চাল-পেঁয়াজের বাজারে আমদানির প্রভাব, বৃষ্টিতে সবজির দাম কম

স্টাফ রিপোর্টার
প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২১: ৩৮

সপ্তাহের ব্যবধানে সব ধরনের দেশিয় চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০টাকা কমেছে। পেঁয়াজের দাম কেজিতে ৫ থেকে ১০টাকা কমেছে। ডিম ও সবজির দামও নিম্নমুখী। বৃহস্পতিবার রাজধানীর কারওয়ানবাজার, নয়াবাজার ও শান্তিনগর ঘুরে ক্রেতা বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এম তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

তেজগাঁও এলাকার সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী জনতা রাইস এজেন্সির সোহরাব হোসেন আমার দেশকে বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানির পর দেশীয় কর্পোরেট কোম্পানিগুলো সব ধরনের চালের দাম বস্তাপ্রতি ৫০টাকা অর্থাৎ কেজিতে এক টাকার মতো কমিয়েছে।

তিনি আরো বলেন, বিদেশ থেকে চাল আমদানির টাকা দিয়েও চাল পাওয়া যায়নি। বর্তমানে কোম্পানির লোকেরা দোকানে দোকানে ঘুরে চালের অর্ডার নিচ্ছেন। কোম্পানি থেকেও ফোন করে চাল নেয়ার কথা বলেন। অর্থাৎ চালের বাজারে যে সংকট ছিল তা কেটে গেছে। আমদানি অব্যাহত থাকলে দাম আরো কমাতে বাধ্য হবে কোম্পানিগুলো।

কিশোরগঞ্জ রাইস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী দেলোয়ার হোসেন আমার দেশকে বলেন, ভারত থেকে চাল আমদানির পর বাজারে চাহিদা কমে গেছে। এখন কোম্পানির কর্মকর্তারা চাল দিতে প্রতিদিনই ফোন দেন। কিন্তু এর আগে চালের অর্ডার দিয়েও চাল পাওয়া যায়নি।

এই ব্যবসায়ী আরো বলেন, আমদানির আগে সিন্ডিকেট করে চালের দাম বাড়িয়েছে কোম্পানিগুলো। এখন তারা কম দামে চাল বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে।

তবে চাঁদপুর রাইস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী বাচ্চু মিয়া বলেন, চালের বাজার সাময়িক নিম্নমুখী হলেও কোম্পানিগুলো সুযোগের অপেক্ষায় আছে। আমদানি বন্ধ হলেই দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। এ বিষয়ে সরকারের নজরদারি প্রয়োজন।

পাইকারিবাজারে বর্তমানে ভারতীয় নাজিরশাইল চাল ৬৮ থেকে ৭২টাকা কেজি এবং স্বর্ণা-৫ বা পাইজাম ৫২ থেকে ৫৭ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

পাইকারি বাজারে চালের দাম কমলেও খুচরা বাজারে আগের দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী চলতি সপ্তাহে চালের বাজার স্থিতিশীল। সংস্থাটির বৃহস্পতিবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার থেকে তথ্য সংগ্রহ করে তা ওয়েবসাইটে প্রকাশ। তাদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, রাজধানীর খুচরা-বাজারে সরুজাতের মিনিকেট-নাজিরশাইল চাল ৭৫ থেকে ৮৫টাকা, মাঝারিজাতের পাইজাম-আটাশ চাল ৬০ থেকে ৭৫টাকা এবং মোটাজাতের ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহের ব্যবধানে আটার দাম স্থিতিশীল। খোলা আটা ৪৫ থেকে ৫২ টাকা, প্যাকেট আটা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা, খোলা ময়দা ৫৫ থেকে ৬৫ টাকা এবং প্যাকেট ময়দা ৬৫ থেকে ৭৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

রনি রাইস এজেন্সির সত্ত্বাধিকারী মনিরুল ইসলাম জানিয়েছেন, মাঝারি-জাতের পাইজাম চালের দাম বস্তায় ১০০টাকা পর্যন্ত কমেছে। চালের দাম আরো কমতে পারে। পাইকারি বাজারে ইন্ডিয়ান নাজিরশাইল কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কমে ৫০ কেজির বস্তা বিক্রি হচ্ছে ৩৭৫০টাকা, পাইজাম চাল ২৮৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সিদ্ধচালের দাম কিছুটা নিম্নমুখী হলেও সব ধরনের আতপ চালের দাম বস্তাপ্রতি ২০০ থেকে ৪০০টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।

একই এলাকার খুচরা বিক্রেতা বাবলু বলেন, আগের বাড়তি দামেই চাল বিক্রি হচ্ছে; চালের দাম কমেনি।

ভারত থেকে আমদানির ফলে পেঁয়াজের বাজারেও প্রভাব পড়েছে। যদিও ভারতীয় পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতারা তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছেন না এরপরও বাজারে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। দেশীয় পেঁয়াজের সরবরাহ বেড়ে কেজিতে ৫ থেকে ১০টাকা কমে ৭০ থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

আগের সপ্তাহের তুলনায় ডিমের দাম কিছুটা কমে ডজন ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে পাড়া মহল্লার দোকানে আগের বাড়তি দামেই ১৪০ থেকে ১৫০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

কাঁচাবাজারে সবজির দামে বাজার ভেদে ভিন্ন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে। বৃহস্পতিবার কারওয়ান বাজারে সবধরনের সবজির দাম আগের সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা কম লক্ষ্য করা গেছে। তবে অন্যান্য কাঁচাবাজারে সব ধরনের সবজি আগের সপ্তাহের মতো বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে।

কারওয়ানবাজারের সবজি বিক্রেতা আয়মান আহমেদ খোকন বলেন, গত দুইদিনের বৃষ্টিতে কাঁদার জমে যাওয়ায় বাজারে ক্রেতা আসতে পারছে না। তাই লোকসানে সবজি বিক্রি করছি আমরা।

তবে নয়াবাজারে সবজি বিক্রেতারা হামীম বলছেন, মৌসুমের একেবারে শেষ, এতে সরবরাহ কমে সবজির দাম বেড়েছে। নতুন করে সবজি বাজারে ওঠার আগ পর্যন্ত এ অবস্থা থাকবে। তবে ঊর্ধ্বমুখী বাজার কিছুটা কমতির দিকে।

সবজির বাজারে আলু আর পেঁপের দামই একটু কম, অন্য সব সবজিই আগের সপ্তাহের ন্যায় বাড়তি দামেই বিক্রি হচ্ছে। ৬০ থেকে ৭০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই বললেই চলে। সপ্তাহের ব্যবধানে আমদানি কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে ১৬০ থেকে ১৮০টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াবাজারে আগের সপ্তাহের মতো প্রতি কেজি পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, আলু ২০ থেকে ২৫ টাকা, কচুর লতি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঝিঙা ৭০ টাকা, পটল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, ধুন্দুল ৭০ টাকা, টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা, করলা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া, প্রতি কেজি ঢেঁড়স ৬০ থেকে ৮০ টাকা, শসা ৬০-৭০ টাকা, বেগুন (গুল) ১০০ থেকে ১২০টাকা, বেগুন (লম্বা) ৮০-৯০ টাকা, কঁচু (গুটি) প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ব্রয়লার মুরগির দাম কিছুটা বেড়ে ১৭০ থেকে ১৮০টাকা এবং সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে গরু ও খাসির মাংসের দাম স্থিতিশীল, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭০০-৭৫০ টাকা ও খাসির মাংস ১ হাজার ১০০ টাকা থেকে ১ এক হাজার ২০০টাকা। এছাড়া সব ধরনের মামের দাম বাড়তি বলে জানিয়েছে মাছ ব্যবসায়ী আব্দুল কাদের।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত