পাঁচ প্রতিষ্ঠান পেল বেসরকারি ক্রেডিট ব্যুরোর লাইসেন্স

রোহান রাজিব
প্রকাশ : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯: ৫৩

ঋণের গুণগত মান বাড়াতে বেসরকারি খাতের পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে প্রাথমিকভাবে ক্রেডিট ব্যুরোর লাইসেন্স দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর তার কার্যালয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোকে আগ্রহপত্র বা লেটার অব ইনটেন্ট (এলওআই) হস্তান্তর করেন। পাঁচ প্রতিষ্ঠান হলো-ক্রেডিট ইনফো বিডি ক্রেডিট ব্যুরো, ট্রান্স ইউনিয়ন, বিকাশ, সিটি ক্রেডিট ব্যুরো এবং ফার্স্ট ন্যাশনাল ক্রেডিট ব্যুরো।

বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান আমার দেশকে বলেন, ‘গভর্নর প্রাথমিকভাবে পাঁচটি প্রতিষ্ঠানকে কার্যক্রম চালানোর জন্য অনুমোদন দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠান লাইসেন্স পাওয়ার পর ইনফ্রাস্ট্রাকচার তৈরি করবে। পুরোপুরি প্রস্তুত হয়ে প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করবে পূর্ণাঙ্গ লাইসেন্স পাওয়ার জন্য। কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফিজিক্যালি যাচাই-বাছাই করবে। এরপর সব ঠিক থাকলে বাণিজ্যিকভাবে লাইসেন্স দেবে।’

বিজ্ঞাপন

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংকে ক্রেডিট ব্যুরোর লাইসেন্স পেতে মোট ২২টি প্রতিষ্ঠান আবেদন করে। এর মধ্য থেকে ১৩টি প্রতিষ্ঠানকে দুটো কমিটির মাধ্যমে কারিগরি মূল্যায়ন ও ব্যবসায়িক মূল্যয়ন করা হয়। পর্যালোচনার পর কমিটি স্কোর দেয়। মেধা তালিকা অনুযায়ী শীর্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রাথমিকভাবে কাজ করার জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রতিষ্ঠান প্রতিটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের গ্রাহকের তথ্য রাখবে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো গ্রাহকের অনুকূলে ঋণ দেওয়ার আগে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সবকিছু যাচাই করে নিতে পারবে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের গুণগত মান বাড়াতে বেসরকারি খাতে ক্রেডিট ব্যুরো স্থাপনের জন্য নীতিমালা জারি করা হয় গত ৫ জুন। ওই নীতিমালা অনুযায়ী এ ধরনের প্রতিষ্ঠান দেশের ব্যাংক গ্রাহকদের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে। একই সঙ্গে কোনো গ্রাহক ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কাছে ঋণ নেওয়ার জন্য আবেদন করলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ক্রেডিট ব্যুরোর কাছ থেকে ওই গ্রাহকের লেনদেনের তথ্য সংগ্রহ করে ঋণ ঝুঁকি পর্যালোচনা করতে পারবে।

গত বছরের ১ জুলাই থেকে বেসরকারি খাতে ক্রেডিট ব্যুরোর লাইসেন্স পেতে আবেদন নেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ওই সময় বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের যুগে ব্যক্তির ঋণ প্রাপ্তি, পরিশোধ ইত্যাদির যোগ্যতা নির্ধারণে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারিত হচ্ছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মাধ্যমে বিশ্লেষণ করে গ্রাহকের অর্থ পরিশোধের সক্ষমতা নির্ধারণ করছে। এর ফলে গ্রাহকের পাশাপাশি যেসব ব্যক্তি কোনো ব্যাংকের গ্রাহক নয়, তাদেরও পরিশোধ যোগ্যতা অনুসারে দ্রুত ঋণ পাওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আধুনিক ঋণ ঝুঁকি এসেসমেন্টের পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে তা ভূমিকা রাখছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, দেশে ঋণ প্রদানে ঝুঁকি কমানোর প্রয়োজনে যুগোপযোগী ঝুঁকি নিরূপণ পদ্ধতি প্রণয়ন করা প্রয়োজন। তাই ঋণ যোগ্যতা নির্ধারণ, পরিশোধ সক্ষমতা যাচাইয়ের জন্য বিভিন্ন ধরনের বিশ্লেষণমূলক তথ্য বিবেচনা করে বেসরকারি ক্রেডিট ব্যুরো ঋণমান নির্ধারণে কাজ করতে পারে।

জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফরমেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) স্বল্প পরিসরে কিছু তথ্য সংরক্ষণ করা হয়। এতে কোনো গ্রাহকের খেলাপির তথ্য বা কোন ব্যাংকে কত ঋণ আছে তা উল্লেখ থাকে। তবে ওই গ্রাহকের লেনদেনের আচরণগত অনেক তথ্যই থাকে না। বেসরকারি খাতের এসব ক্রেডিট ব্যুরো প্রতিষ্ঠান গ্রাহকের লেনদেনের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, বর্তমানে দেশে ৬১টি ব্যাংক, ৩৫টি আর্থিক প্রতিষ্ঠান লেনদেন সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া রয়েছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পেমেন্ট গেটওয়ে সার্ভিস, পেমেন্ট সার্ভিস অপারেটর প্রতিষ্ঠান ও ডিজিটাল ব্যাংক।

এসব প্রতিষ্ঠানে গ্রাহকের আলাদা আলাদা লেনদেনের তথ্য থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি সাপেক্ষে বেসরকারি ক্রেডিট ব্যুরো এই তথ্য সংগ্রহের সুযোগ পাবে। কোনো ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান ঋণ বিতরণের আগে সেই তথ্য সংগ্রহ করে ঝুঁকি এড়ানোর সুযোগ পাবে। আর এই তথ্য সরবরাহের মধ্যে দিয়ে ক্রেডিট ব্যুরোর আয় আসবে। তবে কোনো গ্রাহকের ব্যাংকে কত টাকা আমানত রয়েছেÑএই তথ্য কোনোভাবেই সরবরাহ করতে পারবে না বেসরকারি খাতের এই প্রতিষ্ঠান।

নীতিমালায় আরো বলা হয়েছে, বেসরকারি ক্রেডিট ব্যুরোর আবেদনকারী প্রতিষ্ঠানে সর্বোচ্চ ১১ জন পরিচালক থাকতে পারবে। পরিচালকদের কমপক্ষে দুজনের ১০ বছরের ব্যাংকিং অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। তাদের মধ্যে কমপক্ষে দুই জনের প্রযুক্তি ও ব্যবসা সম্পর্কিত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা থাকতে হবে। কোনো ব্যক্তি একই সময়ে একাধিক ক্রেডিট ব্যুরোর পরিচালক হতে পারবে না।

ক্রেডিট ব্যুরো প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও), প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা (সিটিও), ডেটাবেস অ্যাডমিনিস্ট্রেটর এবং চিফ ইনফরমেশন সিকিউরিটি অফিসারদের প্রত্যেকের ব্যাংকিং, ইলেক্ট্রনিক মানি বা ফিনটেক পরিষেবার ক্ষেত্রে কমপক্ষে পাঁচ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত