বেসরকারি খাতের মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের যাত্রা শুরু ১৯৯৯ সালের ২৪ অক্টোবর। এরই মধ্যে ২৬ বছর পেরিয়েছে ব্যাংকটি। বর্তমানে শীর্ষ কয়েকটি ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে এমটিবির অবস্থান। দীর্ঘ এই পথচলায় সবার আস্থা অর্জন করেছে ব্যাংকটি।
এমটিবির ২৬ বছরের অগ্রযাত্রা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নিয়ে আমার দেশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন অর্থনৈতিক রিপোর্টার রোহান রাজিব
আমার দেশ : ২৬ বছর পূর্ণ করেছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। দীর্ঘ এই পথচলায় আপনার চোখে ব্যাংকের অর্জন কেমন?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান : ২৬ বছর শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ২৭ বছরে পদার্পণ করেছে। দীর্ঘ এই পথচলা আমাদের অর্জন আমি বলি ভালো। কারণ, ব্যাংক প্রতিষ্ঠার পর থেকে গ্রাহক, স্টেকহোল্ডার ও রেগুলেটর সবার আস্থা অর্জনের চেষ্টা করেছে। এক্ষেত্রে আমরা অনেকটা সফলও। কারণ, ব্যাংক জনগণের টাকা নিয়েই ব্যবসা করে। এখানে ব্যাংক মালিকদের সম্পদ খুব সামান্য থাকে। জনগণের আস্থা না থাকলে কোনো ব্যাংক এত দীর্ঘ সময় চলতে পারে না। এছাড়া ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত হওয়া সত্ত্বেও যে কয়েকটি শীর্ষ ব্যাংকের নাম আলোচনায় আসে সেখানে এমটিবির নাম রয়েছে। আমি মনে করি এটাই সবচেয়ে বড় অর্জন।
আমার দেশ : ভঙ্গুর ব্যাংকিং খাত হওয়া সত্ত্বেও শীর্ষ ব্যাংকগুলোর একটি কীভাবে হলেন?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান : আমাদের এখন ১৪ থেকে ১৫ লাখ গ্রাহক রয়েছে। যাদের হাত ধরে এত দূর এসেছি। আগামীতে তাদের তো পাবই সঙ্গে আরো নতুন নতুন গ্রাহক আমাদের সঙ্গে আসবেন। এই ব্যাংক সব সময়ের জন্য আছে। আমাদের বোর্ড থেকে কোনো প্রেশার নেই। তারা সব সময় চায় যেন ব্যাংক ভালো অবস্থান তৈরি করুক। যে উদ্দেশ্য নিয়ে এসেছে তা যেন সফল হয়। শুরু থেকেই এই ব্যাংক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। এজন্য নানা সংকটের মধ্যে ব্যাংকের অবস্থান শক্ত রয়েছে।
আমার দেশ : এখন সব দেশ প্রযুক্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে। অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের অবস্থান কেমন এবং আপনাদের ব্যাংক কত দূর এগিয়েছে?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান : অনলাইন ব্যাংকিংয়ে আমরা পশ্চিমা দেশ থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই। আমাদের ব্যাংকের কথাই যদি বলি ‘এমটিবি নিউ’ নামে একটি প্রোডাক্ট রয়েছে। এখানে আমাদের গ্রাহকদের দৈনন্দিন যা কিছু প্রয়োজন তার সবকিছুই অন্তর্ভুক্ত আছে। এখান থেকে তারা ইউটিলিটি বিল, স্কুল ফি, ফোনে টপআপ ও এমএফএসে ট্রান্সফারসহ সবকিছুই করা যাবে এবং তা ঘরে বসেই করতে পারবেন। ব্যাংকে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন হবে না। আমরা একটি ফিনটেকের সঙ্গে কাজ করছি, যাতে আমাদের গ্রাহক বাড়িভাড়াও অনলাইনে দিয়ে দিতে পারে। প্রযুক্তিতে আমরা অন্য উচ্চতায় যেতে চাই। ডিজিটাল সেবায় এমটিবি অনেক বড় ভূমিকা রাখছে।
আমার দেশ : বর্তমানে ব্যাংক খাতের যেসব সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা এখনকার নাকি আগের তৈরি হওয়া?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান : বর্তমানে ব্যাংক খাতের যে সমস্যা সেটা কিন্তু ৫ আগস্ট-পরবর্তী নয়। এটা তার আগে থেকেই শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ২০১৭ সাল থেকে যখন একটি গ্রুপ ইসলামী ব্যাংক দখল করে নেয়। এরপর থেকে ব্যাংকিং খাত ভেঙে পড়তে শুরু করে। আমরা মনে করতাম খেলাপি ঋণ ২৫ শতাংশ হবে। কিন্তু জুন শেষে তা দেখলাম ২৮ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। ধারণা করা হচ্ছে এটা সামনে আরো বাড়বে। ব্যাংক খাতে সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে খেলাপি ঋণ। ব্যাংকগুলোর বোর্ড ও ম্যানেজমেন্টের মধ্যে কোনো ধরনের সুশাসন ছিল না। গত সরকারের পৃষ্টপোষকতায় ব্যাংক খাতে লুটপাট হয়েছিল। এসব কারণেই খেলাপি ঋণ বেড়েছে। আগে প্রকৃত চিত্র সামনে আনা হতো না। এখন বর্তমান গভর্নরের নেতৃত্বে বেশকিছু কাজ হচ্ছে। তার জন্য ব্যাংক খাতের প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসছে। এটা সামনে নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক কাজ করে যাচ্ছে। কারণ, প্রকৃত চিত্র বের করা না হলে সমাধান করা যাবে না।
আমার দেশ : ভঙ্গুর এই ব্যাংক খাত ঘুরে দাঁড়াতে কত সময় লাগতে পারে?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান : ব্যাংক খাত ও বাংলাদেশ ব্যাংক সংস্কারে গভর্নর যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা পরবর্তী নির্বাচিত সরকার কীভাবে নেন সেটার ওপর নির্ভর করবে। নির্বাচিত সরকার যদি ব্যাংক খাত সংস্কারের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন তাহলে এখান থেকে উত্তরণ করতে পাঁচ থেকে সাত বছর সময় লাগবে। আগের মতো অনিয়ম হলে এ খাত আর ঘুরে দাঁড়াতে পারবে না।
আমার দেশ : আগের সরকারের অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে ব্যাংক খাতের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে। বর্তমানে ব্যাংক খাতে গ্রাহকের আস্থা কেমন?
সৈয়দ মাহবুবুর রহমান : কিছু ব্যাংকে এখনো মানুষের আস্থা আছে। এজন্য কিন্তু আমানত বাড়ছে। কিছু ব্যাংকের অসুবিধা আছে। এসব ব্যাংকের বিষয়ে ইতোমধ্যে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আবার কিছু ব্যাংকে একীভূত করা উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এতে করে যে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছি তাতে গ্রাহকদের ভেতরে কিছুটা অনাস্থা কাজ করছে। যার জন্য মানুষের হাতে নগদ টাকা বেড়ে যাচ্ছে। তারপর যেসব ভালো ব্যাংক আছে তাদের ওপর মানুষ আস্থা রাখছে। এজন্য আমাদেরসহ অন্য ভালো ব্যাংকগুলোর আমানত বাড়ছে।

