বড় ধরনের আর্থিক সংকটের মুখে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। গত এক দশকে চরম অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এক সময়ে লাভজনক হিসেবে পরিচিত আইসিবি বড় ধরনের লোকসানি প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে।
তবে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করতে কোনো ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ফলে দায়ী ব্যক্তিরা রয়ে যাচ্ছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিবি চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবু আহমেদ আমার দেশকে বলেন, গত এক দশকে এ প্রতিষ্ঠানটিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। ব্যক্তি স্বার্থে অনেক দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছিল। নিয়ন্ত্রক সংস্থার (বিএসইসি) নির্দেশে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ‘বাজারকে সহায়তা’ দিতে গিয়ে এখন প্রতিষ্ঠানটি নিজেই ডুবতে বসেছে।
দায়ীদের বিরুদ্ধে কোনো ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না—জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময় যারা দায়িত্বে ছিলেন তাদের অধিকাংশ হয় চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন কিংবা বিদেশে চলে গেছেন। কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। তবে সরকার চাইলে এ বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করতে পারে।
প্রতিষ্ঠানটি টিকিয়ে রাখতে চলতি সপ্তাহে এক হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিয়েছে সরকার। এর আগে, গত এপ্রিল মাসে তিন হাজার কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দেওয়া হয়েছিল। ফলে অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে মোট চার হাজার কোটি টাকার ঋণ সহায়তা পেয়েছে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানটি।
ঋণের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ঋণ সহায়তা দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি কোনো রকমে টিকিয়ে রাখা হচ্ছে। সরকারের দেওয়া এ ঋণ ৫ শতাংশ হারে ১০ বছরে পরিশোধ করতে হবে। এর মধ্যে এক বছর গ্রস পিরিয়ড রয়েছে। এর আগে, তিন হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা ঋণ পরিশোধে ব্যয় করা হয়েছে। বাকি এক হাজার কোটি টাকা বাজারে বিনিয়োগ করা হয়েছে। নতুন করে পাওয়া এক হাজার কোটি টাকা শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। ‘এ’ ক্যাটাগরির ভালো কোম্পানি এবং যেসব কোম্পানি ভালো ডিভিডেন্ড দেয়, সেসব কোম্পানিতে এই তহবিল বিনিয়োগ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে আইসিবির ঋণের পরিমাণ সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা। আওয়ামী শাসনামলে বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক খায়রুল হোসেন এবং অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে ‘বাজার সহায়তা’ দেওয়ার জন্য আইসিবির উপর চাপ তৈরি করতেন। এ চাপের কারণে চড়া সুদে বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করতে হয়। ব্যক্তিস্বার্থেও অনেক দুর্বল কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হয়েছিল। এর সঙ্গে আইসিবি ব্যবস্থাপনার সঙ্গে যুক্ত অনেকেই জড়িত ছিলেন। বর্তমানে খায়রুল হোসেন দেশ ছেড়ে আমেরিকায় অবস্থান করছেন। আর শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম কারাগারে রয়েছেন।
অন্যদিকে, আইসিবি এমন সব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছে তার এক-পঞ্চমাংশই গার্বেজ বা কাগুজে শেয়ারে পরিণত হয়েছে। ক্রয়মূল্যের তুলনায় এসব কোম্পানির শেয়ারের মূল্য তলানীতে নেমে গেছে। আবার এসব কোম্পানির শেয়ারের ক্রেতাও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি শেয়ারবাজারে মন্দার প্রভাবও পড়েছে। ভালো কোম্পানি হিসেবে পরিচিত অনেক কোম্পানির শেয়ার দর ৩০ থেকে ৫০ শতাংশেরও বেশি কমে গেছে। ফলে এসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেও বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়েছে আইসিবি।
২০২৫ সালের ৩০ জুনে সমাপ্ত হিসাব বছরের নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী, আইসিবির প্রভিশনিং ঘাটতির পরিমাণ তিন হাজার ৪৫৯ কোটি টাকারও বেশি। এর আগের বছর এ ঘাটতির পরিমাণ ছিল তিন হাজার ১৭৯ কোটি টাকা। তহবিল সংকটের কারণে বিপুল পরিমাণ এ প্রভিশনিং ঘাটতির মুখে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিভিন্ন সময়ে প্রভিশনিং সংরক্ষণের জন্য বিএসইসির পক্ষ থেকে সময় বাড়ানো হলেও তা করতে ব্যর্থ হয়েছে আইসিবি। ২০২৪ সালের মে মাসে প্রভিশনিং ঘাটতি মেটাতে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ায় বিএসইসি। কিন্তু এ সময়ের মধ্যে প্রভিশনিং সংরক্ষণ কোনো অবস্থাতেই সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে রেকর্ড এক হাজার ২১৪ কোটি টাকা লোকসান করেছে আইসিবি। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকেও সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের লোকসান ১৫১ কোটি টাকা।
বিভিন্ন ব্যাংক থেকে উচ্চহারে নেওয়া ঋণের বিপরীতে সুদ পরিশোধেই প্রতি মাসে ব্যয় ৯০ কোটি টাকা। আয়ের ৯৪ শতাংশ ব্যয় হচ্ছে সুদ পরিশোধে।
তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০০৯-১০ থেকে ২০১৭-১৮ অর্থবছর (৯ বছর) পর্যন্ত গড়ে প্রায় ৪০০ টাকা করে নিট মুনাফা করেছে আইসিবি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৪১৬ কোটি টাকা মুনাফা করলেও পরের বছর নিট মুনাফা ৮৫ শতাংশ কমে হয়েছে ৬০ কোটি টাকা। এরপর ছয় বছর ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত গড়ে আইসিবি নিট মুনাফা কমে দাঁড়ায় মাত্র ৮১ কোটি টাকা। সর্বশেষ ২০২৪-২৫ অর্থবছরে নিট লোকসান এক হাজার ২১৫ কোটি টাকা।


চট্টগ্রামে চার ‘নিষিদ্ধ এলাকায়’ খুন আতঙ্কে সাধারণ মানুষ
‘নিরপেক্ষ’ ৬৩৯ ওসির সন্ধানে পুলিশ সদর দপ্তর
হংকংয়ে আবাসিক কমপ্লেক্সের আগুন নিয়ন্ত্রণে, নিহত বেড়ে ৯৪