আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

সুনামগঞ্জ ১ ও ২ আসন

আনিসুল-নাছিরকে রেখেই কামরুল-পাবেল: কার ভাগ্যে ঝুলছে ধানের শীষ

জসীম উদ্দিন, সুনামগঞ্জ

আনিসুল-নাছিরকে রেখেই কামরুল-পাবেল: কার ভাগ্যে ঝুলছে ধানের শীষ
সুনামগঞ্জ- ১ আসনে আনিসুল হক ও কামরুজ্জামান কামরুল, সুনামগঞ্জ- ২ আসনে নাছির উদ্দীন চৌধুরী ও তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল।

সুনামগঞ্জ- ১ (ধর্মপাশা-মধ্যনগর-তাহিরপুর-জামালগঞ্জ) আসনে বিএনপির প্রার্থী চূড়ান্তকরণ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। প্রথম দফায় কেন্দ্রীয় কৃষকদলের সহ-সাধারণ সম্পাদক ও তাহিরপুর উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান আনিসুল হককে দলীয় প্রার্থী ঘোষণা করে বিএনপি। তাকে মনোনয়নের আনুষ্ঠানিক চিঠিও প্রদান করা হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে আনিসুল হককে দলীয় প্রার্থী রেখেই গত রোববার একই আসনে জেলা বিএনপির সদস্য ও তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুলকেও মনোনয়নের চিঠি দেয় দলটি। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের স্বাক্ষরে ২৭ তারিখে জারি করা এই চিঠির মাধ্যমে এক আসনে দুই প্রার্থী মনোনীত হওয়ায় নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক আলোচনা ও বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে।

একই ধরনের পরিস্থিতি দেখা গেছে সুনামগঞ্জ- ২ (দিরাই-শাল্লা) আসনেও। সেখানে বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য নাছির চৌধুরীকে দলীয় প্রার্থী রেখে যুক্তরাজ্যপ্রবাসী ও জেলা বিএনপির সাবেক উপদেষ্টা তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলকেও মনোনয়নের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

ফলে সুনামগঞ্জের এই দুই আসনেই দোদুল্যমান অবস্থায় পড়েছেন বিএনপির নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। শেষ পর্যন্ত কার হাতে ধানের শীষের প্রতীক উঠবে-এ নিয়ে তৃণমূল থেকে কেন্দ্র পর্যন্ত তৈরি হয়েছে কৌতূহল ও দোলাচল। দলীয় এমন সিদ্ধান্তে কেউ কেউ প্রকাশ্যে অসন্তোষও জানিয়েছেন। অনেকের আশঙ্কা, এই দ্বৈত মনোনয়ন ভবিষ্যতে দলীয় কোন্দল আরো বাড়িয়ে দিতে পারে।

সুনামগঞ্জ- ১ আসনে দুই প্রার্থীরই রয়েছে নিজস্ব বলয় ও প্রভাব। আনিসুল হক বর্তমানে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য এবং জেলা কৃষকদলের আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করছেন। ২০০৮ সালে তাহিরপুর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে তিনি পুরো আসনে দলকে সুসংগঠিত রাখতে সক্রিয় ভূমিকা রেখে আসছেন। তৃণমূল পর্যায়ে তার সাংগঠনিক দক্ষতা ও জনসম্পৃক্ততা তাকে এলাকায় একটি গ্রহণযোগ্য অবস্থানে পৌঁছে দিয়েছে।

অন্যদিকে কামরুজ্জামান কামরুল ছাত্ররাজনীতি থেকেই বিএনপির সাথে জড়িত। তিনি জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মামলা-হামলার ঝুঁকি উপেক্ষা করে দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে সক্রিয় থাকায় নেতাকর্মীদের মধ্যে তাঁর একটি শক্ত অবস্থান তৈরি হয়েছে।

সুনামগঞ্জ-২ আসনে জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছেন নাছির চৌধুরী। ভোটের মাঠে আবেগ অনুভূতি কাজ করছে নাছির চৌধুরীকে ঘিরে। তবে নাছির চৌধুরীর শারীরিক অসুস্থার বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসছে।দিরাই শাল্লায় নাছির চৌধুরীর শারীরিক অসুস্থ হওয়ার পরও ভোটের পাল্লা ভারী হবে বলে ধারণা করছেন সাধারণ ভোটাররা।

অন্যদিকে নাছির চৌধুরীকে রেখেই বিকল্প প্রার্থী হিসেবে তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেলকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে দলীয় নেতাকর্মী ছাড়াও ভোটারদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল দীর্ঘদিন ভোটের মাঠে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। তিনি ধানের শীষের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। মনোনয়ন না পাওয়া দলের বাইরে না গিয়ে নাছির চৌধুরীকে সমর্থন জানান পাবেল। হঠাৎ করে বিকল্প হিসেবে তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেলকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী করায় তিনিও গতকাল মনোনয়ন দাখিল করেন। এখন ভোটারররা পড়েছেন বিপাকে। দলীয় নেতাকর্মীরাও আছেন দুশ্চিন্তায়।

সব মিলিয়ে সুনামগঞ্জ- ১ ও সুনামগঞ্জ- ২ আসনে শেষ পর্যন্ত বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ কার হাতে দুলবে তা জানতে এখন সবাই তাকিয়ে আছে কেন্দ্রীয় ঘোষণার দিকেই।

সুনামগঞ্জ- ১ আসনে বিএনপি মনোনীত প্রার্থী আনিসুল হক বলেন, আমি বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে মাঠে সক্রিয় রয়েছি। ধানের শীষের পক্ষে ইতোমধ্যেই গণজোয়ার সৃষ্টি হয়েছে।কোনো কারণে মূল প্রার্থীর সমস্যা দেখা দিলে বিকল্প হিসেবে আরেকজনকে রাখা হয়েছে।গত নির্বাচনেও একইভাবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল।এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। ধানের শীষ শেষ পর্যন্ত আমার হাতেই ঝুটবে।

আরেক মনোনীত প্রার্থী কামরুজ্জামান কামরুল বলেন, শেষ পর্যন্ত দল আমাকে যথাযথভাবে মূল্যায়ন করেছে। দলীয় কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র গ্রহণের জন্য আমাকে ফোন করে জানানো হয়,এসময় এ আসনে আমিই ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিব উনারা আমাকে আশ্বস্ত করেন।

সুনামগঞ্জ- ২ আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী নাছির চৌধুরী বলেন, আমাকে তারেক রহমান দলীয় মনোনয়ন দিয়েছেন। আমার মনোনয়ন বাতিল করাতে জামায়াত একটি ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। কারণ আমি নির্বাচনে অংশ নিলে তারা বিপুল ব্যবধানে পরাজিত হবে—এ বিষয়টি তারা ভালোভাবেই জানে।

আরেক বিএনপির মনোনীত প্রার্থী তাহির রায়হান চৌধুরী পাবেল বলেন, বিএনপির হাই কমান্ড সাবেক সংসদ সদস্য নাছির চৌধুরীকে মনোনয়ন দেওয়ার পর দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমি তাকে সর্বাত্মক সমর্থন জানিয়েছি। কারণ আমি দলের বাইরে কেউ নই, আমি বিএনপিরই একজন কর্মী। ইতোমধ্যে বিএনপি থেকে আমাকেও দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে। আমি শতভাগ আশাবাদী—ধানের শীষ প্রতীক আমার হাতেই উঠবে এবং জনগণের সমর্থনে বিজয় অর্জন সম্ভব হবে।

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

সর্বশেষ

এলাকার খবর
Loading...