কাদা ছোড়াছুড়িতে ব্যস্ত বিএনপি, মাঠ গোছাচ্ছেন ইসলামি দলের প্রার্থীরা

এখলাছুর রহমান, জকিগঞ্জ (সিলেট)
প্রকাশ : ১০ জুলাই ২০২৫, ১০: ৫০

জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ-কানাইঘাট) সংসদীয় আসনের রাজনীতির মাঠ সরগরম হয়ে উঠেছে। আলেম-ওলামা, পীর-মাশায়েখদের স্মৃতিবিজড়িত ও সুরমা-কুশিয়ারা নদীবেষ্টিত সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ-কানাইঘাট উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসন সিলেট-৫। সিলেটের সবকটি আসন থেকে এ আসনটি ব্যতিক্রম ও রক্ষণশীল।

বিজ্ঞাপন

৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা পলাতক। এ বাস্তবতায় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জামায়াতে ইসলামী ও জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থী প্রায় চূড়ান্ত করা হলেও বিএনপি, এনসিপিসহ অন্যান্য দলের প্রার্থী এখনো চূড়ান্ত হয়নি। কয়েক মাস ধরে বিএনপির একাধিক প্রার্থী ও অন্যান্য দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। নির্বাচনি এলাকায় বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টার, তোরণ সাঁটিয়ে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিচ্ছেন। রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ ছাড়াও খেলাধুলা, বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে এলাকার নানা উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন তারা ।

জোটের ভাগাভাগিতে পড়ে প্রতিটি সংসদ নির্বাচনেই শেষ পর্যন্ত নানা মেরুকরণ হয় এখানে। ১৯৭৩ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ২০২৪ সালের দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন পর্যন্ত এ আসন থেকে বিএনপির প্রার্থী একবার, আওয়ামী লীগ প্রার্থী চারবার, জাতীয় পার্টির প্রার্থী দুইবার, ইসলামী দলের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী একবার, ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী একবার, স্বতন্ত্র প্রার্থী দুইবার নির্বাচিত হয়েছেন। ২০০১ সালের পর থেকে প্রতিটি নির্বাচনেই জোটভুক্ত দলের প্রার্থীরা এ আসন থেকে বিজয়ী হন। তবে রক্ষণশীল আসন হওয়ায় অতীতের বেশিরভাগ জাতীয় ও স্থানীয় নির্বাচনে ভোটাররা ইসলামপন্থি দলের দিকে ঝুঁকেছেন। তবুও আসনটি উদ্ধার করতে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশী নেতারা বসে নেই। নির্বাচনি মাঠ দখলে মরিয়া হয়ে উঠেছেন বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।

বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা হলেন— কানাইঘাট উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ও প্রয়াত আবুল হারিছ চৌধুরীর চাচাতো ভাই আশিক চৌধুরী, সিলেট জেলা বিএনপির সিনিয়র সহসভাপতি মামুনুর রশীদ (চাকসু মামুন), জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকুর রহমান পাপলু, প্রয়াত হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা চৌধুরী, সিলেট মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মাহবুবুল হক চৌধুরী ভিপি,জেলা কৃষকদলের আহ্বায়ক ও জকিগঞ্জ উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান ইকবাল আহমদ তাপাদার, জকিগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি আমেরিকা প্রবাসী শরীফ লস্কর, ইংল্যান্ডের বিএনপি নেতা প্রফেসর এম ফরিদ উদ্দিন।

প্রতিদিন সংসদীয় এলাকায় কোথাও না কোথাও সভা-সমাবেশ করে নিজেদের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন তারা। কর্মী-সমর্থকরাও তাদের এলাকায় পছন্দের নেতার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরছেন বিএনপির অতীতের উন্নয়ন ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কথা।

তবে একাধিক প্রার্থী মাঠে থাকায় প্রায়ই একপক্ষ আরেক পক্ষকে কৌশলে ঘায়েল করে থাকেন। বিভিন্ন সমাবেশে শক্তি প্রদর্শন করতে গিয়ে হাতাহাতির ঘটনাও ঘটছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে কাদা ছোড়াছুড়ির মতো ঘটনা।

এমন অবস্থায় জামায়াত ও ইসলামীপন্থি অন্য দলগুলো ভোটের মাঠে সুবিধা নিচ্ছে। বিশেষ করে জামায়াতের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা সুপরিকল্পিতভাবে পরিকল্পনা নিয়ে সামাজিক নানা কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে যাচ্ছেন।

একক প্রার্থী জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি দশম সংসদ নির্বাচনে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী ছিলেন। জামায়াতে ইসলামী থেকে ইতোমধ্যে চূড়ান্ত প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে জেলা জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা আনোয়ার হোসেন খানকে। ইসলামী আন্দোলন থেকে কেন্দ্রীয় সদস্য মাওলানা রেজাউল করিম আবরার। তবে খেলাফত মজলিস থেকে এখনো কোনো প্রার্থীকে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচার-প্রচারণা করতে দেখা যাচ্ছে না।

এ ছাড়াও স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন জকিগঞ্জ কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতিব মুফতি আবুল হাসান এমন গুঞ্জন রয়েছে। কিন্তু তিনি এখনো এ বিষয়ে মুখ খুলছেন না।

স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এবারের নির্বাচনে বিএনপির নেতাকর্মীরা দলীয় প্রার্থীকে ভোট দিতে চান। যেকোনো শরিক দলকে আসন ছেড়ে দিতে নারাজ নেতাকর্মীরা। সাধারণ মানুষ বিএনপির প্রার্থীকে বিজয়ী করতে অধীর আগ্রহ নিয়ে সময় পার করছেন বলে তৃণমূল কর্মীরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। দলীয়ভাবে প্রার্থী চূড়ান্ত হলে সবাই ঐক্যবদ্ধভাবে একমঞ্চে থাকবেন বলে নেতাকর্মীরা মনে করছেন।

জামায়াতের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, এ আসন থেকে ২০০১ সালের নির্বাচনে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী চারদলীয় জোটের প্রার্থী হয়ে আওয়ামী লীগ হাফিজ আহমদ মজুমদারকে হারিয়ে বিজয়ী হন।

২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনেও জামায়াতের প্রার্থী দ্বিতীয় হয়েছেন। জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট উপজেলায় জামায়াতের প্রার্থীকে সাধারণ ভোটাররা সাড়া দিচ্ছেন বলে জামায়াতের একাধিক নেতা জানিয়েছেন।

জমিয়তের নেতাকর্মীরা জানান, সাধারণ মানুষ কওমীপন্থি ইসলামী দলের প্রার্থীকে পছন্দের তালিকায় শীর্ষে রাখেন। এ আসনে কওমীপন্থি ভোটারের সংখ্যা বেশি হওয়ায় মাওলানা উবায়দুল্লাহ ফারুক সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বেশি সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছেন। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতাকর্মীরা জানান, ইসলামী আন্দোলন থেকে ইতোমধ্যে মাওলানা রেজাউল করিম আবরারকে সম্ভাব্য প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিনি বিলবোর্ড, ফেস্টুন, পোস্টার সাঁটিয়ে নিজের প্রার্থিতার কথা জানান দিচ্ছেন। তবে শেষ পর্যন্ত জোটের হিসাব-নিকাশের ওপর নির্ভর করতে পারে তার প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি। কিন্তু ভোটের মাঠে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন দলটির কর্মী সমর্থকরা।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত