মত বিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা

‘ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসা পরিচালনা করতে হচ্ছে’

অর্থনৈতিক রিপোর্টার
প্রকাশ : ২১ মে ২০২৫, ১৭: ৪৬

রাজধানীর বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করলেও বর্তমানে অনাকাঙ্খিত ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়।

বিজ্ঞাপন

বুধবার ডিসিসিআইতে ‘ব্যবসা-বাণিজ্য সহজীকরণে উন্নত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখার অত্যাবশকীয়তা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা এসব উদ্বেগের কথা বলেন। নির্ধারিত আলোচনায় উপস্থিত ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করেন।

এ সময় ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনায় উদ্যোক্তারা অনিরাপদ পরিবেশ, চাঁদাবাজি, প্রতারণামূলক অনলাইন কার্যক্রম, পণ্য পরিবহন ঝুঁকি, জালিয়াতি প্রভৃতি প্রতিবন্ধকতার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যবসা ও বিনিয়োগে আস্থা হারিয়ে ফেলছেন। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টার প্রয়োজন রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার লক্ষ্যে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান। দাবি আদায় গণতান্ত্রিক কার্যক্রমের অংশ হলেও, অর্থনীতির এ কঠিন সন্ধিক্ষণে ব্যবসা পরিচালনার পাশাপাশি জনগণের দৈনন্দিন কার্যক্রম যেন ব্যাহত না হয়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সজাগ থাকার আহ্বান জানান ডিসিসিআই সভাপতি।

এছাড়াও রাজধানী ঢাকার উপর চাপ কমাতে প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক বিকেন্দ্রীকরণ জরুরি বলে তিনি মত প্রকাশ করেন, যার মাধ্যমে দেশের প্রান্তিক অঞ্চলের উন্নয়ন আরো সুসংহত হবে বলে তিনি অভিমত জ্ঞাপন করেন।

ডিসিসিআই’র সাবেক ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম বলেন, আমরা কিভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করব, তা নিয়ে চিন্তিত। ব্যবসায়ীরা নিয়মিত ভ্যাট-ট্যাক্স প্রদান করলেও বর্তমানে অনাকাঙ্খিত ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্য কার্যক্রম পরিচালনা করতে হচ্ছে, যা মোটেও কাম্য নয়।

ডিসিসিআই’র প্রাক্তন সহ-সভাপতি এম আবু হোরায়রাহ ঢাকা দক্ষিণ এলাকায় পার্কিং সুবিধা বাড়ানোর পাশাপাশি দক্ষিণের ট্রাফিক বিভাগের অফিস শান্তিনগর থেকে গুলিস্তানে স্থানান্তরের সুপারিশ করেন। তিনি বৈদ্যুতিক ব্যাটারি চালিত রিক্সাগুলোকে ঢাকা শহরের বাইরে স্থানান্তরিত করারও সুপারিশ করেন, সেই সঙ্গে অতিদ্রুত ঢাকা শহরের পরিবহনের কৌশলগত পরিকল্পনা বাস্তবায়নেরও দাবি জানান।

বাংলাদেশ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির পট পরিবর্তনের পর আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, স্থল বন্দরের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে দালালের মাধ্যমে ট্রাক ভাড়া করতে গিয়ে ব্যবসায় ব্যয় বাড়ছে। তিনি আরো বলেন, অনিয়ন্ত্রিতভাবে মৌলভীবাজার এলাকায় ট্রাকস্ট্যান্ড থাকায় বাবুবাজার ব্রিজে প্রচণ্ড যানজট হচ্ছে, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে। এছাড়াও লালবাগ, কোতায়ালি, চকবাজার এলাকার ব্যবসায়ীদের নগদ টাকা পরিবহনে নিরাপত্তার স্বার্থে উক্ত এলাকায় সান্ধ্যকালীন পুলিশি টহল বাড়ানো প্রয়োজন বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ চিনি ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি হাজী মোঃ আবুল হাসেম বলেন, সরকারের ১৪টি চিনিকল থাকলেও উৎপাদিত চিনি দিয়ে মোট চাহিদার মাত্র ২% মেটানো যায়। এছাড়াও বেসরকারিখাতে চিনিকল রয়েছে মাত্র ৩টি। এ খাতের পাইলট প্রকল্পের আওতায় সরকারের অন্তত ২টি চিনিকল সারা বছর চালানো উচিত বলে তিনি মত প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশ মনিহারী বণিক সমিতির সহ-সভাপতি হাজী ফয়েজউদ্দিন বলেন, পুরোনো ঢাকায় প্রবেশের রাস্তাগুলো বিভিন্ন আন্দোলন কর্মসূচির কারণে বন্ধ থাকায় চকবাজারসহ অন্যান্য জায়গায় পণ্যবাহী ট্রাক যেতে পারছে না, ফলে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের কেন্দ্রস্থল হলেও চকবাজার, মৌলভীবাজার এলাকায় কোন ট্রাফিক পুলিশ না থাকায় প্রতিনিয়ত যানজট অসহনীয় হয়ে পড়ছে, যা নিরসনে কার্যকর পদক্ষেপ আশু জরুরি। তিনি বলেন, পণ্য আমদানিতে শুল্কের হার বৃদ্ধি, ব্যাংকের ঋণের শর্ত পূরণ করতে না পারায় ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঋণ সুবিধা হতে বঞ্চিত হচ্ছেন।

মতিঝিল থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মো. মহায়মেনুল ইসলাম বলেন, ৫ আগস্টের পর বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলার পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে, তবে আরো উন্নতি করতে হবে। এখনও বাণিজ্যিক কার্যক্রমের জন্য উপযুক্ত আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিশ্চিত করা যায়নি। তিনি বলেন, কিশোর ও যুবক গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে পুলিশ বরাবরের মতো কঠোর এবং ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।

ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী, সহ-সভাপতি মোঃ সালিম সোলায়মান, পরিচালনা পর্ষদের সদস্যবৃন্দসহ বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিবৃন্দ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত