অর্থ বরাদ্দ না থাকায় পাঁচ বছর বন্ধ শ্যামপুর চিনিকল

এমএ সালাম বিশ্বাস, (বদরগঞ্জ) রংপুর
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৯: ১৪

রংপুরের একমাত্র ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান শ্যামপুর সুগার মিল বন্ধ হয়ে আছে পাঁচ বছর ধরে । যে মিল একসময় হাজারো মানুষের জীবিকার কেন্দ্রবিন্দু ছিল, সেখানে এখন শুধুই নিস্তব্ধতা।  অর্থ বরাদ্দ পেলে চিনিকল পুনরায় সচল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু অর্থ বরাদ্দে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ‘না’-তেই থেমে যায় মিল চালুর উদ্যোগ।

আর তাই অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর মিল চালুর ঘোষণার ৯ মাস পরে নতুন আখ মাড়াই মৌসুম এলেও কোনো উদ্যোগ নেই। রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি বন্ধ মিল চালু করতে সরকার একটি টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করেছিল। টাস্কফোর্স কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী শিল্প মন্ত্রণালয় পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ছাড় চেয়ে অর্থ বিভাগের কাছে চিঠি পাঠায়।

বিজ্ঞাপন

শ্যামপুর সুগার মিল সূত্রে জানা গেছে, ১৯৬৪ সালে ১১১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত হয় শ্যামপুর সুগার মিল। গড়ে ওঠার তিন বছরের মধ্যে মিলটিতে উৎপাদন শুরু হওয়ার পর লাভে থাকলেও ২০০০ সালের পর থেকে টানা লোকসানের মুখে পড়ে। দৈনিক এক হাজার ১৬ টন আখ মাড়াই ও বার্ষিক ১০ হাজার ১৬১ টন চিনি উৎপাদনক্ষমতা থাকলেও বন্ধ হওয়ার আগের দশ মাড়াই মৌসুমে প্রায় ৩৬৫ কোটি টাকা লোকসানের পর শিল্প, বাণিজ্য, অর্থ ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি মিলটির মাড়াই কার্যক্রম বন্ধের সুপারিশ করে। এরপর ২০২০-২১ মাড়াই মৌসুমে মিলের কার্যক্রম বন্ধ করে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশন।

অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর গত বছরের ১৫ নভেম্বর শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বন্ধ হয়ে যাওয়া রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি চিনিকল চালু করার আশ্বাস দেন। পরে ডিসেম্বরে বন্ধ থাকা সুগার মিল পুনরায় চালু ও লাভজনকভাবে চালানোর লক্ষ্যে টাস্কফোর্সের সুপারিশ ও মতামতের আলোকে এবং পর্যাপ্ত আখ পাওয়া সাপেক্ষে শ্যামপুর সুগার মিলে মাড়াই কার্যক্রম চালু করার উদ্যোগ নেয় সরকার।

সুপারিশে মিলটি চালু করার জন্য ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য যথাক্রমে পাঁচ কোটি ৩৭ লাখ টাকা মঞ্জুর ও ছাড় করার লক্ষ্যে চলতি বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায় সরকার। পরে ১৩ জুলাই পুনরায় ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য শ্যামপুর সুগার মিলের জন্য অর্থ মঞ্জুর ও ছাড় করার জন্য শিল্প মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগে চিঠি পাঠায়।

তবে ৩০ জুলাই এক চিঠির মাধ্যমে অর্থ বরাদ্দের বিষয়ে অসম্মতি জানায় অর্থ বিভাগ। তাই সুগার মিলটি বন্ধ রেখেই নতুন আখ মাড়াই মৌসুম শুরু হচ্ছে।

সম্প্রতি শ্যামপুর সুগার মিল ঘুরে দেখা যায়, আগাছা ও গাছগাছালিতে পুরো মিল ঢেকে গেছে। আখ পরিবহনের ট্রাক্টর-ট্রলিগুলো পড়ে আছে অযত্নে, ঝোপঝাড় ও লতাপাতায় ঢেকে গেছে সেগুলো। চিনিকলের বিভিন্ন যন্ত্রাংশও দীর্ঘদিন পড়ে থেকে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।

বন্ধ সুগার মিল চালু করার জন্য গঠিত টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য আলতাফ হোসেন জানান, সুগার মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর বিপাকে পড়েছেন আখচাষি, শ্রমিক এবং সুগার মিল ঘিরে গড়ে ওঠা বিভিন্ন পেশার মানুষ।

শ্যামপুর সুগার মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন আমার দেশকে বলেন, ‘অর্থ ছাড়ের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ‘না’ করেছে। আমাদের চেয়ারম্যান ও পরিচালক স্যার অর্থ ছাড়ের বিষয়টি নিয়ে চেষ্টা করছেন। শুধু এতটুকু জানি, সবশেষ কী অবস্থা তা জানা নেই’।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত