আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারে এলো হাঁড়িভাঙ্গা আম

  • স্বস্তিতে কৃষক, ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা
  • হরমোন ও কেমিক্যাল মেশালে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি ডিসির
রংপুর অফিস
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৫, ২৩: ১১

অবশেষ বাজারে এলো রংপুরের ঐতিহ্যবাহী হাঁড়িভাঙ্গা আম। টানা ১৫ দিনের টানাপোড়েন দূর হয়ে স্বস্তি ফিরল কৃষক, উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মাঝে। শুরুর দিনই বিপুলসংখ্যক পাইকারের আনাগোনা লক্ষ করা যায় পদাগঞ্জের হাটে।

মঙ্গলবার মিঠাপুকুরের পদাগঞ্জ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে প্রধান অতিথি হিসেবে আম বাজারজাত কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল।

বিজ্ঞাপন

মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুলতামিস বিল্লাহর সভাপতিত্বে এ সময় আরো বক্তব্য রাখেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) রমিজ আলম, রংপুর জেলা জামায়াতের আমির অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সেক্রেটারি এনামুল হক, জেলা বিএনপির সদস্য সাজ্জাদ হোসেন রানা, উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক নাজমুল হক ইমন প্রমুখ।

এ সময় কৃষকরা একটি বিশেষায়িত হিমাগার, ম্যাঙ্গো ট্রেন, যাতায়াতব্যবস্থা উন্নতকরণ, ব্যাংক স্থাপন, হাঁড়িভাঙ্গা আম টেকসইয়ের জন্য গবেষণা, বিদেশে রপ্তানি এবং বাজারজাত কার্যক্রম নির্বিঘ্নের পাশাপাশি ন্যায্য দাম নিশ্চিতের দাবি জানান।

দাবিগুলো ধারাবাহিকভাবে বাস্তবায়নের আশ্বাস দিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, ঐতিহ্যবাহী হাঁড়িভাঙ্গা আম এখন জিআই পণ্য। এ মান ধরে রাখতে এবং বিদেশে রপ্তানি নিশ্চিত করতে হরমোন প্রয়োগ থেকে বিরত থাকতে হবে চাষিদের। এ নির্দেশনা না মানলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এর আগে ২০ জুন হাঁড়িভাঙ্গা আম বাজারজাতের তারিখ নির্ধারণ করেছিল কৃষি বিভাগ। চাষি ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে তাদের সমন্বয়হীনতায় নির্ধারিত তারিখের ১৫ দিন আগেই বাজারে পাওয়া যায় হাঁড়িভাঙ্গা আম।

এর কারণ প্রচণ্ড দাবদাহে আম পাকা শুরু হয় আগেই। বাগানে রাখতে পারছিলেন না চাষিরা। আগে বাজারে এনেও মিলছিল না গ্রাহক। এ নিয়ে মহাবিপাকে পড়েছিলেন তারা।

অনলাইন উদ্যোক্তা হানিফ খান সজীব জানান, গ্রাহকদের চাহিদা থাকলেও আমরা আম পাঠাতে পারিনি। প্রচুর পরিমাণে আম আমদানি থাকলেও কিনতে পারিনি। কারণ কুরিয়ার সার্ভিস বন্ধ ছিল। আনুষ্ঠানিকভাবে বাজারজাত শুরু হওয়ায় কুরিয়ার সার্ভিসগুলো খুলে গেছে। আমরা আম পাঠানো শুরু করেছি।

খোড়াগাছ পশ্চিম পাড়ার বৃহত্তর হাঁড়িভাঙ্গার বাগানি আবু রায়হান আলী জানান, চার বিঘা জমিতে লাগানো হাঁড়িভাঙ্গা আম ঈদের আগের দিন থেকেই পাকা শুরু করেছে। কিন্তু বাগানিরা আম বাগানে রাখতে পারছিলেন না। যাই হোক, অবশেষে তারিখ এগিয়ে এনে আম বাজারজাত শুরু হলো।

পদাগঞ্জসহ স্থানীয় মোকামগুলোয় প্রতি মণ বড় সাইজের কাঁচা হাঁড়িভাঙ্গা আম এক হাজার ৮০০ থেকে দুই হাজার, মাঝারি সাইজের কাঁচা আম এক হাজার ৪০০ থেকে এক হাজার ৮০০ এবং পাকা আম ৮০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হয়।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান, এবার হাঁড়িভাঙ্গা আমের বাম্পার ফলন হয়েছে। জেলার শুধু মিঠাপুকুরে ১ হাজার ৫০০ হেক্টরসহ সারা দেশে প্রায় পাঁচ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে হাঁড়িভাঙ্গার চাষ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১৫ টনের বেশি ফলন হবে বলে আমরা আশা করছি। সে হিসাবে এবার ৮২ হাজার টন বা ২০ লাখ মণের মতো হাঁড়িভাঙ্গা আমের উৎপাদন হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত