টাঙ্গুয়ার হাওরে পর্যটকের ঢলে পরিবেশ দূষণের শঙ্কা

জসিমউদ্দিন, সুনামগঞ্জ ও আতাউর রহমান, মধ্যনগর
প্রকাশ : ১২ জুন ২০২৫, ১২: ১৬

ঈদুল আজহার ছুটিতে পর্যটকদের ভিড়ে সরগরম হয়ে উঠেছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রামসার সাইট বা জলাভূমি সুনামগঞ্জের টাঙ্গুয়ার হাওর। জেলা শহর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এ জলাধার মধ্যনগর ও তাহিরপুর উপজেলার প্রায় ১০০ বর্গকিলোমিটারজুড়ে বিস্তৃত। হাওরের স্বচ্ছ জলরাশি আর অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে এখানে দলে দলে আসছেন পর্যটকরা। এতে সম্ভাবনার পাশাপাশি পরিবেশদূষণ নিয়ে বাড়ছে উদ্বেগ।

বিজ্ঞাপন

স্থানীয়ভাবে ‘৯ কুড়ি কান্দা ও ৬ কুড়ি বিল’ নামে পরিচিত এ হাওরের এক পাশে মেঘালয়ের পাহাড়, আরেক পাশে সারি সারি হিজল-করচ গাছ। এখানে বর্ষায় ধারণ করে এক অপার সৌন্দর্য। ঢেউয়ের তালে তালে নাও দোলে আর সেই মোহময় পরিবেশে হারিয়ে যান ভ্রমণপিপাসুরা। এ নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগ করার জন্য চলতি মৌসুমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এখানে আসছেন হাজার হাজার পর্যটক।

গত কয়েক বছরের তুলনায় এবারকার ঈদে পর্যটকদের উপস্থিতি অনেক বেশি, এমনটাই জানালেন স্থানীয়রা। ঈদের লম্বা ছুটিকে ঘিরে ১০-১৫ দিন আগেই হাওরগামী ছোট-বড় হাউসবোট বুকিং করে রেখেছিলেন অনেকেই। এতে খুশি নৌযান মালিক, মাঝি, কর্মচারী ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

জানা গেছে, বর্ষা মৌসুমে হাওরের সৌন্দর্য উপভোগ করার পাশাপাশি পর্যটকরা উপভোগ করতে পারেন আশপাশের পাহাড়, ঝরনা, শহীদ সিরাজ (নীলাদ্রি) লেক এবং এশিয়ার সর্ববৃহৎ জয়নাল আবেদীন শিমুল বাগানের সৌন্দর্য । যদিও এসব এলাকায় সারা বছরই পর্যটকের আনাগোনা থাকে। তবে বর্ষার সময় হাউসবোটে চড়ে হাওর পাড়ি দিয়ে এসব জায়গা ঘুরতে বেশি পছন্দ করেন ভ্রমণপ্রেমীরা।

মধ্যনগর উপজেলার হাউসবোট মালিকরা জানান, বর্ষার শুরুতেই ঈদের লম্বা ছুটির কারণে এবার পর্যটকদের সাড়া ব্যাপক। উপজেলার প্রায় সবকটি পর্যটকবাহী নৌকা ঈদের ১০-১৫ দিন আগেই বুকিং হয়ে যায়। ফলে হাওরে ঘুরতে ইচ্ছুক পর্যটকরা আগে থেকেই নৌকা নির্ধারণ করে না রাখলে তাৎক্ষণিক নৌকা না পেয়ে সমস্যায় পড়তে পারেন।

স্থানীয় পর্যটকবাহী হাউসবোট মালিক বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে বছরের শুরু থেকেই পর্যটকদের ভালো সাড়া পাচ্ছি। ১০-১৫ দিনের ভাড়ার জন্য সব নৌকা বুকিং হয়ে গেছে। আবহাওয়া ভালো থাকলে এ বছর হাওর এলাকায় প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটবে।’

ঢাকা থেকে আসা পর্যটক সজীব জানান, ‘২০ বন্ধু মিলে হাউসবোট ভাড়া করে এসেছি। দীর্ঘদিন পর পানিতে সাঁতার কেটে মনটা জুড়িয়ে গেছে।’

সিলেট থেকে আসা জামিল চৌধুরী বলেন, ‘হাওরে কবিতার পঙ্‌ক্তি উড়ে বেড়ায়। হিজল-করচের বনে এসে নিজেকে হারিয়ে ফেলি।’

হাউসবোট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আরাফাত আকন্দ জানান, হাউসবোটগুলোয় থাকা-খাওয়ার সুব্যবস্থা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়েছে।

পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা

সৌন্দর্যের এই উচ্ছ্বাসের মাঝে উদ্বেগ বাড়াচ্ছে পরিবেশ বিপর্যয়। পর্যটকদের ফেলে যাওয়া প্লাস্টিকের ও মদের বোতল এবং হাউসবোটের উচ্চশব্দ প্রকৃতিতে বিরূপ প্রভাব ফেলছে। এতে উদ্বিগ্ন পরিবেশকর্মীরা।

তাহিরপুর নৌ পর্যটন সমবায় সমিতির সভাপতি মো. রব্বানী বলেন, এখানে ৬০০ বোট পর্যটকদের সেবা দেয়। হাজার হাজার ভ্রমণপিপাসু আসেন। তাদের অধিকাংশই পরিবেশ সচেতন নন। পলিথিনের ব্যাগ ও প্লাস্টিকের বোতল ফেলে তারা পরিবেশ দূষিত করছেন।

সুনামগঞ্জ পরিবেশ আন্দোলনের নেতা সাইফুল আলম সদরুল বলেন, টাঙ্গুয়ার হাওরের জীববৈচিত্র্য ধ্বংসের মুখে। পর্যটন প্রয়োজন, তবে তা হতে হবে পরিবেশবান্ধব। প্রশাসনের নজরদারি বাড়ানো দরকার।

মধ্যনগর থানার ওসি মনিবুর রহমান বলেন, ঈদ উপলক্ষে মধ্যনগরে পর্যটকদের আগমন উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে। নৌযান মালিকদের নৌকায় ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে। পাশাপাশি নৌঘাট এলাকায় নিয়মিত পুলিশি টহলও অব্যাহত রয়েছে।

তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল হাসেম আমার দেশকে জানান, স্থানীয় কিছু মিনিবোটে ডিজে পার্টি হয়, যা পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। অভিযানের মাধ্যমে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

মধ্যনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজ্জ্বল রায় বলেন, ‘হাওরে প্রবেশকারী বোটগুলোকে প্রশাসনের নির্ধারিত নীতিমালা মেনে চলতে হবে। পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোনো কাজ পর্যটকরা করতে পারবেন না। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি হাওরের পরিবেশ সংরক্ষণে উপজেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক সজাগ দৃষ্টি রাখছে।

অসদাচারণের দায়ে টঙ্গী পাইলট স্কুলের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে শোকজ

জরুরি অবস্থা জারি করলেন পেরুর প্রেসিডেন্ট

গুম-খুনে জড়িত ১৫ সেনা কর্মকর্তা চাকরিচ্যুত। ট্রাইব্যুনালে হাজির। সাবজেলে প্রেরণ

এবার ১ টাকায় গরুর মাংস বিতরণের ঘোষণা সেই এমপি প্রার্থীর

অভিযুক্ত সেনা কর্মকর্তাদের বহন করা সেই প্রিজন ভ্যানে কী আছে

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত