দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর পঞ্চগড়ের ইকো পার্ক

হোসেন রায়হান, পঞ্চগড়
প্রকাশ : ১১ জুন ২০২৫, ১৭: ৫৫

ঈদের ছুটিতে যখন চারপাশে উৎসবের রঙ, তখন পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীর তীরে গড়ে ওঠা জেলা প্রশাসন ইকো পার্ক দর্শনার্থীদের পদচারণায় মুখর হয়ে উঠেছে। ঈদ উপলক্ষে শুধু ইকো পার্ক নয়, জমজমাট ছিল জেলার অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্রগুলোও। দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে তেঁতুলিয়ার জেলা পরিষদ ডাকবাংলো, মহানন্দা নদীর পাড়, সমতলের চা-বাগান, বাংলাবান্ধা জিরো পয়েন্ট, অমরখানা মুক্তাঞ্চল পার্ক, দেবীগঞ্জ ডিসি পার্ক, ময়নার চর, মহারাজার দিঘি, মির্জাপুর শাহী মসজিদ ও পঞ্চগড় রেলওয়ে স্টেশনের ইয়ার্ড জোনে।

বিজ্ঞাপন

বাঁশ-বেতের কারুকাজ, বাহারি ফুলের সারি, ফোয়ারার ঝলক আর দেশি–বিদেশি গাছগাছালির সমারোহে সেজে উঠেছে এই পার্ক। ঈদের দিন থেকে শুরু করে কয়েকদিন ধরে এখানে উপচেপড়া ভিড় জমেছে দর্শনার্থীদের।

জানা গেছে, জেলার তেমন উল্লেখযোগ্য কোনো বিনোদনকেন্দ্র না থাকায় সাধারণ মানুষের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় ২৫ একর সরকারি খাসজমি উদ্ধার করে এই ইকো পার্ক নির্মাণের পরিকল্পনা নেয় জেলা প্রশাসন। প্রায় ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে ওঠা এই পার্কে রয়েছে ফুল ও ফলের গাছ, কৃত্রিম লেক, পানির ফোয়ারা, হাঁটার পথ ও বসার জায়গা।

ইকো পার্ক সূত্রে জানা যায়, ঈদের ছুটিতে প্রতিদিন গড়ে কয়েক হাজার দর্শনার্থী ৩০ টাকার টিকিট কেটে প্রবেশ করেছেন পার্কে। শিশুদের জন্য রয়েছে খেলাধুলার সুযোগ, আর প্রাপ্তবয়স্কদের কাছে এটি হয়ে উঠেছে প্রাকৃতিক এক মুক্ত আঙিনা, আড্ডা, ছবি তোলা আর নির্ভেজাল সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা। সকাল ৯টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত খোলা থাকছে পার্কটি। আশপাশে মোতায়েন করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। রয়েছে নামাজ ও গাড়ির পার্কিংয়ের ব্যবস্থা।

ঈদের দিন পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীরা প্রশাসনের এই উদ্যোগকে প্রশংসায় ভাসালেও, কিছু যৌক্তিক দাবি-দাওয়ার কথাও জানিয়েছেন তারা। পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসা রাবেয়া বেগম বলেন, ‘আমাদের জেলায় তেমন পর্যটন ও বিনোদনকেন্দ্র নেই। এটি হওয়াতে আমাদের অনেক ভালো হয়েছে। ঈদে ও ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে ঘুরতে আসি, অনেক ভালোই লাগছে।’

বন্ধুদের সঙ্গে ঘুরতে আসা কলেজছাত্রী মেহজাবিন নাহার বলেন, ‘পার্কটি সত্যিই মনোমুগ্ধকর। হাঁটার পথ সবকিছুই ভালো লেগেছে। তবে এখানে যদি বিশুদ্ধ খাবার পানির ব্যবস্থা থাকত, তাহলে ঘুরে বেড়ানো আরো স্বাচ্ছন্দ্যের হত।’

পঞ্চগড়ের পর্যটন নিয়ে কাজ করা নর্থবাংলা ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজমের নির্বাহী পরিচালক মোবারক হোসাইন বলেন, ‘পঞ্চগড় জেলা প্রশাসন ইকো পার্ক দিন দিন দর্শনার্থীদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এটি জেলার পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছে।’

জেলা প্রশাসনের এই উদ্যোগ শুধু বিনোদন নয়, স্থানীয় অর্থনীতিতেও এনেছে গতি। পার্কের আশপাশে গড়ে উঠেছে অস্থায়ী দোকান, খাবারের স্টল, ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতাদের ভিড়। অনেকেই বলছেন, এই পার্ক ঘিরেই তৈরি হচ্ছে কর্মসংস্থানের নতুন সম্ভাবনা।

ইকো পার্কের ম্যানেজার নয়ন তানবিরুল বারি বলেন, ‘দর্শনার্থীদের চাহিদার ভিত্তিতে আমরা পার্কে নতুন রাইড ও অবকাঠামো সংযোজনের পরিকল্পনায় রয়েছি। নিরাপত্তা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও ব্যবস্থাপনায় জেলা প্রশাসন নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে।’

পার্ক নিয়ে জেলা প্রশাসক সাবেত আলী বলেন, ‘এই জমিটি একসময় পতিত অবস্থায় ছিল। আজ এটি জেলার অন্যতম জনপ্রিয় বিনোদনকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, পার্কটিকে দেশের অন্যতম মানসম্পন্ন ইকো পার্ক হিসেবে গড়ে তোলা। সেজন্য পর্যায়ক্রমে আরো সৌন্দর্য বৃদ্ধি ও স্থাপনা উন্নয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।’

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত