লেবুর উৎপাদন বেড়ে দাম কমার রেকর্ড!

সরদার আনিছ
প্রকাশ : ২৫ জুন ২০২৫, ২২: ০২

বর্তমানে সবচেয়ে কমে দামের পণ্যের নাম লেবু। এই পণ্যটি বাজারে দাম কমার রেকর্ড গড়েছে। ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলেও জানা গেছে, গত কয়েক বছরের মধ্যে বর্তমানে বাজারে সবচেয়ে কম দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

বিক্রেতারা বলছেন, চলতি বছরে লেবুর উৎপাদন বেড়ে সরবরাহ বেড়েছে তাই দাম কমেছে। সামান্য উঠানামা করলেও আগামী তিন-চার মাসেও লেবুর দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।

রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার কারওয়ান বাাজারের ব্যাপারি হাবিব বলেন, বর্তমানে বাজারে সাত থেকে আট ধরনের লেবু বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি রয়েছে সিলেটি লেবু। বাকি ছয় ধরনের লেবুর মধ্যে আছে-লিচু লেবু, বাতাবি লেবু (মোটা আকারের), টাঙ্গাইলের এলাচি লেবু, টাঙ্গাইলের সিডলেস লেবু, চিটাগংয়ের সিডলেস লেবু, কলম্বো লেবু এবং কাগজি লেবু (দেশি লেবু)।

পাইকারি বাজারে সবচেয়ে ভালোমানের একশো লেবু বিক্রি হচ্ছে সর্বোচ্চ তিনশো থেকে চারশো টাকায়। আর ছোট আকারের একশো লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০টাকায়। লেবুর আকার ও মানভেদে দাম নির্ধারিত হয়ে থাকে। তবে এখনকার মতো আর কখনো কম দামে লেবু বিক্রি হতে দেখা যায়নি।

কারওয়ান বাাজারের খুচরা বিক্রেতা ইব্রাহীম বলেন, এখন লেবুর ভরা মৌসুম, এছাড়া চলতি বছরে লেবু ফলন ভালো হয়েছে। এতে বর্তমানে সবচেয়ে কম দামে লেবু বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, লেবুর মানভেদে ১০ টাকা থেকে ৩০টাকা হালি লেবু বিক্রি হচ্ছে। আর ছোট আকারের লেবু ভাগা হিসেবেও বিক্রি হচ্ছে। এক ভাগা লেবুতে অন্তত ২০টি লেবু ১০টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এই যে লেবুর খাঁচায় হাজার খানেক বড় আকারের হলদে লেবু দেখছেন এগুলো ২০টাকা ডজন বিক্রি করছি। রাত ৯টা কিংবা ১০টার মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে পুরো এক খাঁচি লেবু ফেলে দিয়ে বাসায় ফিরবো। লেবু ফেলে দিতেও কুলিকে ৫০টাকা দিতে হবে। এই হলো লেবুর বাজার।

তেজুকুনিপাড়া থেকে আসা রমিছা নামের এক নারী পলিথিনে লেবু নিয়ে বাসায় ফিরছিলেন। জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, বর্তমানে বাজারে সব জিনিসের দাম চড়া হলেও একমাত্র লেবুই সবচেয়ে কম দামে পাওয়া যাচ্ছে। এই যে দেখছেন পলিথিন ভরা লেবু (২৫টির মতো) মাত্র ১০টাকায় কিনেছি। অথচ রমজানে চারটি লেবু কিনতে হয়েছে ১০০ থেকে ১৪০টাকায়।

সম্প্রতি ‘লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্পের কর্মশালায় বলা হয় দেশে পাঁচ বছরের ব্যবধানে লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে ২৫ শতাংশ, আবাদ বেড়েছে ৪০ শতাংশ। মাল্টা, কমলা, লেবু ও বাতাবি লেবুসহ লেবুজাতীয় ফলের আবাদ ও উৎপাদন বেড়েছে।

এ প্রসঙ্গে লেবুজাতীয় ফসলের সম্প্রসারণ, ব্যবস্থাপনা ও উৎপাদন বৃদ্ধি প্রকল্পের পরিচালক ফারুক আহমদ বলেন, ২০১৮-১৯ সালে প্রকল্পভুক্ত এলাকায় লেবুজাতীয় ফসলের উৎপাদন ছিল ১ লাখ ৬১ হাজার ৮৯০ টন, ২০২৩-২৪ সালে ২৫ শতাংশ বেড়ে উৎপাদন হয় ২ লাখ ২ হাজার ৩৮০ টন। ২০১৮-১৯ সালে আবাদ এলাকা ছিল ১৩ হাজার ৮০ হেক্টর, ২০২৩-২৪ সালে ৪০ দশমিক ৩৭ শতাংশ বেড়ে আবাদ এলাকা হয় ১৮ হাজার ৩৬০ হেক্টর। এতে ২০১৯-২০ অর্থবছরে রপ্তানি ছিল ৭৩৪ টন, ২০২৩-২৪ সালে বেড়ে হয়েছে ১৭৭৯ টন।

কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, কৃষক যখন যে ফসল লাভজনক দেখেন সেই ফসলের দিকে ঝুঁকেন। কিন্তু কখনও কখনও বাম্পার ফলন করেও কৃষক দাম পান না। সরকার কৃষকের এমন বঞ্চনা দূর করতে কাজ করছে।

তিনি বলেন, একটি ফসল একযোগে সারাদেশে বেশি উৎপাদন হলে চাহিদা কমে যায়। ফলে দামও পড়ে যায়। এমন পরিস্থিতি থেকে বের হতে চাহিদা, উৎপাদন ও অঞ্চলভিত্তিক তথ্য পর্যালোচনা করে ফসলের আবাদ বাড়াতে মাঠ পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তাদের ভূমিকা রাখতে হবে।

আমার দেশের খবর পেতে গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন

বিষয়:

এলাকার খবর
খুঁজুন

সম্পর্কিত