বে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা জেলা বিএনপি সভাপতি ডা. ময়নুল হাসান সাদিকের সাদুল্যাপুর এবং পলাশবাড়ীর বাসাতেও হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।

হামলা থেকে রেহাই পাননি গণমাধ্যম ও সংবাদকর্মীরা

২০১১ সালের ২৫ জুলাই গাইবান্ধার দৈনিক ঘাঘট অফিসে হামলা চালিয়ে কম্পিউটার, লেজার প্রিন্টার, ফ্যাক্স, টেলিফোনসহ অফিস ভাঙচুর করে। গাইবান্ধা জেলা মোটর মালিক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যুবলীগের সরদার শাহীদ হাসান লোটন পত্রিকা অফিসে ওই হামলা ও ভাঙচুর করেছে বলে দৈনিক ঘাঘট সম্পাদক জানান।

২০১৭ সালে আমার দেশ-এ প্রকাশিত একটি সংবাদে ক্ষিপ্ত হয়ে যুবলীগের গাইবান্ধা জেলা সভাপতি সরদার শাহীদ হাসান লোটন সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে গাইবান্ধা জজ আদালতে একটি মানহানির মামলা করেন। ওই মামলায় ২০২৪ সালের ২৩ অক্টোবর সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বেকসুর খালাস পান।

১২ হিন্দু পরিবারকে উচ্ছেদ করে আওয়ামী ডেপুটি স্পিকারের বহুতল ভবন

গাইবান্ধা শহরের স্টেশন সংলগ্ন ১১টি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, ১২টি সংখ্যালঘু পরিবারের বসতবাড়ি-সম্পত্তি দখল করে বহুতল মার্কেট নির্মাণ করেন ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া। শ্বশুরের নামে মার্কেটের নাম রাখেন আব্বাস উদ্দিন টাওয়ার। ২০১৪ সালের আগস্টের এ ঘটনায় ব্যবসায়ী ও সংখ্যালঘু পরিবারগুলো বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন করেন। প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দেওয়া হয়। উচ্ছেদ হওয়া পরিবারগুলোর অনেকে বর্তমানে অন্যত্র চলে গেছে। আবার অনেকে নানা সমস্যায় দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। তারা এখন এই অনিয়ম-দুর্নীতির বিচার চান।

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদ হন গাইবান্ধার ছয়জন

ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ঢাকার রাজপথে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতে গিয়ে শহীদ হয়েছেন গাইবান্ধার ছয়জন। তারা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পুলিশ ও র‌্যাবের গুলিতে নিহত হন। তারা হলেনÑ গাইবান্ধার সাঘাটার সাজ্জাদ হোসেন (১৯), খোলাহাটির সুজন মিয়া (৩২), পলাশবাড়ীর আরিফুল মিয়া (২৮) ও শাকিনুর রহমান (২৬), গোবিন্দগঞ্জের জুয়েল রানা (২৭), সাদুল্যাপুরের নাজমুল মিয়া (২৪)। এ ছাড়া গাইবান্ধায় পুলিশের ছোড়া গুলিতে বেশ কজন আহত হন।

রাজনৈতিক দলের নেতাদের বক্তব্য

জেলা বিএনপি সভাপতি ডা. ময়নুল হাসান সাদিক আমার দেশকে বলেন, ‘শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে গাইবান্ধা জেলা বিএনপির ১৫-১৬ হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্রমূলক মামলা হয়েছে। আমাদের নেতাকর্মীদের পালিয়ে বেড়াতে হয়েছে। বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। চাকরিজীবীদের চাকরিচ্যুত, পদোন্নতি বন্ধ, অন্যায্য বদলিসহ নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। বিএনপির পরিচয় দিলে কাউকে চাকরি দেওয়া হয়নি। আমি বিএনপি করি বলে ৯ বছর আগেই চাকরি ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছি।’

ময়নুল হাসান সাদিক আরো বলেন, ‘বিরোধী দল হিসেবে আমরা কথা বলতে বা সভা-সমাবেশ করতে পারিনি। আমাদের দলীয় কার্যালয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা অনেকবার ভাঙচুরসহ অগ্নিসংযোগ করেছে। আমারা চাই বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অতীতের সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করা হোক।’

জামায়াতে ইসলামীর জেলা আমির আব্দুল করিম বলেন, ‘শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছরে গাইবান্ধায় জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের বিরুদ্ধে শত শত মামলা হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। আওয়ামী লীগের হত্যা, গুম, জুলুম, অত্যাচারের প্রতিবাদ করতে গিয়ে অনেককে শহীদ হতে হয়েছে। অনেকে আবার অন্ধ ও পঙ্গুত্ব বরণ করছেন।

আব্দুল করিম আরো বলেন, ‘জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে অনেকের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ চাকরিজীবীদের চাকরিচ্যুত এবং নানাভাবে হয়রানি করা হয়েছে। আমাদের কোনো সভা-সমাবেশ করতে দেওয়া হয়নি। নিজেদের রাজনৈতিক কার্যালয়গুলো ছিল তালাবদ্ধ।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত