সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেছেন, বিগত সরকার সৌচাগার থেকে শুরু করে কি নেই যার নাম ফলক পরিবর্ন করেনি। আজ দেশের মানুষ তা ছুড়ে ফেলে দিয়েছে। তারা সাংস্কৃতিক ও উন্নয়নের নামে যে লুটপাট করেছে সেই বিষয়ে কাজ করছে সরকার।
তিনি বলেন, তারা মুক্তিযুদ্ধর চেতনার নামে কি না করেছে। কিন্তু যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে প্রকৃত মুক্তিযুদ্ধাদের ওপর একটি অরাজকতা তৈরি হয়। তারই অংশ হিসেবে নরসিংদীর নেভাল সিরাজকে তার ভিন্ন মতালম্বীরা অত্যন্ত সুকৌশলে হত্যা করেছিল। মুক্তিযুদ্ধের পর মাত্র একটি বছরও তিনি বেঁচে থাকতে পারেনি। অতীতের সরকারগুলো তার কোনো খোঁজখবর নেয়নি। এমনকি তার পরিবার ও ছেলে-মেয়েদের খোঁজখবরও কেউ নেয়নি। এতিমখানায় থেকে তার ছেলে-মেয়েদের বড় হতে হয়েছে। এ থেকে লজ্জার আর কি হতে পারে।
উপদেষ্টা বলেন, নেভাল সিরাজের মত বীর গেরিলা মুক্তিযোদ্ধার জন্মের কারণেই এ দেশ স্বাধীন হয়েছিল। বিজয়ের মাসে নেভাল সিরাজ নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়নি; পুনঃজাগরিত হয়েছে।
নরসিংদীর গেরিলা যুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার বীর প্রতীক সিরাজ উদ্দিন আহমেদের (নেভাল সিরাজ) নামে ডাংগা-পাঁচদোনা সড়কের নামকরণের ফলক উন্মোচন অনুষ্ঠানে এক আলোচনা সভায় শনিবার দুপুরে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের আয়োজনে পাঁচদোনা স্যার কেজি গুপ্ত উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বলেন, স্বাধীনতার সময় একটি স্বীকৃত প্রবাসী সরকার দায়িত্বে ছিল। তাদের সক্রিয় প্রচেষ্টায় আমরা মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলাম এবং এ দেশের তরুণরা রনাঙ্গনে পঙ্গপালের মত যুদ্ধ করে মাত্র নয় মাসে এদেশ স্বাধীন করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি কখনো মুছে যাবে না। এ স্মৃতি চির অম্লান থাকবে।
সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মোহাম্মদ জিয়াউল হকের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মুখ্য সচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ারা হোসাইন, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল ফারুক নেভাল সিরাজের ছেলে মোয়াজ্জেম হোসেন, বীর মুক্তিযুদ্ধা তোফাজ্জল হোসেন মাস্টার, সুলতান আহমেদ ও ফকির আবুল কালাম।
উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ছুটিতে থাকাকালে বিদ্রোহ ঘোষণা করে মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন নেভাল সিরাজ। ৯ ও ১০ এপ্রিল ইপিআরের সাথে মিলে বাগবাড়ি-পালবাড়ি-পাঁচদোনায় পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ যুদ্ধ গড়ে তোলেন তিনি। অতপর তিনি বিশাল অস্ত্র সম্ভার গড়ে তোলেন। ছাত্র যুবকদের সংগঠিত করে তার নিজ গ্রাম নেহাবকে কেন্দ্র করে এই সড়কেরই দুই পাশের জনপদে মুক্তিযোদ্ধাদের অপ্রতিরোধ্য ঘাঁটি গড়ে তোলেন। আর এ ঘাঁটি এলাকা থেকে পাঁচদোনা মোড়সহ অসংখ্য মুখামুখি যুদ্ধ ও গেরিলা অপারেশন পরিচালনা করেন। তার বীরত্বের কথা চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। তিনি কিংবদন্তি বীরের খ্যাতি অর্জন করেন। দেশ স্বাধীনের পর তার এ আকাশচুম্বি খ্যাতি শাসক রাজনৈতিক গোষ্ঠির ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তাদের ষড়যন্ত্রেই ১৯৭২ সালে ২৬ সেপ্টেম্বর আড়াইহাজার থানার পুরিন্দায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বীর প্রতীক নেভাল সিরাজ।

