তেঁতুলিয়ায় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প

বেক্সিমকোর বিরুদ্ধে জমি দখলের অভিযোগ

মো. আব্দুল বাসেত, তেঁতুলিয়া (পঞ্চগড়)
প্রকাশ : ২২ জুলাই ২০২৫, ০৭: ১৪

তেঁতুলিয়ায় বেক্সিমকোর অঙ্গ প্রতিষ্ঠান করতোয়া সোলার লিমিটেড কেন্দ্র স্থাপন প্রকল্পে জমি ক্রয়ের নামে জবর দখলের অভিযোগ।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ২০১৭ সালে করতোয়া সোলার লিমিটেড (কেএসএল) ৩০ মেগাওয়াট সোলার প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য দেবনগর ইউনিয়নের শেখগছ মৌজায় জমি বন্দোবস্ত ফড়িয়া দালালের মাধ্যমে প্রায় ২৭৬ একর জমি ক্রয়ের চুক্তিপত্র করেন। পরে পতিত স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের প্রভাব খাটিয়ে বেক্সিমকো কোম্পানি ভুয়া জমির মালিক সাজিয়ে দলিল সম্পাদন করেন। কোম্পানির হীন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে গ্রামের আব্দুল কাদের জেলা প্রশাসক পঞ্চগড়সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেন। তৎকালীন পঞ্চগড় জেলা প্রশাসক গত ২০২১ সালের আগস্ট মাসের ১৮ তারিখের ৩১.৪৭.৭৭০০. ০১৭. ৪২. ০০৩. ২১.৭০৩ নং স্মারকে সৌরশক্তি বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের নিমিত্তে কোম্পানিকে জমি ক্রয়ের পূর্বানুমতির আদেশে শর্তাবলী বেঁধে দেন। কিন্তু তা লঙ্ঘন করে করতোয়া সোলার লিমিটেডের নামে জমি ক্রয় না করে বেক্সিমকো কোম্পানির চেয়ারম্যানের নামে কিছু জমি ক্রয় করেন।

বিজ্ঞাপন

কোম্পানির নির্যাতন ও হয়রানির শিকার বাংলাচন্ডি ও শেখগছ গ্রামের মৃত হবিবর রহমানের ছেলে রিজিবুল, সফিজুল ইসলামের ছেলে হাসান, আব্দুস সামাতের ছেলে এরশাদ ও আব্দুল কাদেরের ছেলে নুরল জানান, সৌরশক্তি বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের জন্য তাদের আবাদযোগ্য ফসলি জমির ধান ক্ষেত নষ্ট করে কোম্পানি জবর দখলে নিয়ে তাদের মিথ্যা মামলায় জেলহাজত খাটান। মকবুলের স্ত্রী পুদিনা এবং আমিরুলের স্ত্রী শাহেরা জানান, শেখ হাসিনা সরকারের সময় কোম্পানির লোকজন অস্ত্র ও বন্দুক নিয়ে এলাকায় ঘুরেছেন। অন্য এলাকা থেকে ভাড়াটিয়া লোকজন এনে জমি জবর দখল করেন। আমরা বাধা দিতে গেলে ভেকু মেশিন (কাকড়া মেশিন)-এর ঠোঁট দিয়ে আমাদের মাটির সঙ্গে পুঁতে দেওয়ার ভয়ভীতি দেখান। বাংলাচন্ডি গ্রামে মৃত বয়জদ্দিনের ছেলে আব্দুল কাদের, শেখগছ গ্রামের শফিকুল ইসলামের ছেলে বাদল ও রাব্বি বলেন, ৩৬ জুলাই ২০২৪ সালের ছাত্র-জনতার আন্দোলন ও বিপ্লবের মধ্য দিয়ে পতিত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর কোম্পানির লোকজন গা ঢাকা দেন। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের চার থেকে পাঁচ মাস যেতে না যেতে কোম্পানির লোকজন ভজনপুর বিএনপির নেতা লাবুসহ দলের কিছু লোকজন নিয়ে পুনরায় সাইনবোর্ড লাগাতে আসেন। আমরা বাধা দিয়েছি, তবুও সাইনবোর্ড লাগিয়ে যান। সর্বশেষ গত ৬ জুলাই তেঁতুলিয়া মডেল থানার পিকআপে একদল পুলিশসহ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং উপজেলা যুবদলের সভাপতি তাহমিদার রহমান লাবুকে নিয়ে আসেন। এদিনও বাংলাচন্ডি ও শেখগছ গ্রামবাসী প্রতিরোধ করলে ফিরে যান। এখন শুনছি কোম্পানি গোপনে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে আমাদের অবিক্রীত জমি ভুয়া দলিলের মাধ্যমে তাদের নামে মিউটেশন নাম জারি করে নিচ্ছে। কিন্তু মিউটেশন নাম জারির আমরা কোনো নোটিস পায়নি। তাদের অভিযোগ, আগে আওয়ামী লীগের লোকজন কোম্পানির হয়ে জমি দখল করেছে। এখন বিএনপির লোকজন বেক্সিমকো কোম্পানিকে ওই কাজে সহযোগিতা করছে।

দেবনগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান মেম্বার মো. ওবায়দুল হক বলেন, এলাকার মানুষ কিছু জমি কোম্পানির কাছে বিক্রির জন্য চুক্তি করেছে। তখন ক্ষমতার দাপটে কোম্পানির লোকজন কারো জমি জবর দখল করেছে। আমি এসবের প্রতিবাদ করে জেল খেটেছি।

এ বিষয়ে করতোয়া সোলার লিমিটেডের স্থানীয় প্রজেক্ট অর্ডিনেটর মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ৩০ মেগাওয়ার্ট প্রকল্প স্থাপনের জন্য ১১০ একর জমি লাগে। উক্ত জমি কেনার জন্য ২২-২৩ জন মালিকের কাছে দুই কোটি টাকা বায়নাপত্র দলিলও চুক্তি হয়েছে। শেখ হাসিনার পতন ও বেক্সিমকো কোম্পানির সালমান এফ রহমান তার উপদেষ্টা ছিল মনে করে স্থানীয় জমির মালিকরা বিক্রীত জমির দখল দিতে মতবিরোধ সৃষ্টি করছে।

তেঁতুলিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মো. মুসা মিঞা বলেন, গত ৬ জুলাই ৯৯৯ এ ফোন পেয়ে সমস্যার কথা শুনে পিকআপ নিয়ে পুলিশের একটি দল করতোয়া সোলার কোম্পানি লিমিটেড কেন্দ্র এলাকায় যায়।

উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তেঁতুলিয়া (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোহন মিনজি বলেন, করতোয়া সোলার লিমিটেডের জমাজমি ক্রয়-বিক্রয় নিয়ে এলাকায় সমস্যার কথা শুনেছি। জমি মিউটেশন (নাম জারির) বিষয়ে কোম্পানির কোনো প্রতিনিধি বা স্থানীয় কেউ আসেনি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আফরোজ শাহীন খসরু বলেন, করতোয়া সোলার লিমিটেড কেন্দ্র স্থাপনের জমিসংক্রান্ত বিষয়ে কোম্পানির সঙ্গে মামলা মোকদ্দমা নিয়ে সমস্যার কথা জনপ্রতিনিধিদের মুখে শুনেছি। লিখিত অভিযোগ পেলে বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত