সাঘাটায় পাঁচ সড়কে যান চলাচল বন্ধের উপক্রম, বাড়ছে ভোগান্তি

মিজানুর রহমান রাঙ্গা, সাঘাটা (গাইবান্ধা)
প্রকাশ : ১৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬: ২৯

গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার ব্যস্ততম পাঁচটি সড়কের বিভিন্ন অংশ ধসে ও ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল প্রায় বন্ধের উপক্রম হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার কাজ না হওয়ায় এমন বেহাল দশা হয়েছে সড়কগুলোর।

এরমধ্যে বোনারপাড়া-কচুয়াহাট সড়ক সংস্কার কাজ মাঝপথে বন্ধ রেখে ঠিকাদার পালিয়ে গেছে। সাঘাটা-সোনাতলা সড়ক, বোনারপাড়া-মহিমাগঞ্জ সড়ক, পশ্চিমবাটি-দুর্গাপুর সড়ক ও দলদলিয়া-তেঁতুলতলি সড়কের বেশির ভাগ জায়গায় ধসে ভেঙেচুরে চলাচলে ভোগান্তির কারণ হয়ে পড়েছে। খানাখন্দে বড় বড় গর্তে পানি আটকে থাকায় প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে।

বিজ্ঞাপন

সরেজমিনে দেখা যায়, উপজেলা সদরের গুরত্বপূর্ণ বোনারপাড়া-কচুয়াহাট সড়কটি দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় বিভিন্ন অংশ ভেঙে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এলজিইডির আওতায় রুরাল কানেকটিভিটি ইমপ্রুমেন্ট প্রকল্পের আওতায় বোনারপাড়া জিসি-কচুয়াহাট পর্যন্ত ৬ হাজার ৪০০০ মিটার সড়কের সংস্কারসহ উন্নয়ন কাজের টেন্ডার হয়। সড়কটি প্রশস্তকরণ, দুপাশের পানি নিষ্কাশনের জন্য চারটি বক্সকালভার্ট নির্মাণ, চারটি ইউড্রেন ও গাইডওয়াল নির্মাণসহ কার্পেটিংয়ের জন্য ৫ কোটি ৬৫ লাখ ৭৩ হাজার ৭৩৬ টাকা বরাদ্দ হয়। কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের ১৮ অক্টোবর।

প্রকল্পটির বাস্তবায়নের কাজ পায় ঢাকার ধানমন্ডির মেসার্স এইচটিবিএল-সিসিসিজেভি নামক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নির্মাণকাজ মাঝপথে বন্ধ রেখে ঠিকাদার উধাও হয়।

এলাকাবাসী জানান, চরাঞ্চলসহ উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মধ্যে সাঘাটা, মুক্তিনগর, হলদিয়া ও বোনারপাড়া ইউনিয়নের সাতটি গ্রামের লোকজন উপজেলা সদর বোনারপাড়ায় যাতায়াত করতে হয় সড়কটি দিয়ে।

ওই সড়কে চলাচলকারী বাংলাবাজার এলাকার ভ্যানচালক আমজাদ হোসেন জানান, এ রাস্তাটি যখন চলাচলের অযোগ্য ছিল, তখন অন্তত কোনোমতে যাতায়াত করা গেছে। কিন্তু এখন কাজ বন্ধ রাখায় খোয়ার ওপর চলতে মানুষের যেমন কষ্ট হচ্ছে, তেমনি ভ্যানের টায়ার খুব তাড়াতাড়ি নষ্ট হচ্ছে। শিমুলতাইড় গ্রামের বাসিন্দা আইয়ুব হোসেন আক্ষেপ করে বলেন, এ সড়কটির উন্নয়ন কাজ শুরু না হওয়াই ভালো ছিল।

এখন এটি এলাকার মানুষের গলার কাঁটা হয়ে পড়েছে। ২০০৭ সালের পাকাকরণের পর পশ্চিমবাটি-দুর্গাপুর সড়কটি একবারও সংস্কার না হওয়ায় ধসে মাটি সরে গিয়ে চি‎হ্ন টুকু হারিয়ে যেতে বসেছে। যানবাহন, পথচারী চলাচল ও বাজারে কৃষি পণ্য আনা-নেওয়ায় সীমাহীন ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গ্রামের লোকজন। এলাকার বাসিন্দারা জানান, গত ১৭ বছরে জনগুরুত্বপূর্ণ নয়, এমন অপ্রয়োজনীয় সড়কও বারবার সংস্কার ও পাকাকরণ হয়েছে সাবেক এমপির হস্তক্ষেপে।

দলীয় স্বার্থে লুটপাট করতে এসব কাজ করা হলেও জরুরি এ সড়কটিতে দীর্ঘদিনেও কোনো কাজ করা হয়নি। গ্রামবাসী বারবার ধরনা দিলেও কর্ণপাত করেনি তারা। সড়কটির আনিছুরের চাতাল, মওলার বাড়ি, পল্টনের দোকানসহ অন্তত ১৫টি স্থানে বড় আকারের ধসে মাটি সরে গেছে। প্রতিদিন সড়কটিতে চলাচল করতে দুর্ঘটনা ঘটছে বলে জানালেন, পশ্চিমবাটি গ্রামের জুয়েল মিয়া ও রফিকুল ইসলাম।

পশ্চিমবাটি গ্রামের বাসিন্দা ফারুকুল ইসলাম বলেন, সড়কটি সংস্কারের অভাবে এখন অচল। দুই বছর আগে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়েছে। পায়ে হেঁটেও চলাচল করা যায় না এখন। অতিরিক্ত বালুর ট্রাক চলাচল করায় বোনারপাড়া-গোবিন্দগঞ্জ সড়কের অন্তত দেড়শ স্থানে মাটি দেবে ও ধসে গেছে। সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলাবাসীর সড়ক পথে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম সড়কটির মাঝে কচুয়া নামক স্থানে বাঙালি নদী থেকে কিছুদিন আগে ড্রেজিং করে বালু তুলে পাহাড়ের মতো করে স্তূপ করে রাখা হয়েছে।

কচুয়া এলাকার মঞ্জুরুল ইসলাম, আবু তাহের ও কয়েকজন স্বার্থন্বেষী বালু ব্যবসায়ী প্রশাসনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে দিন-রাত বিরামহীনভাবে উত্তোলনকৃত বালু বড় ট্রাকে করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে আসছে। এতে ওই এলাকার প্রায় আট কিলোমিটার পাকা সড়ক ও দেওয়ানতলা সড়ক সেতুটি মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে।

সাঘাটা-সোনাতলা সড়কের জুমারবাড়ি বাজার এলাকায় সড়কের পিচ ও মাটি সরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। একবার বৃষ্টি হলে দীর্ঘদিন পানি আটকে থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে বলে জানান, এলাকার লোকজন।

উপজেলার দলদলিয়া-তেঁতুলতলি সড়কটির বটতলা থেকে এলাসেরঘাট সেতু হয়ে বাজার পর্যন্ত ভেঙেচুরে বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে। দলদলিয়া গ্রামের বাসিন্দা লিটন মিয়া জানান, সড়কটি সংস্কারের অভাবে প্রায় ১০ বছর থেকে এলাকাবাসী ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। এসব ব্যাপারে কথা হলে সাঘাটা উপজেলা প্রকৌশলী নয়ন রায় জানান, সড়কগুলো সংস্কারের ব্যাপারে আমরা ওপরে লিখেছি। পর্যায়ক্রমে কাজ হবে বলে আশা করা যায়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত