জকিগঞ্জ সীমান্তে ফসল নষ্ট, দুঃখ প্রকাশ-ক্ষতিপূরণের আশ্বাস বিএসএফের

সিলেট ব্যুরো
প্রকাশ : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৯: ১২

সিলেটের জকিগঞ্জ সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) সদস্যদের বেআইনি প্রবেশ ও চাষীদের ফসল নষ্টের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছে বিএসএফ।

বিজ্ঞাপন

সোমবার (৩ নভেম্বর) বেলা ১১টা ২০ মিনিট থেকে ১২টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে বিএসএফ রোববারের ঘটনায় ভুল স্বীকার করে দুঃখ প্রকাশ করেছে, জানিয়েছেন জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার।

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ঘটনাস্থলে বিজিবির আহ্বানে অধিনায়ক, জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন (১৯ বিজিবি) এবং কমান্ড্যান্ট, ১৭০ বিএসএফ ব্যাটালিয়নের মধ্যে পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ১৯ বিজিবির অধিনায়ক বিএসএফ টহল দল কর্তৃক ১০০ গজ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অবৈধভাবে প্রবেশ করে কৃষকের ফসলের বেড়া এবং ফসল নষ্ট করার বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানান।

রোববার (২ নভেম্বর) উপজেলার মানিকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর সীমান্ত এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওইদিন ভারতের চরবাগান সীমান্ত চৌকি থেকে বিএসএফের চার সদস্য স্পিডবোটে সুরমা নদী পার হয়ে ১৩৪৫ নম্বর সীমান্ত পিলার অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তারা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের পাশে কৃষকদের ফসল রক্ষার জন্য স্থাপন করা বাঁশের খুঁটি উপড়ে ফেলেন। খবর পেয়ে বিজিবি এবং বিক্ষুদ্ধ স্থানীয়দের প্রতিবাদ, প্রতিরোধ ও ধাওয়ায় বিএসএফ পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়।

জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়নের (১৯ বিজিবি) অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. জুবায়ের আনোয়ার জানান, পতাকা বৈঠকে বিএসএফ কর্মকর্তাদের কাছে সীমান্তের ম্যাপসহ বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করা হয়। তাতে অনুপ্রবেশের বিষয়টি স্পষ্টভাবে উঠে আসে।

বিএসএফ প্রতিনিধিদল তাদের টহল দলের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জানায়, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে ক্ষতিপূরণ প্রদানের বিষয়টি পরবর্তীতে জানানো হবে।

স্থানীয়রা জানায়, বিএসএফ সদস্যদের এমন কর্মকাণ্ড মোবাইলে ধারণ করেন কয়েকজন যুবক। ভিডিওতে দেখা যায়, বিএসএফ সদস্যরা বাঁশের খুঁটি উপড়ে ফেলছেন, আর স্থানীয়রা জিজ্ঞেস করছেন, ‘এটি বাংলাদেশের মাটি, আপনারা কেন সীমান্ত অতিক্রম করেছেন?’ কিছুক্ষণ পর স্থানীয়দের প্রতিবাদ ও ভিডিও ধারণের মুখে পড়ে বিএসএফ সদস্যরা স্পিডবোটে চড়ে ভারতের দিকে ফিরে যান।

ঘটনাটির ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও আলোচনা সৃষ্টি হয়।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও বিষয়টি নজরে আনেন। মানিকপুর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মো. আব্দুশ শহীদ বলেন, ‘ফেসবুকে ভিডিওটি দেখেছি। ঘটনাস্থল সুরমা নদীর তীরের এপারেই বাংলাদেশের এলাকা। স্থানীয়দের প্রতিবাদের মুখে বিএসএফ সদস্যদের ফিরে যেতে দেখা গেছে।’

বিজিবির পক্ষ থেকে বিষয়টি গুরুত্বসহকারে তদন্তের পর বিএসএফের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক যোগাযোগ করা হয়। জকিগঞ্জ ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, সোমবার পতাকা বৈঠকে বিএসএফকে সীমান্ত চিহ্নিত ম্যাপের মাধ্যমে দেখানো হয় যে ঘটনাস্থল বাংলাদেশের ভেতরে পড়েছে এবং তাদের টহলদলের এমন অনুপ্রবেশ আন্তর্জাতিক সীমান্ত আইন লঙ্ঘনের অন্তর্ভুক্ত।

বিজিবির পক্ষ থেকে ভবিষ্যতে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা যেন আর না ঘটে সে বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়। এ সময় বিএসএফ প্রতিনিধি দল নিজেদের ভুল স্বীকার করে অনুশোচনা প্রকাশ করে এবং ভবিষ্যতে অনুরূপ ঘটনা এড়াতে টহল কার্যক্রমে সতর্কতা অবলম্বনের আশ্বাস দেয়।

সীমান্তে এ ধরনের অনুপ্রবেশে স্থানীয় কৃষকরা আতঙ্কে রয়েছেন। তাদের দাবি, অনুপ্রবেশের ফলে ফসল ও বাঁধের ক্ষতি হয়েছে, তাদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে এবং সীমান্ত এলাকায় স্থায়ী নিরাপত্তা জোরদার করতে হবে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বর্ষা মৌসুমেই সুরমা নদীর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বিএসএফ সদস্যরা টহলের অজুহাতে সীমান্ত অতিক্রম করে আসেন। এ কারণে কৃষক ও নদীপাড়ের বাসিন্দাদের মধ্যে উদ্বেগ বেড়েই চলেছে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত