জামালগঞ্জের সাত গ্রামে বিদ্যালয় নেই

উপজেলা প্রতিনিধি, জামালগঞ্জ (সুনামগঞ্জ)
প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২৫, ১৮: ১৩

জামালগঞ্জের হাওর জনপদের উপজেলা জামালগঞ্জ। ধান ও মৎস্য ভাণ্ডার হিসেবে সুখ্যাতি থাকলেও, এলাকাটি পিছিয়ে রয়েছে শিক্ষা ক্ষেত্রে। জানা যায়, জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাত গ্রামে নেই একটিও প্রাথমিক বিদ্যালয়।

সুরমা নদীর তীরবর্তী মমিনপুর, উত্তর লক্ষ্মীপুর, হুসেনপুর, ইনসানপুর, জুনুপুর, মাছুমপুর ও মুসলিমপুর নিয়ে জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ড। ইউপি সূত্রে জানা যায়, ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাতটি গ্রামের ৭৪৩ পরিবারে মোট জনসংখ্যা চার হাজার ৩৫৮। এর মধ্যে ভোটার রয়েছে এক হাজার ৯৫৭ জন।

বিজ্ঞাপন

এই সাত গ্রামে সহস্রাধিক শিশু প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। তাদের প্রাথমিক শিক্ষা নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। এই ওয়ার্ডে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় শিশুরা একদিকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মৌলিক অধিকার শিক্ষা থেকে অন্যদিকে বাড়ছে শিশুশ্রম, বাল্যবিবাহ ও মাদকাসক্তি।

অভিভাবকরা জানান, জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করা সত্ত্বেও হয়নি স্কুল প্রতিষ্ঠার কোনো ব্যবস্থা। বিভিন্ন মহলে তদবির করলেও তারা নানা অজুহাত দেখিয়ে ফিরিয়ে দিচ্ছেন অভিভাবকদের।

চোখের সামনে অন্য এলাকার শিশুদের স্কুলে যেতে দেখে নিজ সন্তানের ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন এখানকার অভিভাবকরা। কোনো উপায় না পেয়ে মসজিদের মক্তব পর্যন্ত পড়িয়ে শিশুদের লাগিয়েছেন কৃষিসহ অন্যান্য কাজে।

মমিনপুর গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, সেখানে বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নামে ২০০০ সালে ৩৩ শতক জায়গা কেনে গ্রামবাসী। মমিনপুর বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পক্ষে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের নামে নামজারি করা হয় জায়গাটি।

স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন সময় স্কুলের স্থাপনা নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও তাতে বাধা দেয় গ্রামের মৃত ছাফির উদ্দিনের ছেলে আবু হানিফ গং। স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহায়তায় হানিফ জোর করে দখল করেছেন স্কুলের জায়গাটি। এ বিষয়ে গ্রামবাসীর পক্ষে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর অভিযোগ দাখিল করেছেন শমসের আলী।

মমিনপুর গ্রামের মুরুব্বি আবুল মিয়া বলেন, ‘আমরা কৃষি কাজ করে সংসার চালাই। আমাদের ছেলেমেয়ে স্কুলে যাবে, তারা লেখাপড়া করে ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করবে। স্কুলই নাই, লেখাপড়া করবে কেমনে? একসঙ্গে সাত গ্রামে স্কুল নাই, ইতা কেউ দেখে না। ইলেকশন আইলে সকলে স্কুল দেয়; ইলেকশন চলে গেলে স্কুলের কথা কেউ মনে রাখে না। আমরার ছেলেমেয়ে পড়ার জন্য স্কুলের জোর দাবি করতাছি।’

সাপ্তাহিক জামালগঞ্জ সংবাদের সম্পাদক অঞ্জন পুরকায়স্থ বলেন, জামালগঞ্জে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় স্কুল না থাকা এখানকার দারিদ্র্যের মূল কারণ। তিনি বলেন, আমার জানা মতে ১০ সহস্রাধিক শিশু আছে ঝড়ে পড়া। যেসব গ্রামে স্কুল নেই সেখানে আছে আরো তিন সহস্রাধিক শিশু। স্কুলবিহীন গ্রামগুলোতে প্রতি ৩০০ শিশুর জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা জরুরি।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পীযুষ কান্তি মজুমদার আমার দেশকে বলেন, মমিনপুরসহ সাতটি গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। ওই গ্রামগুলোর শিশুরা দূর-দূরান্তের স্কুলে যায়। পাশাপাশি বিদ্যালয় না থাকায় অনেক শিশুই ঝরে পড়ে। মমিনপুর স্কুলের নামে জায়গা আছে।

ওই গ্রামের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে নীতিমালা অনুযায়ী বিদ্যালয় স্থাপনের ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আমার দেশকে বলেন, জামালগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে মমিনপুরসহ সাতটি গ্রামে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। যে কারণে শিশুরা প্রাথমিক শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। মমিনপুর স্কুলের জায়গা নিয়ে ভূমিসংক্রান্ত জটিলতা আছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পিছিয়ে পড়া শিশুদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করব।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত