রুমি বেগমের স্বাভাবিক মৃত্যু, নাকি পরিকল্পিত হত্যা

উপজেলা প্রতিনিধি, ওসমানীনগর (সিলেট)
প্রকাশ : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৩৮
আপডেট : ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১: ৩৮

সিলেটের ওসমানীনগর উপজেলায় রুমি বেগম (৩১) নামে এক গৃহবধূর মৃত্যুকে ঘিরে তীব্র পারিবারিক বিরোধ দেখা দিয়েছে। এক পক্ষ দাবি করছে এটি স্বাভাবিক মৃত্যু, অন্য পক্ষের অভিযোগ—রুমিকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।

স্থানীয় সূত্র ও নিহতের পরিবার জানায়, ২০২১ সালের ১৯ নভেম্বর বালাগঞ্জ উপজেলার বোয়ালজুড় ইউনিয়নের নুরপুর গ্রামের আব্দুল মতিনের মেয়ে রুমি বেগমের বিয়ে হয় ওসমানীনগর উপজেলার বেড়াখাল গহরপুর গ্রামের মৃত আসদ্দর আলীর ছেলে মিনার আহমদ মিন্টু মিয়ার সঙ্গে। বিয়ের পর থেকেই রুমি শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন এবং স্বামী মিন্টু নিয়মিত স্থানীয় চিকিৎসক ও হাসপাতালে তার চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

গত ৫ অক্টোবর রাতের খাবার শেষে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন রুমি বেগম। তাৎক্ষণিকভাবে তাকে স্থানীয় প্যারাডাইজ মেডিকেল কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে পরে তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। তবে হাসপাতালের ছাড়পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, রোগী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই মারা যান।


পরদিন সকালে রুমি বেগমের দাফনের প্রস্তুতি চলছিল এবং দাফনে অংশ নিতে এলাকার মসজিদে ঘোষণা দেওয়া হয়। ঠিক সে সময় হঠাৎ শ্বশুরবাড়ির লোকজন পুলিশ নিয়ে এসে রুমি বেগমের মৃত্যুকে ‘হত্যা’ বলে অভিযোগ তোলেন ও মরদেহের ময়নাতদন্তের দাবি জানান। ফলে দাফন কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়।

তবে হাসপাতালের ছাড়পত্রে রুমি বেগমের মৃত্যু ‘স্বাভাবিক’ উল্লেখ করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে পুলিশও অভিযোগটি গ্রহণ না করায় পরে রুমি বেগমের ভাই রায়হান মিয়া বাদী হয়ে তার স্বামী মিনার আহমদ মিন্টু মিয়াকে একমাত্র আসামি করে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। মামলাটির নম্বর—ওসমানীনগর সি.আর-৩৯২/২০২৫।


এদিকে গ্রামের প্রবীণ মুরব্বি ও ব্যবসায়ী নুরুল ইসলাম, ফয়জুল ইসলাম ও মখন মিয়া বলেন, গৃহবধু রুমির মৃত্যু স্বাভাবিক বলেই আমাদের ধারণা। কিন্তু হঠাৎ হত্যা অভিযোগ তুলে বিষয়টি অযথা জটিল করে ফেলা হয়েছে।

তদন্ত কর্মকর্তা মোফাজ্জল হোসেন বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনাটি স্বাভাবিক মৃত্যুই মনে হচ্ছে। তবে আমরা সবদিক খতিয়ে দেখছি।

অভিযুক্ত স্বামী মিন্টু মিয়া বলেন,বিয়ের পর থেকেই রুমি শ্বাসকষ্টে ভুগছিল। আমি নিয়মিত তার চিকিৎসা করিয়েছি, শ্বশুরবাড়ির লোকেরাও জানতেন। এখন তারা আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে, নিহতের ভাই রায়হান আহমদ স্থানীয় এক সংবাদ সম্মেলন করে বলেন,আমার বোনকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আমরা এর সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার চাই।

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোনায়েম মিয়া বলেন, আমরা ময়নাতদন্তের রিপোর্টের অপেক্ষায় আছি। রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ পরিষ্কার হবে।

রুমি বেগমের মৃত্যু স্বাভাবিক নাকি পরিকল্পিত হত্যা—এ প্রশ্নের উত্তর এখনো অজানা। তবে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের মুখোমুখি অবস্থান পুরো গ্রামে সৃষ্টি করেছে তীব্র উত্তেজনা ও আলোচনার ঝড়।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত