আমার দেশ জনপ্রিয় বাংলা নিউজ পেপার

প্রকল্পে ধীরগতি ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় ঢাকা-সিলেট রুটে তীব্র যানজট

এম ইদ্রিস আলী, মৌলভীবাজার
প্রকল্পে ধীরগতি ও ট্রাফিক অব্যবস্থাপনায় ঢাকা-সিলেট রুটে তীব্র যানজট

ঢাকা থেকে সিলেট যাওয়ার স্বাভাবিক সময় যেখানে ৭-৮ ঘণ্টা, সেখানে এখন লাগছে ১৭ থেকে ১৮ ঘণ্টা।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও আশুগঞ্জ এলাকায় চলমান ৬-লেন মহাসড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পের ধীরগতি, অপরিকল্পিত খননকাজ এবং সঠিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার অভাবে সাধারণ যাত্রী থেকে প্রবাসী, ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী ও অসুস্থ রোগী—সবাই চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।

বিজ্ঞাপন

নারী, শিশু ও বয়স্কদের কষ্ট

মৌলভীবাজারের যাত্রী অবিনাশ আচার্য্য বলেন, ‘রাতে ৯টায় রওনা দিয়েছি, সকাল হয়ে গেছে, এখনো রাস্তায়। মায়ের ওষুধের সময় পেরিয়ে গেছে। এটা উন্নয়ন না মানুষের ওপর অত্যাচার।’

দুই বছরের শিশুকে কোলে নিয়ে যাত্রী মেহজাবিন সুমি বলেন, ‘দুধ বা খাবার কিছুই দেয়া যাচ্ছে না। গরমে বাচ্চা কাঁদছে। আমরা যেন কারাগারে বন্দি।’

গর্ভবতী নারী ফারজানা হক বলেন, ‘চেকআপের জন্য ডাক্তার দেখাতে যাচ্ছিলাম। ঘন্টার পর ঘণ্টা বসে থাকতে থাকতে শরীরই অসহ্য হয়ে গেছে।’

হজ ফেরত এক বয়স্ক দম্পতি বলেন, ‘ফ্লাইটে ছয় ঘণ্টা ছিলাম, রাস্তায় এখন ১২ ঘণ্টা। দেশের সড়কই এখন ভয়।’

বিদেশগামী ও বিদেশফেরত যাত্রীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন, কাতার, দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যগামী বহু যাত্রী ফ্লাইট মিস করেছেন। সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ভোর ৪টার ফ্লাইট ধরতে রাত ৮টায় রওনা দিয়েছিলাম। সকাল হয়ে গেলো, এখনো ব্রাহ্মণবাড়িয়া। ফ্লাইট মিস। আবার নতুন টিকিট কিনতে হবে—এত টাকা কোথায় পাব?’

ফেরি শ্রমিক আলমগীর, যিনি ভাইকে আনতে ঢাকায় যাচ্ছিলেন, বলেন, ‘ভাই প্লেনে এসেছে, আমি এখনো পথে!’

ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীদের আর্তনাদ

ঔষধ ব্যবসায়ী নিজামুল হক বলেন, ‘যে ওষুধ ৮ ঘণ্টায় পৌঁছানোর কথা, ১৮ ঘণ্টা লাগলে নষ্ট হয়ে যাবে। লোকসান কে দেবে?’

ট্রাকচালক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘ডেলিভারির মাল নিয়ে বের হইছি ২৪ ঘণ্টা। খাওনের ঠিক নাই, ঘুমের ঠিক নাই। রাস্তায় ধুলো আর কষ্ট।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী রুহুল আমিন বলেন, ‘অনলাইনে ক্লাসও দিতে পারছি না, আবার অফলাইন পরীক্ষাও মিস হচ্ছে।’

স্কুল শিক্ষার্থী তামান্না বলেন, ‘পরীক্ষা ছিল সকাল ৯টায়। রাতে ১২টায় বাসে উঠেও এখনো পৌঁছাইনি।’

গার্মেন্টস কর্মী শেফালী আখতার বলেন, ‘একদিন ছুটি পাই। রাস্তায় আটকে থাকলে বেতনও কেটে যায়। কেউ মানুষের ভোগান্তি বোঝে না।’

বিনোদনযাত্রাও দুর্ভোগে

পিকনিকযাত্রী কলেজছাত্রী মিম বলেন, ‘বছরের সঞ্চয়ে ঘুরতে বের হলাম। এক জায়গায় ঘন্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে মনটাই ভেঙে গেছে।’

যাত্রীদের সরকারের প্রতি প্রস্তাবনা

বিকল্প সড়ক দ্রুত মেরামত করা।

মোবাইল ট্রাফিক টিম ও পর্যাপ্ত পুলিশ মোতায়েন।

অস্থায়ী মেডিকেল সহায়তা, পানি ও খাবারের ব্যবস্থা।

ঢাকা-সিলেট রুটে ট্রেন সংখ্যা বৃদ্ধি বা অতিরিক্ত বগি সংযোজন।

এক যাত্রী আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমরা উন্নয়ন চাই, কিন্তু মানুষের জীবনকে ধ্বংস করে উন্নয়ন সম্ভব নয়। এটি উন্নয়ন নয়—এটি অত্যাচার।’

Google News Icon

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন