টাচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের জালিয়াতি

পণ্য রপ্তানি না করেই ৪ কোটি টাকা প্রণোদনা

কাওসার আলম
প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ২৬
আপডেট : ১১ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৩০

পণ্য রপ্তানি না করেই জাল দলিলাদি তৈরি করে প্রায় ৪ কোটি টাকা নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করেছে টাচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান। নগদ প্রণোদনা বাতিল এবং ওই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি দিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, মোট ৬৮টি বিল অব এক্সপোর্টের মাধ্যমে রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান টাচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেশ আলু রপ্তানি করে ওই প্রণোদনা গ্রহণ করেছিল। এর মধ্যে ২০২০ সালে বিল অব এক্সপোর্টের সংখ্যা ৬৬টি। একটি করে বিল অব এক্সপোর্ট ছিল ২০১৮ ও ২০১৯ সালের। কিন্তু চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তদন্ত কমিটি বিল অব এক্সপোর্টের ৬৪টির বিপরীতে কোনো পণ্য রপ্তানির তথ্য পায়নি। অথচ ওই রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ৬২টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে লিয়েন ব্যাংক হিসেবে রূপালী ব্যাংকের মতিঝিল করপোরেট শাখা থেকে ৩ কোটি ৯৪ লাখ ১৫ হাজার টাকা নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করেছে।

বিজ্ঞাপন

অবৈধভাবে নগদ প্রণোদনা গ্রহণ করায় টাচ ট্রেডের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার (চলতি দায়িত্ব) শফিউদ্দিন এনবিআরের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে টাচ ট্রেডিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংককে অনুরোধ করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

পণ্য রপ্তানি না করে বৈদেশিক মুদ্রা দেশে প্রত্যাবাসনের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করা হয়েছে কি না-সেটি খতিয়ে দেখার জন্যও বাংলাদেশ ব্যাংককে জানানোর জন্য এনবিআরের সংশ্লিষ্টদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন চট্টগ্রাম কাস্টমস কমিশনার।

জানা গেছে, ঢাকার কদমতলীর পূর্ব জুরাইনের টাচ ট্রেড ইন্টারন্যাশনাল ফ্রেশ আলু রপ্তানির লক্ষ্যে অ্যাসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে ৬৮টি বিল অব এক্সপোর্ট দাখিল করা হয়। কোম্পানিটির দাখিলকৃত এসব বিল অব এক্সপোর্টের তথ্য যাচাই করে তদন্ত কমিটি। কমিটির পর্যালোচনায় ৬২টি বিল অব এক্সপোর্টের বিপরীতে কোনো পণ্য রপ্তানির তথ্য পাওয়া যায়নি বলে চিঠিতে উল্লেখ করে বলা হয়, বিল অব এক্সপোর্ট সংশ্লিষ্ট ডিপো হতে প্রাপ্ত তথ্যাদি পর্যালোচনায় যায়, পণ্যসমূহ সংশ্লিষ্ট ডিপো কর্তৃক রপ্তানির জন্য গ্রহণ করা হয়নি বা কোনো পণ্য রপ্তানি হয়নি। অর্থাৎ, ওই বিল অব এক্সপোর্ট-সংশ্লিষ্ট দলিলাদি রপ্তানিকারক, সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট এবং শিপিং এজেন্ট/ ফ্রেইট ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট কর্তৃক পারস্পরিক যোগসাজশে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দলিলাদি সৃজন করেছে, যা ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা।

উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রা আহরণে উৎসাহ জোগাতে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানিতে সরকার নগদ প্রণোদনা দিয়ে আসছে। বর্তমানে ৪৩টি পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে নগদ প্রণোদনা রয়েছে। পণ্য ও খাত বিবেচনায় শূন্য দশমিক ৩ শতাংশ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ পর্যন্ত নগদ প্রণোদনা দেওয়া হচ্ছে। তবে বেশকিছু রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পণ্য রপ্তানি না করেই প্রণোদনা নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত